‘আপনি দেশের জন্য কী করছেন?’ এমন একটি প্রশ্ন এখন ক্রিকেট পাড়ায় ‘টক অব দ্য টাউনে’ পরিণত হয়েছে। প্রশ্নটি করেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। সেটিও আবার বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে। গতকাল কানাডায় গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি লিগের খেলা শেষে এক দর্শকের কথার প্রেক্ষিতে এমন প্রশ্ন করেছেন সাকিব। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমসহ বিভিন্ন অঙ্গনে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
বিষয়টি নিয়ে বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুসও কথা বলেছেন। বাংলা টাইগার্স-টরন্টো ন্যাশনালস ম্যাচ শেষে সাকিব গ্যালারিতে থাকা দর্শকদের সামনে গেলে একজন তকে মুখ খুলতে বলেন। জবাবে সাকিব ঐ দর্শককে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি দেশের জন্য কী করছেন? এরপরে বেশ কয়েকবার উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয় দুজনের মধ্যে। সে সময়ে একই প্রশ্ন করেছেন সাকিব। সেই কথপোকথনের ভিডিও এখন ভাইরাল টপিকে পরিণত হয়েছে।
একজন ক্রিকেটার এমন প্রশ্ন করতে পারেন কিনা, এমনটাই বলছেন অনেকে। জালাল ইউনুস বলেছেন, ‘আমি ভিডিওটি দেখিনি, তাই আমার মন্তব্য করা ঠিক হবে না। কিন্তু তিনি (সাকিব) এটা ঠিক বলেননি, সবারই সব জায়গায় অবদান রয়েছে।’
কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হওয়ার পরে দেশের অবস্থা অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা দুইশ ছাড়িয়েছে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মারা গেছেন। আহতের সংখ্যা অগণিত। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন অঙ্গনের মতো ক্রিকেটাঙ্গনের তারকারাও মুখ খুলেছেন। কিন্তু সেই জায়গায় ব্যতিক্রম সাকিব। তিনি এই হতাহতের প্রসঙ্গ চুপ করে আছেন।
এ নিয়ে জালাল ইউনুস বলেন, ‘দেখেন এটা সাকিবের ব্যক্তিগত ব্যাপার। সাকিব কী বলেছে সেখানে, আমি সেটা বলতে পারব না। আমি যতটুকু জেনেছি যে কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ক্রিকেটে অবদান নাকি এখানে কোনো অবদান বোঝাতে চেয়েছে আমি জানি না।’
ক্ষোভ মাশরাফীর ওপরেও
সাকিবের মতো এই ঘটনায় চুপ আছেন আরেক ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তুজা। তাকে নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেকে। সামাজিক মাধ্যমের এক ভিডিওতে দেখা যায়, একটি দেওয়ালে মাশরাফির আঁকা ছবি লক্ষ্য করে অনেকে জুত নিক্ষেপ করছেন। কেউ কেউ সেই ছবি নিয়ে লিখেছেন, ‘দুঃখিত, আপনি আমাদের ক্যাপ্টেন নন।’
সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতিসহ নিজের এলাকায় অনিয়মের বিরুদ্ধে মাশরাফি বেশ সচেতন। ক্রিকেটাঙ্গনের বিভিন্ন সংকটের সময় তাকে সরব থাকতে দেখা গেছে। কিন্তু কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে হতাহতের ঘটনায় তিনি নিশ্চুপ। সাকিব-মাশরাফি দুজনেই সংসদ সদস্য। তারা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। অনেকে বলছেন, ‘মানছি পদে থেকে অনেক সমস্যা থাকে, তাই কিছু বলতে পারছেন না। ক্রিকেটীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে সবসময় আপনারা দুইজন সবার আগে মুখ খুলতেন। আজ আপনারা চুপ কেন? আপনাদেরকে যে ছাত্ররা সাপোর্ট করত, যাদের নিরলস সাম্পের্টের কারণে আজ আপনারা সাকিব কিংবা মাশরাফি হয়েছেন, তাদের এই সময়ে আপনারা চুপ কেন?… চেয়ারে থেকে কিছু বলতে না পারলে সেই চেয়ার ছেড়ে দেওয়ার মেরুদণ্ড আছে?’
কেউ লিখেছেন, ‘আর্জেন্টিনা থেকে এনজো ফর্নান্দেজ কথা বলছেন, কিন্তু দেশে থেকে সাকিব-মাশরাফি চুপ। আবার কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, ‘ফলটা আসলে আমাদেরই। আমরাই ভাবতাম, তারা দেশের জন্য খেলে। আমরাই এদের দেশপ্রেমিক বানিয়েছিলাম। আমরা ভুলে গেছিলাম, এরা শুধু একটা চাকরির বেতনভুক্ত কর্মজীবী। যেখানে পারফরম্যান্স করলে মোটা টাকার বেতন পাওয়া যায়।’
বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে জাতীয় দলের বর্তমান ও সাবেক অনেক তারকাই কথা বলেছেন। মানুষ হত্যা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন, শিক্ষাঙ্গন রক্তাক্ত না করার আকৃতি জানিয়েছেন। কিন্তু সাকিব-মাশরাফি কোনো কথা বলেননি। তাদের মতো পেসার মোস্তাফিজুর রহমানও চুপ আছেন, কাটার মাস্টার খ্যাত এই ক্রিকেটারও কোনো বার্তা দেননি।