শিক্ষার্থীদের ন্যায্য ও যৌক্তিক আন্দোলনকে সরকার নজিরবিহীন নৃশংসতায় দমনের চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ গণতন্ত্র মঞ্চের। দলটি বলেছে, জনসমর্থনহীন সরকার অস্ত্রের জোরে টিকে থাকার চেষ্টা করছে। শিক্ষার্থী ও জনতা হত্যার দায়ে এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।
আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর পল্টনে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা এসব কথা বলেন। ‘শিক্ষার্থী-জনতা হত্যার বিচার, হামলা-মামলা-হয়রানি বন্ধ এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে গণতন্ত্র মঞ্চ।
শিক্ষার্থীদের দাবি বাস্তবায়ন ও চলমান আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে আগামী ৩১ জুলাই রাজধানীর পল্টন এলাকায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলনকে শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের পথে না নিয়ে ছাত্র-জনতার হত্যাকাণ্ডসহ দেশে নাশকতার যে পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে, এর সব দায়-দায়িত্ব সরকার ও সরকারি দলের। জনগণের জানমালের এই বিপুল ক্ষয়ক্ষতির দায় নিয়ে সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। হত্যা, গ্রেপ্তার, নির্যাতন-নিপীড়ন ও মিথ্যা প্রচারের যে পথে সরকার হাঁটছে; সে পথে এই সংকটের সমাধান নেই। সংকট উত্তরণে সরকারকে রাজনৈতিক সমাধানের পথ বেছে নিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। এতে বলা হয়, গত ১৬ থেকে ২০ জুলাই বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার গণ–অভ্যুথান ঘটেছে। শিক্ষার্থী-জনতার ওপর বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড আড়াল করতে এখন ইন্ধন ও নাশকতার অজুহাতে সরকার শিক্ষার্থী ও বিরোধী দলকে দমনের অভিযান চালাচ্ছে।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়েছে, এই আন্দোলন কোটা সংস্কারকে কেন্দ্র করে ছাত্র আন্দোলন হিসেবে তৈরি হলেও জনগণের বিপুল অংশগ্রহণে তা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রূপ নিয়েছে। এই আন্দোলনে জনগণের অংশগ্রহণের পেছনে শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি দলমত–নির্বিশেষে সাধারণ মানুষের যেমন সহানুভূতি ছিল, তেমনি ছিল নিজেদের জীবনে অনেক বছরের দুঃশাসনের বঞ্চনা।
চরম অর্থনৈতিক বিপর্যয়, রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সীমাহীন লুটপাট-পাচার, গত ১৫ বছর ধরে ভোট দিতে না পারা, সরকারের কাছের লোকদের লাগামহীন দুর্নীতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, মানুষের মতপ্রকাশের অধিকার কেড়ে নেওয়া, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম আর সরকারি দলের একচ্ছত্র আধিপত্য দিয়ে ভয়ের রাজত্ব কায়েম করা এসব মানুষের প্রতিবাদ-প্রতিরোধের জমিন তৈরি করেছে বলেও লিখিত বক্তব্যে বলা হয়।
সরকার ও সরকারি দল জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে দাবি করে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সরকার কেবল বলপ্রয়োগের মাধ্যমে এই গণ–আন্দোলন দমন করতে চেয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে সাম্প্রতিক ঘটনার বিষয়ে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে একটি আন্তর্জাতিক মানের নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে।
গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়ক আবুল হাসান বলেন, সরকার শিক্ষার্থীদের নানা ধরনের ‘ট্যাগ’ দিয়ে চরিত্র হনন করছে। জনসমর্থন হারিয়ে এই সরকার অস্ত্রের মুখে টিকে থাকতে চায়।
এ সময় রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্যসচিব আবু ইউসুফ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।