আন্তর্জাতিক ডেস্ক
কট্টর হিন্দুত্ববাদ আর তথাকথিত ‘মোদি ম্যাজিককে’ কাজে লাগিয়ে টানা এক দশক ভারতে একদলীয় শাসন চর্চা করে আসছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। ১৮তম লোকসভা নির্বাচনে তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করতে চলেছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ)। তবে ২০১৪ এবং ২০১৯ সালের নির্বাচনের মতো এবার সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় ম্যাজিক ফিগার ছুঁতে পারছে না বিজেপি। তাই নরেন্দ্র মোদির তৃতীয় মেয়াদ নির্ভর করবে এনডিএ জোটের শরিকদের ওপর। বিশেষ করে তেলেগু দেশমের চন্দ্রবাবু নাইডু ও নীতিশ কুমারের জনতা দল-ইউনাইটেডের (জেডি–ইউ) ওপর ভর করতে হবে বিজেপিকে। কিন্তু দিল্লিতে সরকার গঠনের চাবিকাঠি আপাতত নীতীশ কুমার ও চন্দ্রবাবু নাইডুর হাতেই। ফলে এই দুইজনের সমর্থন যেদিকে যাবে, তারাই দিল্লিতে সরকার গঠনের পথে অনেকটা এগিয়ে যাবে তা স্পষ্ট। ২০১৯ সালে বিজেপি একাই পেয়েছিলো ৩০৩ আসন।
সূত্রের খবর, ইন্ডিয়া জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতার কাছাকাছি যেতেই নীতীশ কুমার ও চন্দ্রবাবু নাইডুর সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করা হয়েছে ইন্ডিয়া জোটের পক্ষ থেকে।
ইন্ডিয়া জোটের পক্ষে এ দুই নেতাকে বোঝানোর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে এনসিপি নেতা শরদ পাওয়াকে। সূত্রের খবর, ইতোমধ্যে নাইডু ও নীতীশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন পাওয়ার।
অন্যদিকে সরকার গঠনের জন্য নীতীশ ও নাইডুর ভূমিকা এখন কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা বুঝতে পেরে তৎপর হয়েছে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বও। সূত্রের খবর, এদিন টিডিপি প্রধান চন্দ্রবাবু নাইডুকে কল করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও।
টানা তৃতীয়বারের মতো ভারত শাসনের ভার মোদির হাতে থাকলেও সরকার গঠনে হাত মেলাতে হবে জোটের শরিকদের সঙ্গে। যাতে বিজেপির ভরসা চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলেগু দেশম ও নীতিশ কুমারের জেডিইউ। কেননা অন্ধ্রপ্রদেশে তেলেগু দেশম জিতেছে ১৬ আসনে। অন্যদিকে, বিহারের জেডিইউ এর ঝুলিতে আছে ১২ আসন। টিডিপি ও জেডিইউ’র সম্মিলিত আসন ২৮। তাই জোট সঙ্গীদের নিয়ে সরকার গঠনে মরিয়া বিজেপি শিবির, চলছে দফায় দফায় ফোনালাপ ও আলোচনা।
বিজেপির এই জোট শরিকদের বাগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কংগ্রেস ও ইন্ডিয়া জোটও। আর এ কাজের দায়িত্ব পড়েছে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, মহারাষ্ট্রের এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ার ও তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাঁধে। জানা যায়, নীতিশ কুমারকে উপপ্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে ইন্ডিয়া অ্যালায়েন্স। বলা হচ্ছে, বিজেপির চেয়ে কংগ্রেসের কাছ থেকে বেশি সুযোগ সুবিধার নিশ্চয়তা পেলে ভোল পাল্টাতে পারেন প্রবীণ দুই রাজনীতিবিদ। কেনোনা ঘন ঘন সঙ্গী বদলের অভ্যাস তাদের বেশ পুরনো।
শরিকদের ওপর নির্ভর করে বা তাদের ভরসায় রাজ্য বা কেন্দ্রে কোথাও সরকার চালানোয় অভ্যস্ত নন নরেন্দ্র মোদি। সিদ্ধান্ত গ্রহণেও অগ্রাধিকার পেয়েছে বিজেপির নীতি। নতুন এই সমীকরণের সঙ্গে তাই কতটা খাপ খাওয়াতে পারবেন মোদি, তা নিয়েও দেখা দিয়েছে সংশয়।
নীতীশের দিল্লি যাত্রার পর থেকেই বিহারের মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে তার ইস্তফা দেওয়ার জল্পনাও শুরু হয়েছে। যদিও লোকসভা নির্বাচনে ইন্ডিয়া জোটের ভালো ফলের পরে নীতীশ এনডিএ জোটের পক্ষেই থাকেন কি না, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন। জেডিইউ অবশ্য দাবি করেছে, তারা এনডিএ-তেই থাকছে।
অন্যদিকে অন্ধ্রপ্রদেশে বিধানসভা এবং লোকসভা ভোটে জোট বেঁধেই লড়েছে চন্দ্রবাবু নাইডুর টিডিপি ও বিজেপি। তবে নীতীশের মতোই অতীতে এনডিএর সঙ্গ ছেড়েছেন নাইডুও। তবে কিছুক্ষণ আগেই টিডিপিও জানিয়ে দিয়েছে, তারা এনডিএর সঙ্গ ছাড়ছে না।
পাওয়ার নিজে এ দিন জানান, বুধবার দিল্লিতে ইন্ডিয়া জোটের বৈঠক ডাকা হয়েছে। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির সঙ্গে কথা হয়েছে।
তবে চন্দ্রবাবু নাইডু ও নীতীশ কুমারের সঙ্গে তার কথা হয়েছে কি না, তা নিয়ে কিছু বলেননি পাওয়ার।
ভারতের স্বাধীনতার পর থেকে পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু ছাড়া কোনো প্রধানমন্ত্রীই টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠনে সফল হননি। এই নির্বাচনে নেহরুর রেকর্ডের ছোঁয়ার সুযোগ পেয়েছেন মোদি।
কিন্তু লোকসভা নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল আসা শুরুর পর নীতীশ-নাইডু ফ্যাক্টরই ঘুরে-ফিরে আসছে। কারণ নীতিশ ও নাইডুর অবস্থানের ভিত্তিতে সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। একইসঙ্গে আরো বেশ কিছু দল রয়েছে, যাদের কেউ দুই বা এক আসনে সারা ভারতে এগিয়ে। এদেরও সঙ্গে নিয়ে চলতে হবে ভবিষ্যতের বিজেপিকে।
১৯৯৯ সালে অটল বিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট একাধিক শরিক নিয়ে পাঁচ বছর সরকার চালিয়েছিল। কিন্তু এখনকার বিজেপি তা নয়। মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি এককভাবে জিততেই অভ্যস্ত। শরিকদের ওপর নির্ভর করে এবং তাদের ভরসায় রাজ্য বা কেন্দ্র কোথাও সরকার চালাননি মোদি। তাই এই নতুন সমীকরণের সঙ্গে তিনি কীভাবে খাপ খাইয়ে নিচ্ছেন, কীভাবে ওঠাবসা করছেন তার ওপরই নির্ভর করবে সরকারের বাঁচা–মরা।