সমাচার ডেস্ক
ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ উপজেলা) আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যার তদন্তের জন্য ভারতীয় পুলিশের একটি স্পেশাল টিম ঢাকায় আসছেন। ভারতীয় পুলিশের এই বিশেষ দল ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে আজ বৃহস্পতিবার (২৩ মে)।
আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আজ দুপুর ২টা নাগাদ দুজন ভারতীয় পুলিশের ঢাকায় পৌঁছানোর কথা।’
এদিকে গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বেশকিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে। দুই দেশের নাগরিকরা হত্যায় অংশ নিয়েছিলেন। পুরো বিষয়টি তদন্তের জন্য ভারতীয় পুলিশের একটি স্পেশাল টিম তদন্তের জন্য ঢাকায় আসবে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে দুই সদস্যের একটি দল ঢাকায় আসবে।
এর আগে বুধবার (২২ মে) সকালে কলকাতার গণমাধ্যম সূত্রে প্রথম খবর ছড়ায়, বাংলাদেশের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম হত্যার শিকার হয়েছেন। এরপর এ ব্যাপারে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সর্বপ্রথম পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ভারতে গিয়ে নিখোঁজ বাংলাদেশের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের মরদেহ উদ্ধারের খবর পেয়েছি গণমাধ্যম সূত্রে। তবে, ইন্ডিয়ান বা কলকাতা পুলিশ আমাদের এখনো কিছু নিশ্চিত করেনি। তিনি জীবিত নাকি মৃত তা এখনো অফিসিয়ালি নিশ্চিত নই। আমরা যৌথভাবে কাজ করছি।
পরে দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীমকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। কারা তাকে হত্যা করেছে তা জানতে বাংলাদেশ ও ভারতের পুলিশ কাজ করছে।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে আটক করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আটক তিনজন বাংলাদেশ পুলিশের কাছে আছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
মন্ত্রী বলেন, চিকিৎসার জন্য আনোয়ারুল আজীম দেশের বাইরে গিয়েছিলেন। সেখানে তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। ভারতের পুলিশ আমাদের নিশ্চিত করেছে, তাকে হত্যা করা হয়েছে।
প্রাথমিক তদন্তের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, খুনের সঙ্গে ভারতের কেউ জড়িত নয়। বাংলাদেশিরাই হত্যা করেছে। সেহেতু বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক খারাপ হওয়ার কোনো কারণ নেই। ভারত আমাদের যথেষ্ট কো-অপারেশন করছে। আমাদের কাছে আরো তথ্য আছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এখন জানাতে পারছি না।
এদিকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন-অর-রশিদ জানান, ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনার হত্যাকাণ্ডের কারণ জানতে নিবিড়ভাবে তদন্ত চলছে।
সাংবাদিকদের ডিবি প্রধান বলেন, ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। ঝিনাইদহ-কালিগঞ্জ এলাকার জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধি ছিলেন তিনি। তার এলাকার সাধারণ মানুষ স্তম্ভিত। আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। তিনি তিনবারের সংসদ সদস্য। এটি নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড, এটা মনে করেই তদন্তকারী কর্মকর্তারা কাজ করছেন। নিবিড়ভাবে ভারতীয় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। কয়েকজন আমাদের কাছে আছে, তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচ্ছি। তদন্তের স্বার্থে আমরা সবকিছু বলতে পারছি না।
হারুন-অর-রশিদ বলেন, একজন সংসদ সদস্যকে বাংলাদেশি অপরাধীরা নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি যারা আছে তাদের প্রত্যেককে আমরা আইনের আওতায় আনব। বিচারের মুখোমুখি করবো। তদন্তের স্বার্থে নাম প্রকাশ করতে চাচ্ছি না।
বিভিন্ন ধরনের ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে, কী কারণে হত্যার ঘটনা ঘটেছে জানা গেছে কি না? এ প্রশ্নের জবাবে ডিবি প্রধান বলেন, আসলে এটা কী কারণে ঘটেছে জানতে আমাদের তদন্ত চলছে। এটা পারিবারিক নাকি আর্থিক নাকি এলাকায় কোনো দুর্বৃত্ত দমন করার কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে- সবকিছু আমরা তদন্তে আনবো।
প্রসঙ্গত, গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ভারতের পশ্চিবঙ্গে যান এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার। সেদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে কলকাতায় তার পারিবারিক বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের সঙ্গে দেখা করতে যান। পরের দিন, ১৩ মে চিকিৎসক দেখাতে হবে জানিয়ে দুপুর ১টা ৪১ মিনিটে গোপালের বাড়ি থেকে বের হন আনার। সন্ধ্যায় ফিরবেন বলেও জানান তিনি। পরে বিধান পার্কের কাছে কলকাতা পাবলিক স্কুলের সামনে থেকে ট্যাক্সিতে উঠেছিলেন তিনি।
চলে যাওয়ার পর সন্ধ্যায় আজিম তার বন্ধু গোপালকে জানান, তিনি দিল্লি যাচ্ছেন এবং সেখানে পৌঁছে তাকে ফোন করবেন। পরে তার সঙ্গে ভিআইপিরা আছেন জানিয়ে বন্ধু গোপালকে ফোন না দেয়ার জন্য সতর্ক করেছিলেন।
গত ১৫ মে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো বার্তায় এমপি আনার বন্ধু গোপালকে জানান, তিনি দিল্লি পৌঁছেছেন এবং ভিআইপিদের সঙ্গে আছেন। তাকে ফোন করার দরকার নেই। একই বার্তা পাঠান বাংলাদেশে তার ব্যক্তিগত সহকারী রউফের কাছেও।
১৭ মে আনারের পরিবার তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে গোপালকে ফোন করেন। ওই সময় তারা গোপালকে জানান, তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না তারা। পরিবারের পক্ষ থেকে ওই দিনই ঢাকায় থানায় অভিযোগ করা হয়। এরপর থেকে এমপি আনারের খোঁজ পাওয়া যায়নি।