ঢাকা ০৯:৪৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫, ২৬ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
গহীন জঙ্গলে ইউপিডিএফ’র গোপন আস্তানার সন্ধান: অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার হানিফসহ চারজনের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়ার হত্যা মামলার অভিযোগ আমলে নিল ট্রাইব্যুনাল ৭৩ পর্যবেক্ষক সংস্থার অনুমোদন, ঠিকানায় অস্তিত্ব নেই অনেকের! প্রত্যাশিত নির্বাচনে জনগণের পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন তারেক রহমান গৌরনদী ও আগলঝাড়ার বিভিন্ন পূজা মন্ডপ পরিদর্শন করেন জহির উদ্দিন স্বপন! খুব শিগগিরই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আমিরাতে নতুন ভিসা নীতি: এআই বিশেষজ্ঞসহ চার ক্যাটাগরি চালু “পিআরের নামে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে জামায়াত” — কায়সার কামাল শারদীয় পূজা ঘিরে গুজব কমেছে, কঠোর নজরদারিতে এনটিএমসি দোহায় হামলার ঘটনায় কাতারের প্রধানমন্ত্রীর কাছে ক্ষমা চাইলেন নেতানিয়াহু

‘কবুল’ না বললেও যেসব শব্দে বিয়ে সহীহ হয়

  • আপডেট সময় : ০৮:৪০:৪৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২৪ বার পড়া হয়েছে
সংবাদ সমাচারের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ইসলামে বিয়ে একটি পবিত্র ও গুরুতর চুক্তি, যার মাধ্যমে নারী–পুরুষ বৈধ দাম্পত্য সম্পর্কে আবদ্ধ হয়। এটি কেবল সামাজিক সম্পর্ক নয়, বরং একটি ইবাদতও বটে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বিয়েকে দ্বীনের অর্ধেক পূর্ণ করার সমতুল্য বলেছেন।

বিয়ের গুরুত্ব ও হাদিসের নির্দেশনা

রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন—

“যে ব্যক্তি বিয়ে করল, সে তার দ্বীনের অর্ধেক পূর্ণ করল। অতএব, বাকি অর্ধেকাংশে সে যেন আল্লাহকে ভয় করে।” (বায়হাকি, শুআবুল ইমান)

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, নবী করীম (সা.) বলেছেন—

“হে যুবকগণ! তোমাদের মধ্যে যে বিয়ের সামর্থ্য রাখে সে যেন বিয়ে করে। কেননা এটি দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থান হেফাজত করে। আর যে সামর্থ্য রাখে না, সে যেন রোজা রাখে; রোজা তার প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করবে।” (বুখারি, মুসলিম)

অতএব, বিয়ে শুধু ব্যক্তিগত বা পারিবারিক বিষয় নয়; এটি ঈমান রক্ষা, সমাজের শৃঙ্খলা এবং মানবজীবনের পরিপূর্ণতা আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

বিয়ে সম্পাদনের মৌলিক শর্তসমূহ

ইসলামী ফিকহ বিশেষ করে হানাফি মাযহাবে বিয়ে সহীহ হওয়ার জন্য কিছু মূল শর্ত নির্ধারণ করা হয়েছে—

১️⃣ ইজাব (প্রস্তাব): বিয়ে করতে ইচ্ছুক পক্ষের স্পষ্ট প্রস্তাব।

২️⃣ কবুল (গ্রহণ): অপর পক্ষের সম্মতিসূচক উত্তর।

৩️⃣ স্পষ্ট শব্দ: এমন বাক্য ব্যবহার করতে হবে, যাতে নিকাহ স্পষ্টভাবে বোঝা যায়।

৪️⃣ সাক্ষী: অন্তত দুজন প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম পুরুষ অথবা একজন পুরুষ ও দুইজন নারী সাক্ষীর উপস্থিতি।

‘কবুল’ না বলেও যেসব শব্দে বিয়ে হয়ে যায়

বিয়ে সম্পাদনের ক্ষেত্রে সাধারণত “আমি কবুল করলাম” শব্দ ব্যবহার প্রচলিত। তবে ইসলামী ফিকহে বলা হয়েছে, ‘কবুল’ শব্দ না বললেও যদি অন্য কোনো শব্দে স্পষ্টভাবে সম্মতি প্রকাশ পায়, তাহলে নিকাহ বৈধ হবে।

যেসব শব্দে বিয়ে সহীহ হয়—

  • ক্ববিলতু (قبلتُ): আমি গ্রহণ করলাম।
  • রদ্বিতু (رضيتُ): আমি রাজি/সন্তুষ্ট হলাম।
  • তাযাওয়াজ্তুহা (تزوجتها): আমি তাকে বিবাহ করলাম।
  • আনকাহতু নাফসি ইইয়্যাহু (أنكحت نفسي إياه): আমি নিজেকে তার সাথে বিবাহ করলাম।
  • আজাযতুহু (أجزته): আমি এটিকে অনুমোদন করলাম (প্রতিনিধির মাধ্যমে ইজাব এলে)।

এগুলো সবই নিকাহর স্পষ্ট শব্দ হিসেবে গণ্য হয়।

ফিকহি দলিল ও উলামাদের ব্যাখ্যা

  • ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া:
    “নিকাহ স্পষ্ট শব্দ দ্বারা জায়েয হয়, যেমন أنكحتُ, تزوجتُ, قبلتُ, رضيتُ।”
  • হেদায়া:
    “ইজাব ও কবুল এমন শব্দে হতে হবে, যা দ্বারা স্পষ্টভাবে নিকাহ বোঝা যায়।”
  • দররুল মুখতার:
    “নিকাহ সেই সব শব্দ দ্বারা সহীহ হয়, যা মালিকানা (বিবাহ) বোঝায়, যেমন زوجتك, أنكحتك, تزوجت।”

অর্থাৎ, সম্মতি প্রকাশ পেলেই এবং প্রেক্ষাপট পরিষ্কার থাকলে বিয়ে সহীহ হয়।

কোরআন ও হাদিসের দলিল

কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন—

“ভদ্রভাবে স্ত্রীর সঙ্গে জীবনযাপন করো, অথবা সম্মানের সঙ্গে তাকে বিদায় দাও।” (সূরা বাকারা, ২:২২৯)

এখানে বৈবাহিক জীবনে সম্মতি ও স্বীকৃতির বিষয়টি “কবুল” এর মর্ম প্রকাশ করে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—

“নিকাহ পরস্পরের সম্মতির ভিত্তিতে সম্পন্ন হয়।” (সুনান ইবনু মাজাহ)

এ হাদিস স্পষ্ট প্রমাণ করে, সরাসরি “কবুল” শব্দ ব্যবহার বাধ্যতামূলক নয়; বরং সম্মতি প্রকাশ পেলেই নিকাহ সম্পন্ন হয়।

উপসংহার

ফিকহে হানাফি মতে, বিয়ের মূল শর্ত হলো স্পষ্ট প্রস্তাব ও গ্রহণ। এ ক্ষেত্রে শব্দচয়ন ভিন্ন হতে পারে, তবে তা এমন হতে হবে যাতে পরিষ্কারভাবে বিবাহ বোঝা যায়। তাই ‘কবুল’ শব্দ না বললেও অন্য কোনো স্পষ্ট শব্দে বিয়ে বৈধ হয়ে যাবে।

তবে আলেমগণ বলেন, যেহেতু সমাজে প্রচলিত বাক্য “আমি কবুল করলাম” সুস্পষ্ট ও গ্রহণযোগ্য, তাই বিভ্রান্তি এড়াতে সেটিই ব্যবহার করা উত্তম।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

‘কবুল’ না বললেও যেসব শব্দে বিয়ে সহীহ হয়

আপডেট সময় : ০৮:৪০:৪৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ইসলামে বিয়ে একটি পবিত্র ও গুরুতর চুক্তি, যার মাধ্যমে নারী–পুরুষ বৈধ দাম্পত্য সম্পর্কে আবদ্ধ হয়। এটি কেবল সামাজিক সম্পর্ক নয়, বরং একটি ইবাদতও বটে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বিয়েকে দ্বীনের অর্ধেক পূর্ণ করার সমতুল্য বলেছেন।

বিয়ের গুরুত্ব ও হাদিসের নির্দেশনা

রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন—

“যে ব্যক্তি বিয়ে করল, সে তার দ্বীনের অর্ধেক পূর্ণ করল। অতএব, বাকি অর্ধেকাংশে সে যেন আল্লাহকে ভয় করে।” (বায়হাকি, শুআবুল ইমান)

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, নবী করীম (সা.) বলেছেন—

“হে যুবকগণ! তোমাদের মধ্যে যে বিয়ের সামর্থ্য রাখে সে যেন বিয়ে করে। কেননা এটি দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থান হেফাজত করে। আর যে সামর্থ্য রাখে না, সে যেন রোজা রাখে; রোজা তার প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করবে।” (বুখারি, মুসলিম)

অতএব, বিয়ে শুধু ব্যক্তিগত বা পারিবারিক বিষয় নয়; এটি ঈমান রক্ষা, সমাজের শৃঙ্খলা এবং মানবজীবনের পরিপূর্ণতা আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

বিয়ে সম্পাদনের মৌলিক শর্তসমূহ

ইসলামী ফিকহ বিশেষ করে হানাফি মাযহাবে বিয়ে সহীহ হওয়ার জন্য কিছু মূল শর্ত নির্ধারণ করা হয়েছে—

১️⃣ ইজাব (প্রস্তাব): বিয়ে করতে ইচ্ছুক পক্ষের স্পষ্ট প্রস্তাব।

২️⃣ কবুল (গ্রহণ): অপর পক্ষের সম্মতিসূচক উত্তর।

৩️⃣ স্পষ্ট শব্দ: এমন বাক্য ব্যবহার করতে হবে, যাতে নিকাহ স্পষ্টভাবে বোঝা যায়।

৪️⃣ সাক্ষী: অন্তত দুজন প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম পুরুষ অথবা একজন পুরুষ ও দুইজন নারী সাক্ষীর উপস্থিতি।

‘কবুল’ না বলেও যেসব শব্দে বিয়ে হয়ে যায়

বিয়ে সম্পাদনের ক্ষেত্রে সাধারণত “আমি কবুল করলাম” শব্দ ব্যবহার প্রচলিত। তবে ইসলামী ফিকহে বলা হয়েছে, ‘কবুল’ শব্দ না বললেও যদি অন্য কোনো শব্দে স্পষ্টভাবে সম্মতি প্রকাশ পায়, তাহলে নিকাহ বৈধ হবে।

যেসব শব্দে বিয়ে সহীহ হয়—

  • ক্ববিলতু (قبلتُ): আমি গ্রহণ করলাম।
  • রদ্বিতু (رضيتُ): আমি রাজি/সন্তুষ্ট হলাম।
  • তাযাওয়াজ্তুহা (تزوجتها): আমি তাকে বিবাহ করলাম।
  • আনকাহতু নাফসি ইইয়্যাহু (أنكحت نفسي إياه): আমি নিজেকে তার সাথে বিবাহ করলাম।
  • আজাযতুহু (أجزته): আমি এটিকে অনুমোদন করলাম (প্রতিনিধির মাধ্যমে ইজাব এলে)।

এগুলো সবই নিকাহর স্পষ্ট শব্দ হিসেবে গণ্য হয়।

ফিকহি দলিল ও উলামাদের ব্যাখ্যা

  • ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া:
    “নিকাহ স্পষ্ট শব্দ দ্বারা জায়েয হয়, যেমন أنكحتُ, تزوجتُ, قبلتُ, رضيتُ।”
  • হেদায়া:
    “ইজাব ও কবুল এমন শব্দে হতে হবে, যা দ্বারা স্পষ্টভাবে নিকাহ বোঝা যায়।”
  • দররুল মুখতার:
    “নিকাহ সেই সব শব্দ দ্বারা সহীহ হয়, যা মালিকানা (বিবাহ) বোঝায়, যেমন زوجتك, أنكحتك, تزوجت।”

অর্থাৎ, সম্মতি প্রকাশ পেলেই এবং প্রেক্ষাপট পরিষ্কার থাকলে বিয়ে সহীহ হয়।

কোরআন ও হাদিসের দলিল

কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন—

“ভদ্রভাবে স্ত্রীর সঙ্গে জীবনযাপন করো, অথবা সম্মানের সঙ্গে তাকে বিদায় দাও।” (সূরা বাকারা, ২:২২৯)

এখানে বৈবাহিক জীবনে সম্মতি ও স্বীকৃতির বিষয়টি “কবুল” এর মর্ম প্রকাশ করে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—

“নিকাহ পরস্পরের সম্মতির ভিত্তিতে সম্পন্ন হয়।” (সুনান ইবনু মাজাহ)

এ হাদিস স্পষ্ট প্রমাণ করে, সরাসরি “কবুল” শব্দ ব্যবহার বাধ্যতামূলক নয়; বরং সম্মতি প্রকাশ পেলেই নিকাহ সম্পন্ন হয়।

উপসংহার

ফিকহে হানাফি মতে, বিয়ের মূল শর্ত হলো স্পষ্ট প্রস্তাব ও গ্রহণ। এ ক্ষেত্রে শব্দচয়ন ভিন্ন হতে পারে, তবে তা এমন হতে হবে যাতে পরিষ্কারভাবে বিবাহ বোঝা যায়। তাই ‘কবুল’ শব্দ না বললেও অন্য কোনো স্পষ্ট শব্দে বিয়ে বৈধ হয়ে যাবে।

তবে আলেমগণ বলেন, যেহেতু সমাজে প্রচলিত বাক্য “আমি কবুল করলাম” সুস্পষ্ট ও গ্রহণযোগ্য, তাই বিভ্রান্তি এড়াতে সেটিই ব্যবহার করা উত্তম।