আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ইব্রাহিম রাইসি। ইরানের অষ্টম প্রেসিডেন্ট তিনি। একাধারে রাজনীতিবিদ ও বিচারক রাইসি বিশ্ব রাজনীতিতেও অন্যতম প্রভাবশালী নেতাদের একজন। ৬৩ বছর বয়সী এই দক্ষ রাজনীতিবিদকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি’র উত্তরসূচি মনে করা হতো। এর অবশ্য কারণও ছিলো। ইব্রাহিম রাইসি ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।
বিচারবিভাগ এবং ধর্মীয় দিক থেকে রাইসি ছিলেন এলিট সমাজের। ২০১৭ সালে ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান। কিন্তু ২০২১ সালে তিনি আবারো নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়ী হন।
ইব্রাহিম রাইসি ১৯৬০ সালে উত্তর-পূর্ব ইরানের পবিত্র শহর মাশহাদে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র ২০ বছর বয়সে তিনি তেহরানের পার্শ্ববর্তী শহর কারাজের প্রসিকিউটর-জেনারেল নিযুক্ত হন।
১৯৮৯ থাকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত রাইসি তেহরানের প্রসিকিউটর-জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৪ সাল থেকে তিনি এক দশক জুডিশিয়াল অথোরিটির উপপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৯ সালে তাকে বিচার বিভাগের প্রধান নিযুক্ত করেন দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি। মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি বিখ্যাত কওম ধর্মীয় সেমিনারিতে অধ্যায়ন শুরু করেন এবং বেশ কয়েকজন মুসলিম প্রখ্যাত স্কলারের কাছ থেকে তিনি শিক্ষা লাভ করেন।
১৯৮৩ সালে ইব্রাহিম রাইসি জামিলেহ আলামলহোদা কে বিয়ে করেন। তিনি আবার মাশহাদ জুম্মার নামাজের ইমাম আহমেদ আলামলবগদার মেয়ে। তাদের দুই কন্যা সন্তান রয়েছে।
১৯৮৮ সালে পাঁচ মাসের জন্য রাজনৈতিক কারাবন্দিদের মৃত্যুদণ্ডের তত্ত্বাবধায়ক কমিটির দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি তার অতীত কর্মকাণ্ডের জন্য ইরানের বিরোধী রাজনীতিবিদদের কাছে ব্যাপক অপছন্দের ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞাও দিয়েছিলো। এরপর ১৯৮৯ সালে ইরানের প্রথম সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খামেনির মৃত্যু হলে তাকে তেহেরানের প্রসিকিউটর পদে নিযুক্ত করা হয়।
১৯৯৪ সালে ইরানের বিচার বিভাগের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান জেনারেল ইন্সপেকশন অর্গানাইজেশন অব ইরানের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন। এরপর ২০০৪ সালে তাকে ইরানের ডেপুটি চিফ জাস্টিস বা উপপ্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। তারপর ২০১২ সাল থেকে ২০২১ ইব্রাহিম রাইসি ইরানের ধর্মীয় নেতাদের বিশেষ আদালতে প্রসিকিউটর জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
দীর্ঘ দিন ধরে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈরী সম্পর্ক চলে আসছে ইরানের। ইব্রাহিম রাইসি ক্ষমতায় আসার পর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলায় প্রতিবেশীদের পাশাপাশি চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে বিশেষভাবে মনোযোগ দিয়েছিলেন।
রোববার (১৯ মে) আজারবাইজান সীমান্তবর্তী এলাকায় জলাধার প্রকল্প উদ্বোধন শেষে ফেরার পথে তাকে বহনকারী হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়। ওই হেলিকপ্টারে তার সঙ্গে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ানসহ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাও ছিলেন। রাইসিকে নিয়ে দুর্ঘটনা কবলিত হেলিকপ্টারের কোনো আরোহী বেঁচে নেই- সোমবার (২০ মে) ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের বরাতে এমন তথ্য জানিয়েছে তুর্কি বার্তা সংস্থা আনাদোলু।