গাইবান্ধায় ৮ মাসে ১২০টি ধর্ষণের ঘটনা, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা বেশি শিকার

- আপডেট সময় : ০৫:৪৩:০৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ৭ বার পড়া হয়েছে
গাইবান্ধা জেলায় ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। গত আট মাসে জেলায় প্রায় দেড় শতাধিক নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে, যার মধ্যে ১২০টি ধর্ষণের ঘটনা। এই সময়ে প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ১৫ জন নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে স্কুল ও কলেজে পড়ুয়া কিশোরীরা।
আতঙ্কিত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা
গাইবান্ধা সদর হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার হওয়া ১২০ জনের মধ্যে ৩-১০ বছর বয়সী ১৪ জন, ১১-১৮ বছর বয়সী ৮৭ জন এবং ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে ১৯ জন রয়েছেন।
এই পরিসংখ্যান শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। শিক্ষার্থীরা জানায় যে, তারা রাস্তাঘাটে অনিরাপদ বোধ করে এবং সবসময় আতঙ্কে থাকে। তাদের মতে, এই অপরাধ বৃদ্ধির প্রধান কারণ হলো বিচারহীনতা এবং নারীদের প্রতি কিছু মানুষের নেতিবাচক মনোভাব। অভিভাবকরাও তাদের মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে মানসিক চাপে আছেন। তারা মনে করেন, সন্তানদের সাথে খোলাখুলি আলোচনা ও কাউন্সেলিং করা অত্যন্ত জরুরি।
কারণ ও প্রতিকার
বিভিন্ন নারী সংগঠন এই ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্য বিচারহীনতার সংস্কৃতি, অশ্লীলতা এবং পর্নোগ্রাফির অবাধ বিস্তারকে দায়ী করছে। গাইবান্ধা মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রিক্তু প্রসাদ বলেন, সমাজে যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি প্রচলিত আছে, সেটাই নারী নির্যাতনের ঘটনা বাড়ার মূল কারণ। বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্রের সংগঠক কলি রানী বর্মন যুবকদের মধ্যে পর্নোগ্রাফির আসক্তিকে একটি বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন এবং এ বিষয়ে পুলিশের নজরদারির দাবি জানিয়েছেন।
পুলিশের ভূমিকা
পুলিশ প্রশাসনও এই পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন। গাইবান্ধার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শরিফুল আলম বলেন যে, আইনের কঠোর প্রয়োগের পাশাপাশি সবার সচেতনতা প্রয়োজন। তিনি জানান, তারা অফিসারদের সজাগ থাকতে সতর্ক করেছেন। একই সাথে তিনি অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যেন তারা তাদের সন্তানদের ব্যাপারে সচেতন থাকেন এবং স্কুল-কলেজে সচেতনতা বাড়ানোর কার্যক্রমও চলমান রয়েছে।
উল্লেখ্য, জেলায় গত আট মাসে মোট ১৫৫টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এর আগের বছর, অর্থাৎ ২০২৪ সালে, ১৬২ জন নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন এবং ২২২ জন নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছিল।