গুলশানের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ স্মৃতি পার্ক: সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত নয়, কেবল ক্লাবের দখলে।

- আপডেট সময় : ০৬:৩১:৫৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩১ অগাস্ট ২০২৫ ৬ বার পড়া হয়েছে
ঢাকার গুলশানে অবস্থিত শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ স্মৃতি পার্ক জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকার কথা হলেও বাস্তবে এটি কেবল গুলশান ইয়ুথ ক্লাবের সদস্যদের ব্যবহারের জন্য সীমাবদ্ধ। পার্কের ভাড়া ছাড়া খোলা না থাকার কারণে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে যথেষ্ট অসন্তোষ ও বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
পার্কটি সবুজে ঘেরা হলেও, এর উন্মুক্ত স্থান কৃত্রিম মাঠ (আর্টিফিশিয়াল টার্ফ) বানানোর কারণে সাধারণ মানুষের জন্য বন্ধ। ক্রিকেট মাঠও কেবল ক্লাবের খেলোয়াড়দের ব্যবহারের জন্য সংরক্ষিত। সাধারণ মানুষ এই মাঠে খেলাধুলা বা অনুশীলন করতে পারেন না।
পার্কের পরিচালনা ও বিতর্ক
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) গুলশান ইয়ুথ ক্লাবের সঙ্গে পার্ক ব্যবস্থাপনার জন্য চুক্তি করে। তবে ক্লাবের কার্যক্রম এবং জনসাধারণের ব্যবহারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অভিযোগ বিভিন্নবার ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষের কাছে উঠেছিল। প্রতিবাদী কর্মসূচি ও গণমাধ্যম প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছিল ক্লাবের অনিয়ম নিয়ে।
অভিযোগ যাচাইয়ের পর, চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি ডিএনসিসি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ১৬ মার্চ ডিএনসিসির পঞ্চম বোর্ড সভায় কমিটি জানিয়েছে, অভিযোগগুলো যথাযথ। এরপর পার্ক ব্যবস্থাপনায় চুক্তির শর্ত ভঙ্গের দায়ে ইয়ুথ ক্লাবের সঙ্গে চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় বোর্ড। ২৩ জুন প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোহাম্মদ শওকত ওসমান ইয়ুথ ক্লাবকে পার্কের দখল ছাড়তে চিঠি দেন। ২৬ জুন পার্ক বুঝিয়ে দেওয়ার সময়সীমা ধার্য করা হয়।
চুক্তি পুনর্বহাল ও অসন্তোষ
যদিও ১০ জুলাই দেখা যায়, ইয়ুথ ক্লাব পার্কের দখল ছাড়েনি, এবং ২৯ জুলাই অষ্টম বোর্ড সভায় হঠাৎ করে চুক্তি পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত হয়। এর ফলে পার্কটি আবার ক্লাবের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। সংস্থার কর্মকর্তারা বলছেন, চুক্তি বাতিলের প্রক্রিয়ায় ত্রুটি ছিল।
স্থানীয় বাসিন্দা ও বিশেষজ্ঞরা এই সিদ্ধান্তকে গণ-অভ্যুত্থানের চেতনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা এবং উদ্যান সংরক্ষণ আইন লঙ্ঘন হিসেবে দেখছেন। তারা দাবি করছেন, পার্ক অবশ্যই নাগরিকবান্ধব এবং সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হওয়া উচিত।
ঢাকা উত্তর সিটির অন্তত ২৭টি পার্ক ও মাঠের নকশা করেছে ভিত্তি স্থপতিবৃন্দ লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক স্থপতি ইসতিয়াক জহির বলেন, “ইয়ুথ ক্লাব বহু আগেই পার্কটি নিজেদের দখলে নিয়েছে। গত বছর করপোরেশন সেই দখলদারকেই পার্ক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দিয়েছে। ক্লাব পার্ক ও মাঠকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করছে। করপোরেশন যদি চুক্তি বাতিল করার পরপরই ক্লাবকে উচ্ছেদ করত, তা হলে এই বিতর্ক হতো না। তবে নোটিশের মাধ্যমে দেরি করার ফলে যোগসাজশের অভিযোগ উঠেছে।”
পার্কের বড় অংশে রয়েছে খেলার মাঠ, যেখানে ক্লাব নিজেদের ক্রিকেট মাঠ হিসেবে ব্যবহার করছে। ফলে সাধারণ মানুষের জন্য পার্কটি ব্যবহার করা এখনো অসম্ভব।