‘আমার জীবনের সবচেয়ে কষ্টের কথা হলো, ওখান (ঢাকার দনিয়া এলাকা) দিয়েই অটোগাড়ি নিয়ে যাচ্ছিলাম। তখন স্থানীয় কয়েকজন আমাকে ডাক দেয় সড়কের ওপর পড়ে থাকা এক কিশোরকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য। আর গিয়ে যখন দেখি নিথর দেহটি আমার কলিজার টুকরার (ছেলে), তখনকার মনের অবস্থা কাউকে বলে বোঝাতে পারব না।’ কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে নিজের ছেলে মো. আমিনের (১৬) গুলিবিদ্ধ লাশ খুঁজে পাওয়ার ঘটনাটি এভাবে জানাচ্ছিলেন বাবা ওবায়দুল হক খান।
রাজধানী ঢাকার দনিয়া এলাকায় ২১ জুলাই সন্ধ্যায় ওই ঘটনা ঘটে। পরিবারের দাবি, ওই সময় নাশতা করার জন্য বাইরে বের হয়েছিল কিশোর আমিন।
আমিনের গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়নের ভরিপাশা গ্রামে। তবে কাজের সুবাদে স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানকে নিয়ে ঢাকার দনিয়া এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন ওবায়দুল হক। ভাড়ায় অটোরিকশা চালাতেন তিনি। আর অভাবের সংসারে বাবাকে সহযোগিতা করতে শৈশবেই একটি বৈদ্যুতিক সুইচ নির্মাণ কারখানায় শ্রমিকের কাজ নিয়েছিল আমিন। পড়াশোনা বলতে প্রাথমিকের গণ্ডিও পার করা হয়নি তার।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে নিহত আমিনের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে। ২২ জুলাই সকালে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। এর দুই দিন পরেই জীবিকার তাগিদে আবার রাজধানীতে ফিরে গেছেন তাঁরা।
বাড়িটিতে তখন সুনসান নীরবতা। জানা গেল, এর অধিকাংশ সদস্যই জীবন ও জীবিকার তাগিদে রাজধানী ঢাকায় বসবাস করেন। একটি ঘরে খুঁজে পাওয়া গেল আমিনের ৭৩ বয়সী দাদি লাভলী বেগমকে। তিনি বুকভরা কষ্টে তখনো নাতি আমিনের ছোটবেলার একটি বাঁধানো ছবি নিয়ে বসে ছিলেন। আমিনের স্মৃতি হাতড়ে ক্ষণে ক্ষণেই কাঁদছিলেন।
হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক যখন জানায় আমার বাবায় (ছেলে) মারা গেছে, তখন মনে হয়ছিল, আকাশ ভেঙে মাথার ওপর পড়ছে।
আমিনের বাবা ওবায়দুল হক খান
একপর্যায়ে লাভলী বেগম বলেন, তাঁর নাতি তো আন্দোলনে যায়নি; তাহলে তাকে কেন গুলি করে মেরে ফেলা হলো? শারীরিক সমস্যার কারণে তাঁর ছেলে ওবায়দুলের সংসারে আর সন্তান নেওয়ার সম্ভাবনা নেই। ফলে তাঁরা কী নিয়ে বাঁচবেন, এ প্রশ্ন লাভলী বেগমের। তিনি সরকারের কাছে এ ঘটনার বিচার দাবি করেছেন।
আমিনের বাবা ওবায়দুল মুঠোফোনে বলেন, ‘হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক যখন জানায় আমার বাবায় (ছেলে) মারা গেছে, তখন মনে হয়ছিল, আকাশ ভেঙে মাথার ওপর পড়ছে।’ একটু থেমে তিনি আবার বললেন, ‘এখন আমি কি নিয়ে বাঁচমু? কার জন্য বাঁচমু? এখন বেঁচে থাকা না-থাকা সমান কথা।’