মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে সাধারণ মানুষের দু’টো পৃথক সংঘর্ষের ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এর মধ্যে রাতে আজিমপুরে স্থানীয়দের সাথে সংঘর্ষের জের ধরে সেনাবাহিনীর লাঠিচার্জে শিক্ষার্থীরা আহত হয়। আহতদের মধ্যে দুজনকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়েছে।
ঢাকার আজিমপুরে ঘটা এই ঘটনা নিয়ে বিবিসি বাংলার সাথে কথা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রক্টর অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদের।
তিনি বলেছেন, “আমার কাছে যে তথ্য আছে, ওখানে রাস্তার পাশে যে ভেন্ডর থাকে, ওদের সাথে শিক্ষার্থীদের কথা কাটাকাটি হয়েছে।”সেই সূত্র ধরেই “শিক্ষার্থীদের সাথে ওখানের দোকানদারদের সাথে সংঘর্ষ হয়” এবং তারপর দোকানদাররা “বোধহয় আর্মির মোবাইল পেট্রোল টিমকে ডেকে নিয়ে আসে।”
তারপর সেনাবাহিনী দু’পক্ষকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য ওদের ওপর লাঠিচার্জ করেছে।
প্রক্টরের ভাষ্য মতে, “এটা সৈনিকরা করেছে, অফিসাররা না। ওখানকার লেফটেন্যান্ট কর্নেল নাহিদকে আমি যখন ইনভলভ করি, তিনি এসে বিষয়টিকে সুন্দরভাবে ম্যানেজ করেছেন…কিন্তু কোনও এক ফাঁকে দুই জন শিক্ষার্থীকে ওরা (সৈনিকরা) ভেতরে নিয়ে যায়।”
যে দু’জনকে তুলে নিয়েছে, তাদেরকে “ব্যাপকভাবে মেরেছে” বলে জানান তিনি।
“ওই দুইজন ব্যাপকভাবে জখম হয়েছে। এটা অফিসারদের অজ্ঞাতে হয়েছে,” বলছিলেন প্রক্টর।
আহত ওই দুই শিক্ষার্থীদেরকে প্রাথমিকভাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিলো। পরে তাদেরকে রাত তিনটার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্যের উপস্থিতিতে সিএমএইচে পাঠানো হয়।সিএমএইচ-এর চিকিৎসকরা জানিয়েছেন,আহত শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে আপাতত কোনও শঙ্কা নেই।
“তবে ওদের বিশ্রাম দরকার এখন। পরবর্তী ছয় ঘণ্টা পর বোঝা যাবে যে অন্য কোনও ট্রিটমেন্ট দরকার কি না। বিশেষ করে তাদের লোয়ার পার্টে…সেখানে জখমের চিহ্ন আছে,” বলছিলেন অধ্যাপক আহমেদ। তিনি জানান, এই দু’জন শিক্ষার্থী মুহসিন হলের ছাত্র।
তবে গুরুতর আহতের সংখ্যা দু’জন হলেও সেনাবাহিনীর লাঠিচার্জের কারণে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী।
প্রক্টর জানান, এই ঘটনা সেনাবাবঙ্গবাজারেও সংঘর্ষে শিক্ষার্থী আহত
মঙ্গলবার বিকেলে পৃথক একটি ঘটনায় ঢাকার বঙ্গবাজারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়।
সেই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, “বঙ্গবাজারে দোকানের যারা মালিক আছে, তাদের সাথে বোধহয় শিক্ষার্থীদের একটা ঝামেলা হয়েছে। এরপর শিক্ষার্থীদের আক্রমণ করা হয়েছে।”
এই ঘটনায় আহত শিক্ষার্থীদেরকে তিনি হাসপাতালে গিয়ে দেখেছেন। “ ওরা ব্যাপকভাবে আহত হয়েছে। ওদের পিঠে ব্যাপকভাবে ইনজুরি হয়েছে।”
এই শিক্ষার্থীদেরকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিলো। কিন্তু এরপর তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে আনা হয়েছে।
প্রক্টর জানান, বর্তমানে সেখানে চারজনকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ওদের অবস্থা আশঙ্কাজনক না হলেও জখমটা ব্যাপক।
আহত শিক্ষার্থীদের মাঝে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থী। ওই শিক্ষার্থীই গতকাল রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে শাহবাগ থানায় মামলা করেছে।হিনী একটি তদন্ত করছে এবং তারা এই ইস্যুটা ‘খুব সিরিয়াসলি’ দেখবে।
“তারা যহেতু কথা দিয়েছেন, তাই আমরা মামলাতে যাইনি,” বলছিলেন প্রক্টর।
ঘটনার সময় এবং পরে ঘটনাস্থল থেকে বেশ কয়েকজনকে ফেসবুক লাইভ করতে দেখা গেছে। ঘটনার পর একটি লাইভে কয়েকজন ছাত্রকে সেনাসদস্যদের প্রশ্ন করতে দেখা যায়, কেন তারা ছাত্রদেরকে মেরেছেন?
ফেসবুকে অপর এক পোস্টে শিক্ষার্থীদের সাথে সেনা কর্মকর্তাদের একটি ছবি দেখা যায়, যেখানে বলা হয়েছে, ঘটনার জন্য সেনা কর্মকর্তা ক্ষমা চেয়েছেন এবং সেনা সদস্যদের বিচারের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।