সমাচার ডেস্ক
ভারতে চিকিৎসা নিতে যাওয়া ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তার ব্যবহৃত ভারতীয় নম্বরের সর্বশেষ অবস্থান মুজাফফরাবাদ অর্থাৎ উত্তর প্রদেশ বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়ন্দা পুলিশ (ডিবি)। আজ রোববার (১৯ মে) সন্ধ্যায় রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ডিবি প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ঝিনাইদহ-৪ আসনের তিন বারের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার ১২ মে দর্শনার গেদে সীমান্ত দিয়ে কলকাতা যান। কলকাতায় তার পরিচিত গোপাল নামে একজনের বাসায় ওঠেন। পরদিন ১৩ মে সকালে নাস্তা করে ওই বাসা থেকে বেরিয়ে যান। সেদিন সন্ধ্যায় কলকাতায় গোপালের বাসায় যাওয়ার কথা থাকলেও যাননি। এরপর থেকে তার ব্যবহৃত ভারতীয় নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। মেয়ে ও পরিবারের অন্যরা তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে না।
হারুন অর রশীদ বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। ভারতীয় বিশেষ টাস্কফোর্স-এসটিএফ’র সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। ভারতীয় থানা পুলিশসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গেও কথা বলেছি। তারা আমাদের সহযোগিতা করছে। ভারতীয় পুলিশের সহযোগিতায় জানতে পেরেছি, আনোয়ারুল আজীমের ভারতীয় নম্বরের লোকেশন মুজাফফরাবাদ, অর্থাৎ উত্তর প্রদেশ। সব মিলিয়ে আমরাও খোঁজ-খবর রাখছি।
কলকাতার বরাহনগর থানায় বাংলাদেশি এই আইনপ্রণেতার নিখোঁজ হওয়া নিয়ে সাধারণ ডায়েরি করেন গেপাল বিশ্বাস নামের একজন। আনোয়ারুল আজিম তার বাড়িতেই উঠেছিলেন।
ওই ডায়েরি থেকে জানা গেছে, এমপি আনার গত ১২ই মে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বরানগর থানার ১৭/৩ মঙ্গল পাড়া লেনের বাসিন্দা তার দীর্ঘদিনের পরিচিত গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে উঠেন। ডাক্তার দেখানোর উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ওই বন্ধুর বাড়িতে ওঠেন এমপি আনোয়ারুল।
পরদিন ১৩ মে দুপুর পৌনে একটার দিকে ডাক্তার দেখানোর উদ্দেশ্যে বের হয়ে যান। যাওয়ার বলে যান, তিনি দুপুরে খাবেন না। সন্ধ্যায় ফিরবেন। নিজেই গাড়ি ডেকে বিধান পার্ক এলাকায় ক্যালকাটা পাবলিক স্কুলের সামনে থেকে গাড়িতে উঠে চলে যান। সন্ধ্যায় না ফিরে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ দিয়ে জানান, তিনি দিল্লি চলে যাচ্ছেন। দিল্লিতে গিয়ে তিনিই ফোন করবেন।
দুই দিন পর গত ১৫ মে বেলা ১১.২১ মিনিটে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ করে জানান, তিনি দিল্লি পৌঁছে গেছেন। তার সাথে বেশ কিছু ভিআইপি ব্যক্তি রয়েছে, তাই তাকে ফোন করার দরকার নেই। দরকারে তিনিই ফোন করবেন। এসব মেসেজ নিজের ব্যক্তিগত সহকারিকে (পিএ) জানানোর পাশাপাশি বাংলাদেশে তার বাড়িতেও দিয়ে পাঠিয়ে রাখেন বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দলের এই এমপি।
এরপর গত ১৬ মে সকালে দিল্লি থেকে সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত সহকারীকে ফোন করেন কিন্তু সে সময় তার সহকারী ফোন ধরতে পারেননি। কিন্তু পরে যখন তিনি পাল্টা ফোন করেন, সেসময় কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
পরদিন ১৭ মে আনারের মেয়ে গোপাল বিশ্বাসকে ফোন করে জানান, তিনিও তার বাবার সাথে যোগাযোগ করতে পারছেন না। ওই ঘটনার পর থেকেই গোপাল বিশ্বাস বাংলাদেশি সংসদ সদস্যের পরিচিত এবং আত্মীয়দের সাথে যোগাযোগ করতে পারলেও বন্ধু আনোয়ারুল আজিমের সঙ্গে কোনোভাবেই যোগাযোগ করে উঠতে পারেন নি।
উপায় না দেখে শনিবার বরাহনগর থানায় একটি নিখোঁজের ডায়েরি করেন গোপাল। পরে বরাহজনগর থানার তরফ থেকেও পুলিশের একটি দল অভিযোগকারী গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে গিয়ে তদন্ত করে।
ডিবিপ্রধান হারুন বলেন, আনোয়ারুল আজীমের একটি বাংলাদেশি ও আরেকটি ভারতীয় নম্বর ছিলো। ১৬ মে সকাল ৭টার দিকে তার নম্বর থেকে দুটি কল আসে। একটি আসে তার এপিএসের নম্বরে, আরেকটি আসে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর নম্বরে। কিন্তু তখন দুই জনের কেউই কল রিসিভ করতে পারেননি। তিনি আরো বলেন, সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের মেয়ে আমাদের কাছে এসেছেন। তার ব্যবহৃত নম্বরটি মাঝে মাঝে খুলছেন আবার মাঝে মাঝে বন্ধ করছেন। কারা কাজটি করছেন, তিনি কোনো ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়েছেন কি না সবকিছুই গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রতিনিয়ত ভারতীয় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। ভারতীয় পুলিশ যথেষ্ট সহযোগিতা করছে।
কালীগঞ্জ ও সদর উপজেলার একাংশ নিয়ে গঠিত ঝিনাইদহ-৪ আসন থেকে গত তিনবার টানা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন আনোয়ারুল আজিম আনার। পেশায় ব্যবসায়ী এই সংসদ সদস্য কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।