প্রায় ৪৮ হাজার শ্রমিকের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা প্রত্যাহার

- আপডেট সময় : ০৭:২৮:৩০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ৩ বার পড়া হয়েছে
শ্রমিক নেতা ও সাধারণ শ্রমিকদের বিরুদ্ধে বিগত সরকারগুলোর সময়ে দায়ের করা প্রায় সব মামলাই প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এর ফলে ৪৭ হাজার ৭২৮ জন অভিযুক্ত ও অজ্ঞাতনামা শ্রমিক মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। তবে গাজীপুরের কোনাবাড়ী থানায় শ্রমিক হত্যার অভিযোগে দায়ের করা একটি মামলা এখনও চলমান।
মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা ও গাজীপুরের চারটি থানায় শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মোট ৪৫টি মামলা ছিল। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছিল ঢাকার আশুলিয়া (১৫টি) এবং গাজীপুরের কালিয়াকৈরে (১৪টি)। এছাড়া, কোনাবাড়ী, জয়দেবপুর, বাসন ও টঙ্গী পশ্চিম থানায়ও বেশ কিছু মামলা ছিল। গত মাসেই এসব মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে।
অধিকাংশ মামলা ২০২৩ সালের হলেও, কিছু মামলা ২০২১ ও ২০১৫ সালের। সরকারি নথিতে বলা হয়েছে, মামলাগুলো রাজনৈতিক কারণে করা হয়েছিল। যদিও শ্রমিক নেতারা বলছেন, সবগুলো মামলা রাজনৈতিক নয়, বরং অধিকার আদায়ে আন্দোলন করার কারণেও অনেক মামলা হয়েছিল।
মামলার ধরণ ও বাদী
১১টি মামলার বাদী ছিল পুলিশ। বাকি মামলাগুলোর বাদী ছিলেন বিভিন্ন কারখানা বা কোম্পানির মালিকপক্ষের প্রতিনিধিরা। বেশিরভাগ মামলা করা হয়েছিল বেআইনি সমাবেশ, দাঙ্গা-হাঙ্গামা এবং হামলার অভিযোগে। মূলত, তৈরি পোশাক কারখানায় বেতন-ভাতা নিয়ে আন্দোলনের জেরে এসব মামলা হয়েছিল।
সদ্য অবসরপ্রাপ্ত শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান জানান, মামলাগুলো প্রত্যাহারের ব্যাপারে সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিল। তিনি বলেন, এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের ওপর আরোপিত পাল্টা শুল্কের হারও ২০ শতাংশে নেমে এসেছে।
যেভাবে মামলাগুলো প্রত্যাহার হলো
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর, ২০২৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ মুক্ত গার্মেন্টস শ্রমিক ইউনিয়ন ফেডারেশন শ্রমিকদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলো প্রত্যাহারের জন্য শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানায়। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে, মন্ত্রণালয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে চিঠি পাঠায়।
তবে প্রথমদিকে জননিরাপত্তা বিভাগ এই বিষয়ে খুব একটা কাজ করছিল না। পরবর্তীতে প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী-র সঙ্গে আইএলও, শ্রম মন্ত্রণালয় এবং শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের একটি বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে তিনি রাজনৈতিক কারণে হওয়া মামলাগুলো প্রত্যাহারে জোর দেন, যার পর বিষয়টি গতি পায়।
মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা যায়, শ্রম, স্বরাষ্ট্র এবং আইন মন্ত্রণালয় যৌথভাবে বৈঠক করে মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়।
বাংলাদেশ মুক্ত গার্মেন্টস শ্রমিক ইউনিয়ন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল আলম বলেন, “প্রায় সব মামলাই প্রত্যাহার হয়ে গেছে। কিছু মামলার সত্যায়িত কপি আমরা পেয়েছি, বাকিগুলোও তোলার জন্য আদালতে আবেদন করব।”
কারখানা মালিকদের অবস্থান
তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ-এর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, মালিকেরা শুধু ফৌজদারি অপরাধের ক্ষেত্রে মামলা করেন। তিনি আরও বলেন, সরকারের অনুরোধে এবং দেশের ভাবমূর্তি রক্ষায় মালিকেরা মামলাগুলো প্রত্যাহার করতে রাজি হয়েছেন। তিনি আশা করেন, ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি তৈরি হবে না যে মামলা-মোকদ্দমায় যেতে হয়।