সমাচার ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের বিজনেস ম্যাগাজিন ফোর্বস তাদের ‘অনূর্ধ্ব-৩০ এশিয়া’ তালিকার নবম সংস্করণ প্রকাশ করেছে। এই তালিকায় উঠে এসেছে ৯ বাংলাদেশি তরুণ-তরুণীর নাম। এই তালিকায় এশিয়ার ৩০ বছরের নিচের ৩০০ জনের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। যাদের কেউ তরুণ উদ্যোক্তা, নেতা এবং আবিষ্কারক। তারা এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে নিজেদের কাজের মাধ্যমে নতুনত্ব এবং পরিবর্তন এনেছেন।
বিভিন্ন খাতে অবদান রাখায় এই ৯ বাংলাদেশি এই তালিকায় জায়গা পেয়েছেন। তারা হলেন- আনুশা আলমগীর (কালার্স ঢাকা), মেহেদি স্মরণ (হ্যালো টাস্ক), রেদোয়ান আহমেদ (ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক), মো. শহিদুল ইসলাম, আব্দুল গাফফার সাদী এবং মো. তুষার (দ্রুত লোন), সুলতান মনি, মুমতাহিনা আনিকা (জাতিক) ও ফাহাদ আহমেদ (উইন্ড অ্যাপ)।
একনজরে তাদের সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক-
আনুশা আলমগীর (কালার্স ঢাকা): কলা বিভাগ থেকে এই তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন আনুশা আলমগীর। ২০২৩ সালে ভেনিস বিয়েন্নালে ১৮তম আন্তর্জাতিক স্থাপত্য প্রদর্শনীতে একমাত্র বাংলাদেশি নারী হিসেবে অংশ নিয়েছিলেন লন্ডনের রয়্যাল কলেজ অব আর্ট থেকে স্থাপত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী আনুশা আলমগীর। তিনি চলচ্চিত্র ভাস্কর্য, পেইন্টিং, ফটোগ্রাফিতেও তার সাফল্যের স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। আনুশা আলমগীর প্রতিষ্ঠা করেছেন অনলাইন থ্রিফ্ট স্টোর ‘কালার্স ঢাকা’।
মেহেদি স্মরণ (হ্যালো টাস্ক): হ্যালোটাস্কের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মেহেদী স্মরণ কনজিউমার টেকনোলজি ক্যাটাগরিতে স্থান পেয়েছেন। তিনি কাজ শুরু করেন ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে। রোবট ডাকো নামে এটির যাত্রা হলেও এখন এটির নাম হ্যালোটাস্ক। প্রথমে অন ডিমান্ড ডেলিভারি দিয়ে শুরু করলেও ১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে গৃহকর্মী সেবা চালু করে হ্যালোটাস্ক অ্যাপ্লিকেশন। অ্যাপেই বাসার লোকেশন দিয়ে সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত তার এই অ্যাপের মাধ্যমে গৃহকর্মী ডাকা যায়। এই সেবা নিতে হলে সার্ভিস চার্জ হিসেবে প্রতি ঘণ্টায় ১০০ টাকা খরচ পড়বে। প্রথম ঘণ্টায় ৫০ টাকা অতিরিক্ত নেওয়া হয়। অনেকে গৃহকর্মী ডেকে নিয়ে পরে কাজ করান না, তাই ৫০ টাকা যাতায়াত হিসেবে একবারই নেওয়া হয়।
রেদোয়ান আহমেদ (ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক): গণমাধ্যম, মার্কেটিং ও বিজ্ঞাপন বিভাগে ফোর্বসের এই তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন রেদোয়ান আহমেদ। তিনি একজন পুরস্কার বিজয়ী ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক। রোহিঙ্গা সংকট ও পোশাক কারখানার শ্রমিকদের ওপর শোষণ নিয়ে তৈরি প্রতিবেদন তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে অন্যতম। স্থানীয় সাংবাদিকদের সুরক্ষার জন্য কাজ করা বাংলাদেশি জার্নালিস্ট ইন ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়ার সহপ্রতিষ্ঠাতা রেদোয়ান আহমেদ।
মো. শহিদুল ইসলাম, আব্দুল গাফফার সাদী এবং এমডি তুষার (দ্রুত লোন): তাদের গঠিত দ্রুতলোন নামের ফিনটেক প্ল্যাটফর্ম বেশ বড় পরিসরে সেবা নিয়ে এসেছে। যার মধ্যে আছে স্থানীয় এমএসএমই (অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি)। এটির লক্ষ্য হলো ঋণ পাওয়ার প্রক্রিয়াকে সহজ করে আনা। দ্রুতলোনের অন্যতম সুবিধা হলো, তাদের সেবা গ্রহণ করতে বারবার আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। যার ফলে ব্যবসার জন্য ঋণ নেওয়া আরও সহজ হবে এবং দেশের সুবিধাবঞ্চিত অঞ্চলগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নে তারা আরও অবদান রাখতে পারবেন।
সুলতান মনি, মুমতাহিনা আনিকা (জাতিক): ফাইন্যান্স অ্যান্ড ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ক্যাটাগরিতে আরো জায়গা করে নিয়েছেন ‘জাতিক’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা মুমতাহিনা আনিকা ও সুলতান মনি। প্রতিষ্ঠানটি ছোট কোম্পানিগুলোকে অ্যাকাউন্টিং পরিচালনা করতে সাহায্য করার জন্য সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার সমাধান দেয়। কোম্পানিটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরির ক্ষেত্রেও সহযোগিতা করে। কোম্পানিটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরির জন্য ছোট ব্যবসার জন্য টুল ও বানিয়ে থাকে। গত আগস্টে ‘জাতিক’ ১৬ লাখ ডলার তহবিল সংগ্রহ করেছে।
ফাহাদ আহমেদ (উইন্ড অ্যাপ): ‘উইন্ড ডট অ্যাপ’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ফাহাদ আহমেদ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ক্যাটাগরিতে ফোর্বেসের এই তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন। ‘উইন্ড ডট অ্যাপ’ দ্রুত এবং খুবই কম খরচে ক্রস-বর্ডার রেমিট্যান্স সুবিধা দেয়। স্টার্টআপটি ৩৮ লাখ ডলার তহবিল পেয়েছে। ‘উইন্ড ডট অ্যাপ’র আগে ফাহাদ আহমেদ কাজ করেছেন ‘পাঠাও’-এ। তিনি ‘পাঠাও’ এর প্রতিষ্ঠাতা দলের একজন ছিলেন এবং সেখানে তিনি বিভিন্ন পরিষেবা চালু করেছিলেন।
ফোর্বসের প্রতিবেদনে বলা হয়, কলা, প্রযুক্তি, গণমাধ্যম ও অর্থনীতিতে অবদান রাখায় তরুণদের এই স্বীকৃতি মিলেছে।