স্পোর্টস ডেস্ক
বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত ফুটবল দলের তালিকা করলে ওপরের দিকেই থাকবে আর্জেন্টিনার নাম। দৃষ্টিনন্দন কিংবা সৃষ্টিশীল ফুটবলে দিয়েগো মারাদোনা যে জনপ্রিয়তার বীজ বুনে গিয়েছিলেন, সেটি এখন রক্ষণাবেক্ষণ করছেন লিওনেল মেসি-দি মারিয়ারা। শুধু জনপ্রিয়তায় নয়, সাফল্যের বিচারেও আলবিসেলেস্তেরা বিশ্বের সেরা দলগুলোর একটি। ছেলেদের ফুটবলে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন তারা। ফিফা র্যাঙ্কিংয়েও দীর্ঘ সময় ধরে শীর্ষস্থানে মেসিরা।
এমন একটি দলের ফুটবল বোর্ড যে সমৃদ্ধ হবে, এটা না বললেও চলে। কিন্তু আর্জেন্টিনার যা অর্জন সবই ছেলেদের ফুটবলে। মেয়েদের ফুটবলের কথা বললেই উঠে আসে উল্টো চিত্র। দেশটির নারী ফুটবলের অবস্থা কতটা নাজেহাল, সেটি আবারো প্রকাশ্যে এসেছে জাতীয় দলের তিন ফুটবলারের কর্মকান্ডে। দেশটির ফুটবল বোর্ড আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এএফএ)-এর অনিয়মে বিরক্ত হয়ে শেষমেষ জাতীয় দলের ক্যাম্প ছেড়েছেন তিন ফুটবলার। পাশাপাশি বোর্ডের অথনৈতিক দুর্দশা ও নারী ফুটবল নিয়ে অনিয়মের নানা চিত্র সামনে এনেছেন তারা। লিওনেল মেসিদের ছেলেদের দলে যা একেবারেই অকল্পনীয়।
কোস্টারিকার বিপক্ষে শুক্রবার ও ৩ জুন দুটি প্রীতি ম্যাচ খেলবে আর্জেন্টাইন নারী দল। এর আগে একসঙ্গে অবসর নিলেন গোলকিপার লরিনা অলিভেইরোস, ডিফেন্ডার জুলিয়েতা ক্রজ ও মিডফিল্ডার লরিনা বেনিতেজ।
অবসরের ঘোষণা দিয়ে জুলিয়েতা ক্রজ ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, ‘আমরা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছি যেখানে আমরা অন্যায়ের শিকার, কেউ মূল্যায়ন করছে না, আর অপমানিত হতে হতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। আমি শুধু কম বেতনের কথা বলছি না, সকালের নাস্তা আর দুপুরের লাঞ্চেও আমরা বৈষম্যের শিকার।’
এমনিতে ছেলেদের দলের চেয়ে অনেক কম বেতন নারীদের। তারপর আবার কোস্টারিকার বিপক্ষে ম্যাচের জন্য পারিশ্রমিক দেওয়া হবে না নারী ফুটবলারদের। আর্জেন্টাইন ফুটবল ফেডারেশনের যুক্তি, ঘরের মাঠ বুয়েন্স আইরেসে ম্যাচ হবে বলে পারিশ্রমিক দেয়া হবে না!
তাছাড়া অনুশীলন ক্যাম্পে খাওয়ানো হচ্ছে নিম্নমানের খাবার। ছোট্ট এক টুকরো মাংস, একটা কলা আর স্যান্ডউইচ দেওয়া হচ্ছে অনুশীলনের পর। লম্বা সময় অনুশীলন করে যা কোনও অ্যাথলেটের জন্য পর্যাপ্ত নয়।
আর ম্যাচের সময় পরিবারের কাউকে গ্যালারিতে আনতে গেলে ফ্রি টিকিটের বদলে দিতে হয় ৫ ডলার। এসবের প্রতিবাদে একসঙ্গে অবসর নিলেন তিন ফুটবলার।
একই রকম অভিযোগে গত বছর অবসর নিয়েছিলেন আর্জেন্টিনার মেয়েদের ফুটবলের সেরা তারকা এস্তেফানিয়া বানেনি। আতলেতিকো মাদ্রিদে খেলা এই তারকা সমর্থন করলেন তিন খেলোয়াড়কে, ‘‘কাউকে না কাউকে প্রতিবাদ করতেই হত। তোমাদের অভিনন্দন।’’
খেলোয়াড়দের ক্যাম্প ছাড়ার এমন সিদ্ধান্ত কিংবা বোর্ডের বিরুদ্ধে এতসব অভিযোগ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি আর্জেন্টিনা ফুটবল। ছেলেদের ফুটবলে আর্জেন্টিনা এগিয়ে থাকলেও মেয়েদের ফুটবলে পিছিয়েই আছে লাতিনের দেশটি। মাত্র পাঁচ বছর আগে দেশটিতে নারীদের পেশাদার ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু হয়েছে। কিন্তু সামিগ্রকভাবে নারীদের ফুটবল এখনো পিছিয়েই আছে।
মেয়েদের র্যাঙ্কিংয়ে এই মুহুর্তে ৩৩তম আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপে সুযোগই পেয়েছে মাত্র চারবার, একবারো গ্রুপ পর্ব পেরোতে পারেনি। কোপা আমেরিকা অবশ্য একবার জিতেছে।