ঢাকা ০৭:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫, ২৬ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
গহীন জঙ্গলে ইউপিডিএফ’র গোপন আস্তানার সন্ধান: অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার হানিফসহ চারজনের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়ার হত্যা মামলার অভিযোগ আমলে নিল ট্রাইব্যুনাল ৭৩ পর্যবেক্ষক সংস্থার অনুমোদন, ঠিকানায় অস্তিত্ব নেই অনেকের! প্রত্যাশিত নির্বাচনে জনগণের পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন তারেক রহমান গৌরনদী ও আগলঝাড়ার বিভিন্ন পূজা মন্ডপ পরিদর্শন করেন জহির উদ্দিন স্বপন! খুব শিগগিরই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আমিরাতে নতুন ভিসা নীতি: এআই বিশেষজ্ঞসহ চার ক্যাটাগরি চালু “পিআরের নামে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে জামায়াত” — কায়সার কামাল শারদীয় পূজা ঘিরে গুজব কমেছে, কঠোর নজরদারিতে এনটিএমসি দোহায় হামলার ঘটনায় কাতারের প্রধানমন্ত্রীর কাছে ক্ষমা চাইলেন নেতানিয়াহু

নির্যাতনে আরও এক ধাপ এগিয়ে থাকত এসি ওবাইন।

ভয়ংকর -ওবাইন, সাবেক এসি সিটিটিসি, আর্মস টিম।

  • আপডেট সময় : ০৪:২২:২১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ অগাস্ট ২০২৫ ৬৭ বার পড়া হয়েছে
সংবাদ সমাচারের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

একজন গুম ভিক্টিম জানান, প্রচণ্ড রকম ইসলাম বিদ্বেষী এই ব্যক্তি। কথায়কথায় দ্বীন ইসলাম, রাসুল (স.)-এর উপর আক্রমণ করত। এমন উম্মুল মুমিনিদের ব্যাপারে উল্টোপাল্টা কথা বলত। এই ওবাইন রোজার সময় ডেকে নিয়ে টর্চার করার পাশাপাশি একেক করে সিগারেট ধরিয়ে মুখের উপর ধোঁয়া ছাড়ত। এমনকি ভিক্টিমকেও রোজা থাকা অবস্থায় সিগারেট খাবে কিনা বলে হাসাহাসি করত।

তার প্রধান কাজ ছিল, গুমের ভিক্টিমের মোবাইল ঘেঁটে পরিবারের নারীদের ছবি বের করে, তা নিয়ে অশ্লীল কথা বলা। তুলে আনার হুমকি দেওয়া। তার শেখানো জবানবন্দি দিতে রাজি না হলে, সে বলত পরিবারসহ সবাইকে তুলে আনবে।

গুমের ভিক্টিমদের তুলে আনার সময় তার উপস্থিতি সবসময় থাকত। গাড়িতে তোলার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু করত নির্যাতন। আমাকে গাড়িতে তোলার সঙ্গে সঙ্গেই সে বুকে লাথি মারে। তারপর তার সঙ্গে যোগ দেয় টিমের অন্য লোকজন।

এই ওবাইনের নির্যাতনের শিকার একজন ভিক্টিম ছিল ইঞ্জিনিয়ার ইহসানুর রহমান। তাকে আহমেদ ও ওবাইনের টিম মিরপুর থেকে নামাজ পড়ে বের হলে ধরে নিয়ে আসে। তাকে ১৮ মাস গুম করে রাখে। আর এই সময়জুড়ে তার উপর চালানো হয় অকথ্য নির্যাতন।

ইহসানুর রহমানের ভাষায়,

“এই বন্দিত্বের পরের দিন সকাল থেকেই নির্যাতন শুরু হয় এবং তা চলতে থাকে দীর্ঘ ১৮ মাস পর্যন্ত। প্রথম ৭ মাস নিয়মিত সকালবেলা টিমে নিয়ে যেত। প্রায় সারাদিন চলত টর্চার, বিকেলে অজ্ঞান হওয়ার পর আমাকে ৭ তলায় রেখে দিত। সকালবেলা আমাকে পা ও হাত কোমরের সঙ্গে বেঁধে, মুখে জম টুপি পরিয়ে ফেলে রাখা হত এবং অফিসার আসার আগ পর্যন্ত চলত যেভাবে পারত লাথি দেওয়া। অফিসার আসলেই শুরু হত, জিজ্ঞাসাবাদের নামে অমানবিক নির্যাতন।”

“বেতের মোটা লাঠি দিয়ে চলত নির্যাতন, সঙ্গে এডিসি আহমেদের কখনো সিগারেট খেয়ে জ্বলন্ত সিগারেট দিয়ে ছ্যাঁকা দিত। কখনো প্লায়ার্স দিয়ে চামড়া তুলে ফেলত।”

“নির্যাতনে আরও এক ধাপ এগিয়ে থাকত এসি ওবাইন। ক্লান্ত না হওয়া পর্যন্ত গরুর মতো পেটাতে থাকত। এই পুরো সময়জুড়ে পড়িয়ে রাখা হতো জম টুপি। মুখে গুঁজে দেওয়া হতো গামছা— যাতে আমার আত্মচিৎকার বাইরে যেতে না পারে। ওবাইন মারতে মারতে মোটা বেতের লাঠিটা একবার ভেঙে ফেলে। এরপর সেই লাঠিতে টেপ পেঁচিয়ে আবার শুরু হয় গরুর মত পেটানো। এই সময় আমাকে ধরে রাখত কনস্টেবল মাহতাব, যাতে আমি নড়াচড়া করতে না পারি। একবার একটা বাড়ি মাহতাবের পায়ে লাগে, পরদিন তার জ্বর এসে গিয়েছিল। এই নির্যাতনে আমি উঠতে পারতাম না। আমাকে সাত তলায় ফেলে রেখে যাওয়ার পর হামাগুড়ি দিয়ে টয়লেটে যেতে হতো।”

“আমাকে ঈদের ২য় দিন যে টর্চার সেলে নিয়ে গিয়েছিল, যার ভয়াবহ অবস্থা বর্ণনা করা সম্ভব নয়। মাথার উপর বিশাল লাইট, ৪ হাতপায়ে ৪টি হ্যান্ডকাফ ফিক্সড চেয়ারের সঙ্গে লাগিয়ে, পেট চেয়ারের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে, মুখে গামছা ঢুকিয়ে, মাথায় জম টুপি পরিয়ে একদিকে আহমেদ চাবুকের মতো ক্যাবল দিয়ে মারত, আরেকদিকে ওবাইন মোটা লাঠি দিয়ে মাঝে মাঝে প্লাস দিয়ে ইচ্ছেমতো টর্চার করত। একবার একটি বাড়ি হ্যান্ডকাফের লেকে হ্যান্ডকাফ ভেঙে গিয়েছিল।”

“এগুলো ছাড়াও অকথ্য ভাষায় মা, স্ত্রী, এবং ইসলামকে গালি দেওয়া ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। স্ত্রী, মেয়ে, মাকে তুলে আনার হুমকি, ক্রসফায়ারের ভয়— এসব ছিল সাধারণ ব্যাপার।”

আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, এই ওবাইনের বিরুদ্ধে শত গুমের অভিযোগ থাকার পরেও, শাস্তি তো হয়নি— উল্টো তাকে ৩/৩/২৫ তারিখে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এডিসি আহমেদকে বদলি করা হয়েছে তার নিজ জেলায়।

অদ্ভুত সংস্কারের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে এই দেশ, হাসিনার ভাড়াটে কিলাররা পদোন্নতি পাচ্ছে। গুমের ভিক্টিমদের মামলা এখনো চলমান আছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

নির্যাতনে আরও এক ধাপ এগিয়ে থাকত এসি ওবাইন।

ভয়ংকর -ওবাইন, সাবেক এসি সিটিটিসি, আর্মস টিম।

আপডেট সময় : ০৪:২২:২১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ অগাস্ট ২০২৫

একজন গুম ভিক্টিম জানান, প্রচণ্ড রকম ইসলাম বিদ্বেষী এই ব্যক্তি। কথায়কথায় দ্বীন ইসলাম, রাসুল (স.)-এর উপর আক্রমণ করত। এমন উম্মুল মুমিনিদের ব্যাপারে উল্টোপাল্টা কথা বলত। এই ওবাইন রোজার সময় ডেকে নিয়ে টর্চার করার পাশাপাশি একেক করে সিগারেট ধরিয়ে মুখের উপর ধোঁয়া ছাড়ত। এমনকি ভিক্টিমকেও রোজা থাকা অবস্থায় সিগারেট খাবে কিনা বলে হাসাহাসি করত।

তার প্রধান কাজ ছিল, গুমের ভিক্টিমের মোবাইল ঘেঁটে পরিবারের নারীদের ছবি বের করে, তা নিয়ে অশ্লীল কথা বলা। তুলে আনার হুমকি দেওয়া। তার শেখানো জবানবন্দি দিতে রাজি না হলে, সে বলত পরিবারসহ সবাইকে তুলে আনবে।

গুমের ভিক্টিমদের তুলে আনার সময় তার উপস্থিতি সবসময় থাকত। গাড়িতে তোলার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু করত নির্যাতন। আমাকে গাড়িতে তোলার সঙ্গে সঙ্গেই সে বুকে লাথি মারে। তারপর তার সঙ্গে যোগ দেয় টিমের অন্য লোকজন।

এই ওবাইনের নির্যাতনের শিকার একজন ভিক্টিম ছিল ইঞ্জিনিয়ার ইহসানুর রহমান। তাকে আহমেদ ও ওবাইনের টিম মিরপুর থেকে নামাজ পড়ে বের হলে ধরে নিয়ে আসে। তাকে ১৮ মাস গুম করে রাখে। আর এই সময়জুড়ে তার উপর চালানো হয় অকথ্য নির্যাতন।

ইহসানুর রহমানের ভাষায়,

“এই বন্দিত্বের পরের দিন সকাল থেকেই নির্যাতন শুরু হয় এবং তা চলতে থাকে দীর্ঘ ১৮ মাস পর্যন্ত। প্রথম ৭ মাস নিয়মিত সকালবেলা টিমে নিয়ে যেত। প্রায় সারাদিন চলত টর্চার, বিকেলে অজ্ঞান হওয়ার পর আমাকে ৭ তলায় রেখে দিত। সকালবেলা আমাকে পা ও হাত কোমরের সঙ্গে বেঁধে, মুখে জম টুপি পরিয়ে ফেলে রাখা হত এবং অফিসার আসার আগ পর্যন্ত চলত যেভাবে পারত লাথি দেওয়া। অফিসার আসলেই শুরু হত, জিজ্ঞাসাবাদের নামে অমানবিক নির্যাতন।”

“বেতের মোটা লাঠি দিয়ে চলত নির্যাতন, সঙ্গে এডিসি আহমেদের কখনো সিগারেট খেয়ে জ্বলন্ত সিগারেট দিয়ে ছ্যাঁকা দিত। কখনো প্লায়ার্স দিয়ে চামড়া তুলে ফেলত।”

“নির্যাতনে আরও এক ধাপ এগিয়ে থাকত এসি ওবাইন। ক্লান্ত না হওয়া পর্যন্ত গরুর মতো পেটাতে থাকত। এই পুরো সময়জুড়ে পড়িয়ে রাখা হতো জম টুপি। মুখে গুঁজে দেওয়া হতো গামছা— যাতে আমার আত্মচিৎকার বাইরে যেতে না পারে। ওবাইন মারতে মারতে মোটা বেতের লাঠিটা একবার ভেঙে ফেলে। এরপর সেই লাঠিতে টেপ পেঁচিয়ে আবার শুরু হয় গরুর মত পেটানো। এই সময় আমাকে ধরে রাখত কনস্টেবল মাহতাব, যাতে আমি নড়াচড়া করতে না পারি। একবার একটা বাড়ি মাহতাবের পায়ে লাগে, পরদিন তার জ্বর এসে গিয়েছিল। এই নির্যাতনে আমি উঠতে পারতাম না। আমাকে সাত তলায় ফেলে রেখে যাওয়ার পর হামাগুড়ি দিয়ে টয়লেটে যেতে হতো।”

“আমাকে ঈদের ২য় দিন যে টর্চার সেলে নিয়ে গিয়েছিল, যার ভয়াবহ অবস্থা বর্ণনা করা সম্ভব নয়। মাথার উপর বিশাল লাইট, ৪ হাতপায়ে ৪টি হ্যান্ডকাফ ফিক্সড চেয়ারের সঙ্গে লাগিয়ে, পেট চেয়ারের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে, মুখে গামছা ঢুকিয়ে, মাথায় জম টুপি পরিয়ে একদিকে আহমেদ চাবুকের মতো ক্যাবল দিয়ে মারত, আরেকদিকে ওবাইন মোটা লাঠি দিয়ে মাঝে মাঝে প্লাস দিয়ে ইচ্ছেমতো টর্চার করত। একবার একটি বাড়ি হ্যান্ডকাফের লেকে হ্যান্ডকাফ ভেঙে গিয়েছিল।”

“এগুলো ছাড়াও অকথ্য ভাষায় মা, স্ত্রী, এবং ইসলামকে গালি দেওয়া ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। স্ত্রী, মেয়ে, মাকে তুলে আনার হুমকি, ক্রসফায়ারের ভয়— এসব ছিল সাধারণ ব্যাপার।”

আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, এই ওবাইনের বিরুদ্ধে শত গুমের অভিযোগ থাকার পরেও, শাস্তি তো হয়নি— উল্টো তাকে ৩/৩/২৫ তারিখে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এডিসি আহমেদকে বদলি করা হয়েছে তার নিজ জেলায়।

অদ্ভুত সংস্কারের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে এই দেশ, হাসিনার ভাড়াটে কিলাররা পদোন্নতি পাচ্ছে। গুমের ভিক্টিমদের মামলা এখনো চলমান আছে।