সমাচার ডেস্ক
বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) ছাড়পত্র পেয়েও মালয়েশিয়া সরকারের বেঁধে দেয়া সময়ে দেশটিতে যেতে পারেননি বাংলাদেশের ১৬ হাজার ৯৭০ জন কর্মী। এত বিপুল সংখ্যক কর্মীর যেতে না পারার কারণ খুঁজে বের করতে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ছয় সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেছে। আজ রোববার (২ জুন) প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে সৃষ্ট সংকট প্রসঙ্গে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী এ তথ্য জানিয়েছেন।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী জানান, বিএমইটি ক্লিয়ারেন্স থাকা সত্ত্বেও শুক্রবার (৩১ মে) শেষ সময়ের পর ১৬ হাজার ৯৭০ জন বাংলাদেশি কর্মী মালয়েশিয়া যেতে পারেননি। এজন্য ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে। তিনি বলেন, আমরা কোনো সিন্ডিকেটে বিশ্বাস করি না। তদন্ত কমিটি কাউকে দোষী সাব্যস্ত করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরো জানান, প্রতারণায় জড়িতরা মন্ত্রী-এমপি হলেও ছাড় দেয়া হবে না।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় পাঁচ লাখ ২৬ হাজার ৬৭৬ জনকে অনুমোদন দিয়েছে। বিএমইটি চার লাখ ৯৩ হাজার ৬৪২ জনকে ছাড়পত্র দিয়েছে। এর মধ্যে ৩১ মে পর্যন্ত চার লাখ ৭৬ হাজার ৬৭২ জন মালয়েশিয়ায় গেছেন। এর মধ্যে ১৬ হাজার ৯৭০ জন কর্মী যেতে পারেননি।
চুক্তি ছিলো বাংলাদেশসহ ১৪ দেশের কোটা ছিলো। তালিকা অনুযায়ী মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছি। যারা যাবে, তাদের ব্যাপারে অ্যাডভার্টাইজমেন্ট দিয়েছি। বায়রার সঙ্গেও মিটিং করেছি। যারা কর্মী পাঠিয়েছে তারা যেন মানুষের লিস্ট তৈরি করে। তাহলে সে অনুযায়ী আমরা ফ্লাইটের ব্যবস্থা করবো। বায়রা কোনো লিস্ট দেয়নি। পরে সচিবের সঙ্গে কথা বলে ২১টি বিশেষ ফ্লাইট দিয়েছি।
এ অবস্থায় আমাদের অতিরিক্ত সচিব নুর মুহাম্মদ মাহবুবুল হককে প্রধান করে ছয় সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বিভিন্ন গণমাধ্যম সিন্ডিকেটের খবর পাওয়া যাচ্ছে। এই সিন্ডিকেট বন্ধে আপনারা কোনো পদক্ষেপ নেবেন কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা সিন্ডিকেট বিশ্বাস করি না। এখানে মালয়েশিয়া থেকে যারা নেবে তারা যদি তাদের পছন্দের এজেন্সি দ্বারা নিতে চায় সেটা তাদের ব্যাপার।
গণমাধ্যমে জানতে পেরেছি চারজন সংসদ সদস্য এ সিন্ডিকেটের মধ্যে আছে। তাদের এজেন্সিগুলো এ সিন্ডিকেটে রয়েছে। এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো এমপি সম্পর্কে জানি না। আমরা জানি, রিক্রুটিং এজেন্ট। এমপি জানারও কথা নয়, চেনারও কথা নয়। আমরা সিন্ডিকেটও বিশ্বাস করি না।’
যারা ক্ষতিগ্রস্ত তারা টাকা ফেরত পাবে কি না? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা হয়রানির শিকার হয়েছেন এ কমিটির কাছে যে কেউ অভিযোগ করতে পারবেন। যারা বেশি টাকা দিয়ে ভিসা নিয়েছেন, কেউ যদি বলে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে ভিসা নিয়েছেন। তারা এসে অভিযোগ করুক। তারা টাকা না পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বায়রা কেও জানিয়েছি, বায়রাও আমাদের আশ্বাস দিয়েছে। তারা যদি অভিযোগ করে বায়রা ও এজেন্সির ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবে।
মালয়েশিয়া আবারো শ্রমবাজার খুলবে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, শ্রমজার খোলার ব্যাপারে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আরো অন্যান্য দেশের জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। মালয়েশিয়ার কোম্পানি যে ৪৭টা কোম্পানিকে ব্ল্যাকলিস্ট করেছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব রুহুল আমীন বলেন, আমরা এই কমিটিতে এটাও রেখেছি যে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বা হয়রানির শিকার হয়েছেন তারা যদি কমিটির কাছে অভিযোগটি জানান তাহলে আমরা বিষয়টি দেখবো।
এদিকে, মালয়েশিয়া যেতে না পারা ও প্রতারণার শিকার কর্মীরা অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছে সিআইডি। ক্ষতিগ্রস্ত কোনো কর্মী মামলা করলে গুরুত্বসহকারে দেখা হবে বলেও জানান সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া।
তিনি বলেন, কেউ যদি মামলা করে তাহলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। শুধু মানবপাচার আইনে মামলা নয়, এর পাশাপাশি অন্য যে বিষয়গুলো আছে বেআইনিভাবে পাঠানো হয়েছে এবং বেআইনিভাবে টাকা আয় করে হস্তান্তর-রুপান্তর করেছে বা মানি লন্ডারিং হয়েছে সেগুলো আমরা মানি লন্ডারিংয়ের আওতায় নিয়ে আসবো।
এরআগে প্রতারণাসহ নানা অভিযোগে ২০১৮ সাল থেকে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া বন্ধ করে মালয়েশিয়া। ২০২২ সালে আবারও শ্রমবাজার খোলার পর চার লাখের বেশি বাংলাদেশি সেখানে গেছেন। সৌদি আরবের পর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার মালয়েশিয়া। বর্তমানে ১২ লাখের বেশি কর্মী রয়েছেন দেশটিতে।