ঢাকা ০৭:৪৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
বাকৃবিতে হল বন্ধের প্রতিবাদে বিক্ষোভ, ছয় দফা দাবি শিক্ষার্থীদের সেন্ট মার্টিনের ১৮ বাংলাদেশি জেলে মিয়ানমারের আরাকান আর্মির হাতে অপহৃত চবি ক্যাম্পাসে সংঘর্ষের পর ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ, সুনসান পরিবেশ আফগানিস্তানে শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহত বেড়ে ৫০০; আহত সহস্রাধিক যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ১০ মিনিট বন্ধ ছিল মেট্রোরেল, পরে আবার চালু ডাকসু নির্বাচন: শতবর্ষে মাত্র ৩৭ বার, স্বাধীনতার পর ৭ বার। মেসির ইন্টার মায়ামিকে স্তব্ধ করে লিগস কাপের চ্যাম্পিয়ন সিয়াটেল, ৩-০ গোলে হার জুলাই গণহত্যা মামলায় শেখ হাসিনাসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে আজ দশম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ, হাজির সাবেক আইজিপিও মাগুরার সাবেক এমপি শিখরের ভাই আশরাফুজ্জামান চুয়াডাঙ্গায় গ্রেপ্তার। উত্তর–দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দ্বন্দ্বে মর্গে জমছে বেওয়ারিশ লাশ

মেধাবী মামুন আল মুজাহিদ থেকে কিলার সুমন হওয়ার পিছনের গল্প।

মোঃ আবু সালেহ,গাজীপুর শ্রীপুর।
  • আপডেট সময় : ০৫:৩২:৪৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২৭ বার পড়া হয়েছে
আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার শিলাসী গ্রামের মাইজভান্ডারি মতাদর্শের অনুসারী সোহেল রানা। তিনি গ্রামেগঞ্জে ঘুরে ঘুরে কবিরাজি করতেন। মাজারে মাজারে ঘুরে দিনাতিপাত করতেন। ২০২০ সালের ১৩ই সেপ্টেম্বর সোহেলকে একটি ইটভাটায় ডেকে নিয়ে যায় সুমন ও তার দলবল। প্রথমে শরবতের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু শরবত খাওয়াতে ব্যর্থ হলে সন্ত্রাসী সুমন ধারালো অস্ত্র দিয়ে নিজ হাতেই জবাই করেন সোহেলকে। এমনকি সোহেলের লাশকে খন্ড খন্ড করে এই সুমন গ্যাং।

এখানেই শেষ নয়। সোহেলকে জবাইয়ের দৃশ্য ধারণ করা হয় তাদেরই মোবাইল ফোনে। পরে তাঁর খণ্ডিত লাশ বস্তায় ভরে নৌকায় তুলে নেওয়া হয় কাপাসিয়া ব্রিজ এলাকায়। নাড়িভুঁড়ি বের করে পাথর বেঁধে মরদেহ ফেলা হয় শীতলক্ষ্যায়। এরপর থেকে সুমনের সন্ত্রাসী হওয়ার পথ প্রসারিত হতে থাকে। সুমন থেকে সুমন বাহিনী ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে বরমীসহ আশপাশের এলাকায়।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের নান্দিয়া সাঙ্গুন গ্রামের ত্রিমোহনী ব্রিজ এলাকা থেকে সন্ত্রাসী সুমনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

কিন্তু রাস্তায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর কয়েক দফা হামলা চালিয়ে পুলিশের ব্যবহৃত দুটি গাড়ি ভাঙচুর করে সন্ত্রাসীরা ছিনিয়ে নেয় সুমনকে। এ সময় আহত হয় কমপক্ষে পুলিশের সাত সদস্য। এরপর নতুন করে আলোচনায় আসেন সন্ত্রাসী সুমন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সন্ত্রাসী মামুন আল মোজাহিদ ওরফে সুমন (৩২) গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের পাঠানটেক গ্রামের মো. মোসলেম উদ্দিন মাস্টারের ছেলে। সন্ত্রাসী সুমন বরমী ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। ঢাকার তিতুমীর কলেজ থেকে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। যথেষ্ট মেধাবী হওয়ায় বন্ধুবান্ধব ও সহপাঠীর অভাব ভোদ করতে হয়নি কখনো। এমনকি সন্ত্রাসী কাজেও অল্প দিনে বিরাট এক গ্যাং তৈরী করতে তাকে খুব বেশি মেহনতও করতে হয়নি।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সন্ত্রাসী সুমন পল্টনে বোমা হামলা ও মাইজভান্ডারি সোহেল রানা হত্যায় জড়িত। মিরপুরে একটি অস্ত্র মামলা রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এ ছাড়া তাঁর নামে চাঁদাবাজি, ডাকাতি, লুট, অস্ত্র মামলাসহ ডজনখানেক মামলা রয়েছে দেশের বিভিন্ন থানায়।
সোহেল হত্যার একটি ভিডিও জঙ্গি গোষ্ঠীর সাইডে পোস্ট করার পরপরই পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) সুমনের বিষয়ে অনুসন্ধান চালায়। ২০২০ সালের ১১ সেপ্টেম্বর উত্তরার আজমপুর থেকে সুমনসহ চার সন্ত্রাসীকে জঙ্গি সন্দেহে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি। গ্রেপ্তারের পর পল্টনে বোমা হামলা ও সোহেলকে হত্যার কথা স্বীকার করেন সন্ত্রাসী সুমন। তবে অজানা শক্তির প্রভাবে খুব বেশি দিন আটকে রাখা যায়নি তাঁকে।

জামিনে মুক্ত হয়ে আবারও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করেন সুমন। ২০২৪ সালে শ্রীপুরের যুবলীগ নেতা ফয়সাল আবেদীনকে তুলে নিয়ে ১০ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে পাশবিক নির্যাতন করেন। এরপর ফয়সালের হাতে পিস্তল ধরিয়ে দিয়ে ভিডিও ধারণ করেন। এ ছাড়াও বরমী বাজারের মানিক সাহা নামের এক ব্যক্তির ৩০ কোটি টাকা মূল্যের জমি দখল করেন সুমন পরিবার এ ছাড়া বরমী বাজারের সরকারি জমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। একই সঙ্গে বিভিন্ন বালুমহল, জবরদখলের মতো গুরুতর অভিযোগও রয়েছে সুমন বাহিনীর বিরুদ্ধে। এ ছাড়াও মাদকের সবচেয়ে বড় গডফাদার সুমনের সন্ত্রাসী বাহিনী। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর জেল থেকে জামিনে বের হয়ে পুনরায় কায়েম করেন ত্রাসের রাজত্ব। তবে আগে কিছুটা গোপনে সন্ত্রাসী কাজ পরিচালনা করলেও জুলাই বিপ্লবের তা শুরু হয় প্রকাশ্যে। এমনকি তাদের সন্ত্রাসী কাজকে সামাজিক সেবামূলক কাজ বলেও প্রচার করতেন সুমন বাহিনী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভুক্তভোগী বলেন, সুমন বাহিনীর নজর যার দিকে পড়ে তার কপালে কী আছে তা শুধু আল্লাহই ভালো জানেন। যাকে টার্গেট করে সেই ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় শীতলক্ষ্যায় নৌকায় অথবা কাওরাইদ ইউনিয়নের নান্দিয়া সাঙ্গুন গ্রামের ত্রিমোহনী এলাকার কলাবাগানে, অথবা পাইটালবাড়ি এলাকার শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে নির্জন স্থানে। সেখানে নিয়ে শুরু হয় পাশবিক নির্যাতন। এরপর দাবি করা হয় মোটা অঙ্কের টাকা। না দিলে পিস্তল বা মাদক হাতে দিয়ে স্কিপ অনুযায়ী ধারণ করা হয় ভিডিও।

এদিকে সন্ত্রাসী সুমনকে পুলিশের হাত থেকে কেড়ে নেওয়ার ঘটনায় প্রতিবাদ মিছিল করেছে স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াতসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক সংগঠন। শ্রীপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল মোতালেব বলেন, ‘একজন শীর্ষ সন্ত্রাসীকে পুলিশের গাড়ি থেকে কী করে ছিনিয়ে নেওয়া হলো। এখানে পুলিশের গাফিলতি রয়েছে। আমরা চাই আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যেন আসামি পুলিশ হেফাজতে থাকে। কোনো সন্ত্রাসীর জায়গা শ্রীপুরে হবে না।’

শ্রীপুর উপজেলা জামায়াতের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘এটা কেমন কথা, একজন শীর্ষ সন্ত্রাসী—যার ভয়ে আশপাশের জনপদের মানুষ আতঙ্কে থাকে, তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করল। পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে সেই সন্ত্রাসীকে ছিনিয়ে নেওয়া হলো! তাহলে জনগণের নিরাপত্তা কোথায়?’ এখানে পুলিশের স্পষ্ট গাফলতি আছে বলেও এ নেতা দাবী করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গাজীপুরের পুলিশ সুপার চৌধুরী মো. যাবের সাদেক গণমাধমকে বলেন, ‘যার বিরুদ্ধে এত মামলা থাকে, নিশ্চয়ই সে বড় সন্ত্রাসী। সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তারের পর ছিনিয়ে নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি। আমরা এ বিষয়ে কাজ করছি। এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলার প্রমাণ পেয়েছি। এটা আরও বাড়তে পারে।’ আই নিওজ বিডিকে আশ্বস্ত করে এ কর্মকর্তা বলেন, প্রয়োজনে আইনের সর্বৌচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে হলেও এ সন্ত্রাসীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসবে গাজীপুর শ্রীপুরের প্রশাসন।

মোঃ আবু সালেহ
গাজীপুর শ্রীপুর।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

মেধাবী মামুন আল মুজাহিদ থেকে কিলার সুমন হওয়ার পিছনের গল্প।

আপডেট সময় : ০৫:৩২:৪৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার শিলাসী গ্রামের মাইজভান্ডারি মতাদর্শের অনুসারী সোহেল রানা। তিনি গ্রামেগঞ্জে ঘুরে ঘুরে কবিরাজি করতেন। মাজারে মাজারে ঘুরে দিনাতিপাত করতেন। ২০২০ সালের ১৩ই সেপ্টেম্বর সোহেলকে একটি ইটভাটায় ডেকে নিয়ে যায় সুমন ও তার দলবল। প্রথমে শরবতের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু শরবত খাওয়াতে ব্যর্থ হলে সন্ত্রাসী সুমন ধারালো অস্ত্র দিয়ে নিজ হাতেই জবাই করেন সোহেলকে। এমনকি সোহেলের লাশকে খন্ড খন্ড করে এই সুমন গ্যাং।

এখানেই শেষ নয়। সোহেলকে জবাইয়ের দৃশ্য ধারণ করা হয় তাদেরই মোবাইল ফোনে। পরে তাঁর খণ্ডিত লাশ বস্তায় ভরে নৌকায় তুলে নেওয়া হয় কাপাসিয়া ব্রিজ এলাকায়। নাড়িভুঁড়ি বের করে পাথর বেঁধে মরদেহ ফেলা হয় শীতলক্ষ্যায়। এরপর থেকে সুমনের সন্ত্রাসী হওয়ার পথ প্রসারিত হতে থাকে। সুমন থেকে সুমন বাহিনী ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে বরমীসহ আশপাশের এলাকায়।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের নান্দিয়া সাঙ্গুন গ্রামের ত্রিমোহনী ব্রিজ এলাকা থেকে সন্ত্রাসী সুমনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

কিন্তু রাস্তায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর কয়েক দফা হামলা চালিয়ে পুলিশের ব্যবহৃত দুটি গাড়ি ভাঙচুর করে সন্ত্রাসীরা ছিনিয়ে নেয় সুমনকে। এ সময় আহত হয় কমপক্ষে পুলিশের সাত সদস্য। এরপর নতুন করে আলোচনায় আসেন সন্ত্রাসী সুমন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সন্ত্রাসী মামুন আল মোজাহিদ ওরফে সুমন (৩২) গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের পাঠানটেক গ্রামের মো. মোসলেম উদ্দিন মাস্টারের ছেলে। সন্ত্রাসী সুমন বরমী ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। ঢাকার তিতুমীর কলেজ থেকে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। যথেষ্ট মেধাবী হওয়ায় বন্ধুবান্ধব ও সহপাঠীর অভাব ভোদ করতে হয়নি কখনো। এমনকি সন্ত্রাসী কাজেও অল্প দিনে বিরাট এক গ্যাং তৈরী করতে তাকে খুব বেশি মেহনতও করতে হয়নি।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সন্ত্রাসী সুমন পল্টনে বোমা হামলা ও মাইজভান্ডারি সোহেল রানা হত্যায় জড়িত। মিরপুরে একটি অস্ত্র মামলা রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এ ছাড়া তাঁর নামে চাঁদাবাজি, ডাকাতি, লুট, অস্ত্র মামলাসহ ডজনখানেক মামলা রয়েছে দেশের বিভিন্ন থানায়।
সোহেল হত্যার একটি ভিডিও জঙ্গি গোষ্ঠীর সাইডে পোস্ট করার পরপরই পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) সুমনের বিষয়ে অনুসন্ধান চালায়। ২০২০ সালের ১১ সেপ্টেম্বর উত্তরার আজমপুর থেকে সুমনসহ চার সন্ত্রাসীকে জঙ্গি সন্দেহে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি। গ্রেপ্তারের পর পল্টনে বোমা হামলা ও সোহেলকে হত্যার কথা স্বীকার করেন সন্ত্রাসী সুমন। তবে অজানা শক্তির প্রভাবে খুব বেশি দিন আটকে রাখা যায়নি তাঁকে।

জামিনে মুক্ত হয়ে আবারও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করেন সুমন। ২০২৪ সালে শ্রীপুরের যুবলীগ নেতা ফয়সাল আবেদীনকে তুলে নিয়ে ১০ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে পাশবিক নির্যাতন করেন। এরপর ফয়সালের হাতে পিস্তল ধরিয়ে দিয়ে ভিডিও ধারণ করেন। এ ছাড়াও বরমী বাজারের মানিক সাহা নামের এক ব্যক্তির ৩০ কোটি টাকা মূল্যের জমি দখল করেন সুমন পরিবার এ ছাড়া বরমী বাজারের সরকারি জমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। একই সঙ্গে বিভিন্ন বালুমহল, জবরদখলের মতো গুরুতর অভিযোগও রয়েছে সুমন বাহিনীর বিরুদ্ধে। এ ছাড়াও মাদকের সবচেয়ে বড় গডফাদার সুমনের সন্ত্রাসী বাহিনী। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর জেল থেকে জামিনে বের হয়ে পুনরায় কায়েম করেন ত্রাসের রাজত্ব। তবে আগে কিছুটা গোপনে সন্ত্রাসী কাজ পরিচালনা করলেও জুলাই বিপ্লবের তা শুরু হয় প্রকাশ্যে। এমনকি তাদের সন্ত্রাসী কাজকে সামাজিক সেবামূলক কাজ বলেও প্রচার করতেন সুমন বাহিনী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভুক্তভোগী বলেন, সুমন বাহিনীর নজর যার দিকে পড়ে তার কপালে কী আছে তা শুধু আল্লাহই ভালো জানেন। যাকে টার্গেট করে সেই ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় শীতলক্ষ্যায় নৌকায় অথবা কাওরাইদ ইউনিয়নের নান্দিয়া সাঙ্গুন গ্রামের ত্রিমোহনী এলাকার কলাবাগানে, অথবা পাইটালবাড়ি এলাকার শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে নির্জন স্থানে। সেখানে নিয়ে শুরু হয় পাশবিক নির্যাতন। এরপর দাবি করা হয় মোটা অঙ্কের টাকা। না দিলে পিস্তল বা মাদক হাতে দিয়ে স্কিপ অনুযায়ী ধারণ করা হয় ভিডিও।

এদিকে সন্ত্রাসী সুমনকে পুলিশের হাত থেকে কেড়ে নেওয়ার ঘটনায় প্রতিবাদ মিছিল করেছে স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াতসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক সংগঠন। শ্রীপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল মোতালেব বলেন, ‘একজন শীর্ষ সন্ত্রাসীকে পুলিশের গাড়ি থেকে কী করে ছিনিয়ে নেওয়া হলো। এখানে পুলিশের গাফিলতি রয়েছে। আমরা চাই আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যেন আসামি পুলিশ হেফাজতে থাকে। কোনো সন্ত্রাসীর জায়গা শ্রীপুরে হবে না।’

শ্রীপুর উপজেলা জামায়াতের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘এটা কেমন কথা, একজন শীর্ষ সন্ত্রাসী—যার ভয়ে আশপাশের জনপদের মানুষ আতঙ্কে থাকে, তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করল। পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে সেই সন্ত্রাসীকে ছিনিয়ে নেওয়া হলো! তাহলে জনগণের নিরাপত্তা কোথায়?’ এখানে পুলিশের স্পষ্ট গাফলতি আছে বলেও এ নেতা দাবী করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গাজীপুরের পুলিশ সুপার চৌধুরী মো. যাবের সাদেক গণমাধমকে বলেন, ‘যার বিরুদ্ধে এত মামলা থাকে, নিশ্চয়ই সে বড় সন্ত্রাসী। সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তারের পর ছিনিয়ে নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি। আমরা এ বিষয়ে কাজ করছি। এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলার প্রমাণ পেয়েছি। এটা আরও বাড়তে পারে।’ আই নিওজ বিডিকে আশ্বস্ত করে এ কর্মকর্তা বলেন, প্রয়োজনে আইনের সর্বৌচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে হলেও এ সন্ত্রাসীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসবে গাজীপুর শ্রীপুরের প্রশাসন।

মোঃ আবু সালেহ
গাজীপুর শ্রীপুর।