সমাচার ডেস্ক
জ্যৈষ্ঠের শুরুতে গুটি আম পাড়ার মধ্য দিয়ে রাজশাহী জেলার আম সংগ্রহ ও বাজারজাতকরণ শুরু হচ্ছে। আজ বুধবার (১৫ মে) থেকে জেলা প্রশাসন ঘোষিত ম্যাংগো ক্যালেন্ডার অনুযায়ী আম বাজারজাত করণ চলবে। সকাল থেকে রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা আম নামানো শুরু করেছেন। তবে আমেরে প্রধান বাজার বানেশ্বর এখনো ফাঁকা। এ বাজার জমতে শুরু হতে অপেক্ষা করতে হবে ২৫ মে পর্যন্ত। কিন্তু আম ভালোভাবে পরিপক্ক না হওয়ায় সব বাগানে আম পাড়া শুরু হয়নি।
জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, ম্যাংগো ক্যালেন্ডার অনুযায়ী আজ (বুধবার) থেকে সব ধরনের গুটি, ২৫ মে থেকে গোপালভোগ-রানিপছন্দ, ৩০ মে থেকে খিরসাপাত, ২৫ মে থেকে লক্ষণভোগ-লখনা, ১০ জুন থেকে ল্যাংড়া-ব্যানানা ম্যাংগো, ১৫ জুন থেকে আম্রপালি, ১৫ জুন থেকে ফজলি, ৫ জুলাই থেকে বারি আম ৪, ১০ জুলাই থেকে আশ্বিনা, ১৫ জুলাই থেকে গৌড়মতি, ২০ আগস্ট থেকে ইলামতি এবং কাটিমন ও বারিআম-১১ সারা বছর সংগ্রহ করা যাবে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এ বছর রাজশাহী জেলায় ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে আম চাষ হচ্ছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা দুই লাখ ৬০ হাজার ১৬৪ মেট্রিক টন।
এদিকে ম্যাংগো ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে পরিপক্ব আম কৃষক ও ব্যবসায়ীদের আম বাজারজাত করার অনুরোধ জানান জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ। সেই লক্ষে সকাল থেকেই বেধে দেয়া সময়ে আম সংগ্রহ শুরু করেছেন জেলার আম চাষিরা। তবে শুরুর দিনে তেমন আম ভাঙেনি কেউ। কিছু কিছু চাষি অল্প পরিসরে গুঁটি আশ সংগ্রহ করেছেন। এসব আমের দাম বেশে ভালো পেয়ে খুশি চাষিরা।
রাজশাহীর পবা এলাকার চাষি আনোয়ারুল হক প্রথম দিনে আম সংগ্রহ শুরু করেছেন। তিনি বলেন, এবার আমের দাম বেশ ভালো হবে। চলতি বছরের আম সংগ্রহ শুরু করেছি। শুরুর দিনে গুঁটি আম সংগ্রহ করছি। এসব আম এখন পরিপক্ব হয়েছে। তাই সংগ্রহ করা যাবে। এজন্য নির্ধারিত তারিখ মেনে সংগ্রহ শুরু করেছি।
রাজশাহীর বানেশ্বর এলাকার চাষি রাজিব হোসেন বলেন, এবার বৃষ্টি কম। আমও কম। তবে যা আম আছে এতে করে আশ্বিনা ও আমরুপালি বেশি। এসব আমে দাম বেশি হবে। তিনি বলেন, আজ থেকে গুটি আমের সংগ্রহ শুরু হয়েছে। আজ সকালে দুইটা গাছের আম সংগ্রহ করছি। এসব গুটি জাতের আম। এগুলো আচারের জন্যই বেশি ব্যবহার হয়। তবে কিছু আম আড়তে বিক্রি করবো। এসব আম অন্তত ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা মন হিসেবে বিক্রি হবে। গতবার এ আম ৬০০ থেকে ৮০০ টাকার বিক্রি করেছি।
নগরীর জিন্নানগর এলাকার বাগান মালিক আনোয়ারুল হক জানান, এখেনো পুরোপুরি পরিপক্ক না হওয়ায় পুরোদমে আমপাড়া শুরু হতে আরেক কয়েকদিন সময় লাগবে। তবে যেসব গাছের আমগুলো পরিপক্ক হয়েছে শুধু সেগুলোই বেছে বেছে পাড়া হয়েছে প্রথম দিন। এবার গাছে মাত্র ২৫ থেকে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ আম টিকে আছে। তিনি বলেন, এবার আমের মুকুল ভালোই এসেছিলো। কিন্তু ফাল্গুনে একটানা বৃষ্টি হবার ফলে মুকুল নষ্ট হয়ে যায়। তবে দেরিতে যে মুকুলগুলো এসেছিল এখন সেগুলোর আম টিকে আছে। এর মধ্যে গরমের কারণেও কিছু আম পড়ে গেছে।
বানেশ্বর হাট ইজারাদার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এখনো হাট জমে উঠেনি। আজ থেকেই বাজারজাত শুরু হবে। তবে গুটি আমে বাজার জমে উঠবে না। মূল বাজার জমে উঠতে গোপালভোগ আম বাজারে আসতে হবে। সেই লক্ষ্যে ২৫ মে পর্যন্ত বাজার জমে উঠবে না। এরপর থেকেই বাজার জমে উঠবে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) উম্মে সালমা বলেন, রাজশাহী জেলা প্রশাসন থেকে আম সংগ্রহ ও বাজারজাত করার দিনক্ষণ নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী বুধবার থেকে গুটি জাতের নাম নামানো শুরু হয়েছে। আর গোপালভোগ, লক্ষণভোগ, লখনা ও রাণীপছন্দ আম ২৫ মে থেকে, হিমসাগর ও খিরসাপাত ৩০ মে, ল্যাংড়া ও ব্যানানা আম ১০ জুন, আম্রপালি ও ফজলি আম ১৫ জুন থেকে পাড়া যাবে। এছাড়াও আশ্বিনা ১০ জুলাই ও গৌড়মতি ১৫ জুলাই থেকে পাড়তে পারবেন বাগান মালিকরা। তিনি বলেন, রাজশাহীতে এ বছর আমের আবাদ হয়েছে ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে। এখন থেকে আম উৎপাদন লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে উৎপাদন ২ লাখ ৬০ হাজার ৩১৫ টন। তবে এবার লক্ষ্যমাত্রা পুরণ না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।