ঢাকা ০২:০৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫, ৮ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভুল চিকিৎসায় শিশুর মৃত্যু।

সাভারে ভুল চিকিৎসায় শিশুর মৃত্যুতে মামলা দায়ের।

জাহাঙ্গীর হোসেন সাগর(সাভার)প্রতিনিধি।
  • আপডেট সময় : ১১:৩২:১২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫ ১৬ বার পড়া হয়েছে
আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সাভারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় রাতুল (১৩) নামে এক কিশোরের মৃত্যুর ঘটনায় দুই চিকিৎসকসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে ভুক্তভোগীর পরিবার। মামলার পর থেকে আসামিরা পলাতক রয়েছেন।

বুধবার (২০ আগস্ট) বিকেলে সাভার মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন রাতুলের বাবা জাহিদুর রহমান (৪২)। মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাভার মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি) মো. জুয়েল মিঞা। এর আগে গত ১৮ আগস্ট সাভারের স্পেশালাইজড হাসপাতালে রাতুলের টনসিলের অপারেশন হলে চিকিৎসকের অবহেলায় তার মৃত্যু হয়। 

মৃত রাতুল (১৩) মানিকগঞ্জ জেলা সদরের কসবা এলাকার জাহিদুর রহমানের ছেলে।

মামলার আসামিরা হলেন- ডাক্তার আসিফ আল মেহেদী ওরফে অনিক (ইএনটি) (৪৫), ডাক্তার শাজাহান (৪৫) (এনেস্থিসিয়া), মানিকগঞ্জ জেলা সদরের চান্দিরচর এরাকান তমেজ মুহরির ছেলে ও সাভার স্পেশালাইজড হাসপাতাল পরিচালনা কর্তৃপক্ষ শামীম আহম্মেদ (৫২), মানিকগঞ্জ জেলার সিঙ্গাইর থানার মজলিসপুর গ্রামের শহীদ মফিজ উদ্দিনের ছেলে ও হাসপাতাল পরিচালনা কর্তৃপক্ষ মোঃ বাবুল (৬৫), হাসপাতাল পরিচালনা কর্তৃপক্ষ আসাদ (৪৫) সহ অজ্ঞাত নামা ডাক্তার ও নার্সরা। 

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, বিবাদী শামীম ভুক্তভোগী পরিবারের পূর্ব পরিচিত হওয়ায় ছেলের সমস্যার কথা খুলে বলেন বাবা জাহিদ। তিনি ছেলের চিকিৎসার জন্য সাভার স্পেশালাইজড হাসপাতালে নিতে বলেন। তার কথা অনুযায়ী গত ১৮ আগস্ট ছেলে রাতুলকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করেন তিনি। দুপুর আড়াইটার দিকে  দায়িত্ব থাকা লোকজনদের সাথে কথা বলে ডাক্তারের মাধ্যমে পরীক্ষা নিরীক্ষা করাতে বলেন শামীম। পরে হাসপাতাল কতৃপক্ষ অপারেশন করতে হবে বলে জানায়।

রাতুলের বাবা জাহিদুর রহমান বলেন, আমার ছেলের পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর আমার ছেলের রিপোর্ট আমাকে দেয়নি। ডাক্তার ঠিকমত রিপোর্ট দেখছে কিনা সেটাও জানায়নি। আমাকে কিছুই না জানিয়ে শামীম আহম্মেদ হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটর রুমে আমার ছেলেকে নিয়ে যায়। রাত ১১ টার দিকে আমার ছেলেকে অজ্ঞান অবস্থায় অপারেশন থিয়েটর থেকে কেবিনে নিয়ে গিয়ে অক্সিজেন লাগায়। কিছুক্ষন পর ছেলের নাক দিয়ে রক্ত আসে। আমার ছেলের অক্সিজেন সরবরাহও বন্ধ ছিল। এসময় হাসপাতালের স্টাফদের বারবার বলার পরও তারা আমার ছেলের কাছে আসে নাই। আমার ছেলের অক্সিজেন বন্ধ থাকায় আমরা পুনরায় ডাক্তার নার্সদের ডাকাডাকি করিলে কেউ আসে নি। অনেকক্ষণ পর আমার ছেলেকে পুনরায় অপারেশন থিয়েটরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে শামীম আমাকে বলে আমার ছেলেকে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।পরে সমস্ত টেস্টের কাগজ নিয়ে এনাম মেডিকেল কলেজে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আমার ছেলেকে মৃত ঘোষণা করেন।

তিনি আরও বলেন, পরবর্তীতে টেস্টগুলো পর্যবেক্ষন করে জানতে পারি, আমার ছেলের ইসিজি রিপোর্টে (Incomplete Right Bundle Branch Block) আছে। এই অবস্থায় রোগীকে কোন অবস্থায় অপারেশন করানো যাবেনা এবং কার্ডিওলজী স্পেশালিষ্ট ডাক্তারের কাছে রেফার করতে হবে এবং তার পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। ওই হাসপাতালে রোগীকে অপারেশন করার পর আইসিইউ (ICU) না থাকায় সরাসরি কেবিনে হস্তান্তর করা হয়। আমরা মৃত ছেলেকে নিয়ে সাভার স্পেশালাইজড হাসপাতালে গেলে অবহেলার কথা জিজ্ঞাস করলে তারা বিষয়টি এড়িয়ে যায়। এছাড়া  আমার ও আমার স্ত্রীর উপর অর্তিকিত হামলা করে প্রাণ নাশের হুমকি দেয়। সাভার স্পেশালাইজড হাসপাতালে  বিবাদীরা পরস্পর যোগসাজশে চিকিৎসায় অবহেলা করে আমার ছেলের মৃত্যু ঘটায়। 

সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুয়েল মিঞা  বলেন, হাসপাতালে অবহেলাজনিত কারনে মৃত্যুর ঘটনায় মৃতের বাবা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। এব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

ভুল চিকিৎসায় শিশুর মৃত্যু।

সাভারে ভুল চিকিৎসায় শিশুর মৃত্যুতে মামলা দায়ের।

আপডেট সময় : ১১:৩২:১২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫

সাভারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় রাতুল (১৩) নামে এক কিশোরের মৃত্যুর ঘটনায় দুই চিকিৎসকসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে ভুক্তভোগীর পরিবার। মামলার পর থেকে আসামিরা পলাতক রয়েছেন।

বুধবার (২০ আগস্ট) বিকেলে সাভার মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন রাতুলের বাবা জাহিদুর রহমান (৪২)। মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাভার মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি) মো. জুয়েল মিঞা। এর আগে গত ১৮ আগস্ট সাভারের স্পেশালাইজড হাসপাতালে রাতুলের টনসিলের অপারেশন হলে চিকিৎসকের অবহেলায় তার মৃত্যু হয়। 

মৃত রাতুল (১৩) মানিকগঞ্জ জেলা সদরের কসবা এলাকার জাহিদুর রহমানের ছেলে।

মামলার আসামিরা হলেন- ডাক্তার আসিফ আল মেহেদী ওরফে অনিক (ইএনটি) (৪৫), ডাক্তার শাজাহান (৪৫) (এনেস্থিসিয়া), মানিকগঞ্জ জেলা সদরের চান্দিরচর এরাকান তমেজ মুহরির ছেলে ও সাভার স্পেশালাইজড হাসপাতাল পরিচালনা কর্তৃপক্ষ শামীম আহম্মেদ (৫২), মানিকগঞ্জ জেলার সিঙ্গাইর থানার মজলিসপুর গ্রামের শহীদ মফিজ উদ্দিনের ছেলে ও হাসপাতাল পরিচালনা কর্তৃপক্ষ মোঃ বাবুল (৬৫), হাসপাতাল পরিচালনা কর্তৃপক্ষ আসাদ (৪৫) সহ অজ্ঞাত নামা ডাক্তার ও নার্সরা। 

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, বিবাদী শামীম ভুক্তভোগী পরিবারের পূর্ব পরিচিত হওয়ায় ছেলের সমস্যার কথা খুলে বলেন বাবা জাহিদ। তিনি ছেলের চিকিৎসার জন্য সাভার স্পেশালাইজড হাসপাতালে নিতে বলেন। তার কথা অনুযায়ী গত ১৮ আগস্ট ছেলে রাতুলকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করেন তিনি। দুপুর আড়াইটার দিকে  দায়িত্ব থাকা লোকজনদের সাথে কথা বলে ডাক্তারের মাধ্যমে পরীক্ষা নিরীক্ষা করাতে বলেন শামীম। পরে হাসপাতাল কতৃপক্ষ অপারেশন করতে হবে বলে জানায়।

রাতুলের বাবা জাহিদুর রহমান বলেন, আমার ছেলের পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর আমার ছেলের রিপোর্ট আমাকে দেয়নি। ডাক্তার ঠিকমত রিপোর্ট দেখছে কিনা সেটাও জানায়নি। আমাকে কিছুই না জানিয়ে শামীম আহম্মেদ হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটর রুমে আমার ছেলেকে নিয়ে যায়। রাত ১১ টার দিকে আমার ছেলেকে অজ্ঞান অবস্থায় অপারেশন থিয়েটর থেকে কেবিনে নিয়ে গিয়ে অক্সিজেন লাগায়। কিছুক্ষন পর ছেলের নাক দিয়ে রক্ত আসে। আমার ছেলের অক্সিজেন সরবরাহও বন্ধ ছিল। এসময় হাসপাতালের স্টাফদের বারবার বলার পরও তারা আমার ছেলের কাছে আসে নাই। আমার ছেলের অক্সিজেন বন্ধ থাকায় আমরা পুনরায় ডাক্তার নার্সদের ডাকাডাকি করিলে কেউ আসে নি। অনেকক্ষণ পর আমার ছেলেকে পুনরায় অপারেশন থিয়েটরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে শামীম আমাকে বলে আমার ছেলেকে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।পরে সমস্ত টেস্টের কাগজ নিয়ে এনাম মেডিকেল কলেজে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আমার ছেলেকে মৃত ঘোষণা করেন।

তিনি আরও বলেন, পরবর্তীতে টেস্টগুলো পর্যবেক্ষন করে জানতে পারি, আমার ছেলের ইসিজি রিপোর্টে (Incomplete Right Bundle Branch Block) আছে। এই অবস্থায় রোগীকে কোন অবস্থায় অপারেশন করানো যাবেনা এবং কার্ডিওলজী স্পেশালিষ্ট ডাক্তারের কাছে রেফার করতে হবে এবং তার পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। ওই হাসপাতালে রোগীকে অপারেশন করার পর আইসিইউ (ICU) না থাকায় সরাসরি কেবিনে হস্তান্তর করা হয়। আমরা মৃত ছেলেকে নিয়ে সাভার স্পেশালাইজড হাসপাতালে গেলে অবহেলার কথা জিজ্ঞাস করলে তারা বিষয়টি এড়িয়ে যায়। এছাড়া  আমার ও আমার স্ত্রীর উপর অর্তিকিত হামলা করে প্রাণ নাশের হুমকি দেয়। সাভার স্পেশালাইজড হাসপাতালে  বিবাদীরা পরস্পর যোগসাজশে চিকিৎসায় অবহেলা করে আমার ছেলের মৃত্যু ঘটায়। 

সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুয়েল মিঞা  বলেন, হাসপাতালে অবহেলাজনিত কারনে মৃত্যুর ঘটনায় মৃতের বাবা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। এব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।