স্পোর্টস ডেস্ক
অবশেষে জয়, বহুল কাঙ্ক্ষিত জয় ধরা দিলো বাংলাদেশ দলের হাতে। এর আগে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দুইবার শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হয়ে টাইগাররা জয়ের দেখা পায়নি। দুই দলের সর্বশেষ সিরিজও ২-১ ব্যবধানে গেছে লঙ্কানদের পকেটে। তার ওপর বাংলাদেশ সাম্প্রতিক সময়ে সহযোগী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সিরিজ হেরে কিছুটা ব্যাকফুটে। আজও লঙ্কানদের বিপক্ষে ম্যাচটা কঠিন করে তোলেন টপ অর্ডাররা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হতে দেননি ক্রিজে থাকা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। আরেকবার ডুবতে বসা বাংলাদেশের ত্রাতা হয়ে উঠলেন তিনি। তার বুড়ো হাড়ের ভেলকিতে শ্রীলঙ্কাকে কাঁদিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে জয় তুলে নিয়েছে টাইগাররা।।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ মানেই বাড়তি উত্তেজনা। চলতি বিশ্বকাপে এই দুই দলের আরো একটি শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচ দেখলো ক্রিকেটবিশ্ব। আজ শনিবার (৮ জুন) ডালাসের গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার দেয়া ১২৫ রানের লক্ষ্য ২ উইকেট হাতে রেখে জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ।
যদিও শ্রীলঙ্কার দেয়া ১২৫ রানের সহজ লক্ষ তাড়া করতে নেমে ১১৩ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। এরপর মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে ভর করে জয়ের দুয়ারে পৌঁছে টাইগাররা।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে টাইগার বোলারদের বোলিং তোপে ১২৪ রান তুলতে সক্ষম হয় শ্রীলঙ্কা। ১২৫ রানের সহজ লক্ষ্যে ব্যাট কতে নেমে ২৮ রানেই বাংলাদেশের তিন টপ অর্ডার ফিরে যান সাজঘরে। এরপরেই জুটি গড়ে দলকে বিপর্যয় থেকে টেনে তুলেন তাওহীদ হৃদয় ও লিটন দাস। চতুর্থ উইকেটে এই জুটির ৬৩ রানে ভর করে জয়ের দ্বারপ্রান্তে চলে যায় বাংলাদেশ। এই জুটি ভাঙার পর বাংলাদেশ দ্রুত আরও চার উইকেট হারালেও অভিজ্ঞ মাহামুদউল্লাহর ব্যাটিং দৃঢ়তায় জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের হয়ে আজ ওপেনিংয়ে নামেন তানজিদ হাসান ও সৌম্য সরকার। তবে নিজেদের জুটিকে বেশি দূর নিয়ে যেতে পারেননি তারা। ইনিংসের প্রথম ওভারেই ভেঙে যায় এই জুটি। ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার বলে মিড অনে ওয়ানিন্দু হাসরাঙ্গার হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফিরে যান সৌম্য সরকার। তর বিদায়ে ১ রানেই প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
সৌম্যের বিদায়ের পর সাজঘরে ফিরে যান আরেক ওপেনার তানজিদ হাসানও। নুয়ান থুসারার বলে বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান তানজিদ। তার বিদায়ে ৬ রানেই ২ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
৬ রানে ২ উইকেট হারানোর পর জুটি গড়েন লিটন দাস ও নাজমুল হোসেন শান্ত। তবে তারাও ব্যর্থ হন নিজেদের জুটিকে বেশিদূর নিযে যেতে। দলীয় ২৮ রানে শান্তর বিদায়ে ২২ রানে ভেঙে যায় এই জুটি। তাকেও ফেরান নুয়ান থুসারা। ১৩ বলে ৭ রান করা শান্ত নুয়ান থুসারার বলে চারিথ আসালাঙ্কার হাতে ক্যাচ তুলে দিযে ফিরে যান সাজঘরে। তার বিদায়ে ২৮ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে বাংলাদেশ।
২৮ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর জুটি গড়ে দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন তাওহীদ হৃদয় ও লিটন দাস। এই জটিতে ভর করে শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে থাকে বাংলাদেশ।
অবশেষে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা এই জুটিকে থামান ওয়ানিন্দু হাসরাঙ্গা। ওয়ানিন্দু হাসরাঙ্গার বলে এলবিডব্লিউয়ের শিকার হন দারুণ ব্যাটিং করতে থাকা হৃদয়। ফিল্ড আম্পায়ার শ্রীলঙ্কার আবেদনে সাড়া না দিলে রিভিউ নেয় লঙ্কানরা। আর তাতে সফল হন তারা। যার ফলে ২০ বলে ৪০ রান করে সাজঘরে ফিরে যেতে হয় হৃদয়কে। তার বিদায়ে ৬৩ রানে ভাঙে এই জুটি।
হৃদয়ের বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন সাকিব আল হাসান। সাকিব-লিটন মিলে দেখেশুনেই খেলতে থাকেন। তবে এই জুটিকে থামান ওয়ানিন্দু হাসরাঙ্গা। ওয়ানিন্দু হাসরাঙ্গার বলে এলবিডব্লিউয়ের শিকার হয়ে সাজঘরে ফিরে যান ৩৮ বলে ৩৬ রান করা লিটন। আম্পায়ের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রিভিউ নেন লিটন, তবে সফল হতে পারেননি তিনি, ফিরে যেতে হয় সাজঘরে। তার বিদায়ে ৯৯ রানে ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
৯৯ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর জুটি গড়েন দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার সাকিব ও মাহমুদউল্লাহ। তবে অভিজ্ঞ এই দুই ব্যাটার ব্যর্থ হন নিজেদের জুটিকে বেশিদূর নিয়ে যেতে। দলীয় ১০৯ রানে মাথিশা পাথিরানার বলে মহেশ থেকশানার হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফিরে যান সাকিব। আউট হওয়ার আগে করেন ১৪ বলে ৮ রান।
সাকিবের পথ ধরে সাজঘরে ফিরে যান রিশাদ হোসেন ও তাসকিন আহমেদ। নুয়ান থুসারার বলে বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন রিশাদ হোসেন। রিশাদের বিদায়ের পরের বলেই এলবিডব্লিউয়ের শিকার হয়ে সাজঘরে ফিরে যান তাসকিন। এই দুই ব্যাটারের বিদায়ে ১১৩ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। ১১৩ রানে ৮ উইকেট হারানোর পর নবম উইকেটে তানজিম হাসান সাকিবকে নিয়ে ১২ রানের জুটি গড়ে দলকে জয় উপহার দেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
এর আগে শনিবার ডালাসের গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামে টেস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে টাইগার বোলারদের বোলিং তোপে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে লঙ্কানরা। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকা লঙ্কানরা নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১২৪ রান তুলতে সক্ষম হয়। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৭ রান করেন পাথুম নিসাঙ্কা।
বাংলাদেশের হয়ে মুস্তাফিজ ৩টি, রিমাদ হোসেন ৩টি, তাসকিন ২টি ও তানজিম হাসান সাকিব ১ টি করে উইকেট নেন।