সমাচার ডেস্ক
অপ্রদর্শিত অর্থ মূল ধারা অর্থাৎ ব্যাংকে আনার ব্যবস্থা করতে বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ আছে। তবে এর মধ্যে অন্যায় অবৈধ কাজের শাস্তি মওকুফের সুযোগ নেই। আজ শনিবার (৮ জুন) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন
ওবায়দুল কাদের বলেন, অনেকের হাতের গোপন টাকা উদ্ধার করতে বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে অন্যায়, অবৈধ কাজের শাস্তি মওকুফের সুযোগ নেই। অপ্রদর্শিত অর্থ মূল ধারা অর্থাৎ ব্যাংকে আনার ব্যবস্থা করতে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ।
অপর এক প্রশ্নে জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বাজেট বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ আছে স্বীকার করি। সে চ্যালেঞ্জ অতিক্রমের জন্য কাজ শুরু করেছি। অনেক চ্যালেঞ্জের মতো এই চ্যালেঞ্জও অতিক্রম করবো। দ্রব্যমূল্য, ডলার সংকট, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা- এসব বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।
বাজেট নিয়ে বিএনপির প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, ১৫ বছর আগের সঙ্গে উন্নয়ন-অর্জনে এখনকার বাংলাদেশের আকাশ-পাতাল পার্থক্য। বিএনপি বড় বড় কথা বলে। অর্থ পাচার, কালো টাকা, দেশকে গিলে ফেলার কথা বলে। তাদের সবশেষ বাজেট ছিলো ৬৮ হাজার কোটি টাকা। সাইফুর রহমানকে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে দৌড়াতে হয়েছিলো। আমাদের কোনো অর্থমন্ত্রীকে বাজেট পূর্ববর্তী সময়ে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে দৌড়াতে হয়নি। পাঁচবার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, যাদের নেতারা দুর্নীতিবাজ, তারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কর্মসূচি দেবে এটা বছরের সেরা জোক।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, এবারের বাজেটের মূল প্রতিপাদ্য সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত, স্মার্ট বাংলাদেশের অঙ্গীকার। মূল লক্ষ্য চলমান অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও সংকট দূর করা এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করে দেশের অর্থনীতিকে ধীরে ধীরে উচ্চ গতিশীল অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাওয়া। তিনি আরো বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অর্জন সম্ভব হবে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, এই বাজেট পরিমিত, বাস্তবসম্মত, গণমুখী, সাহসী, নির্বাচনী ইশতেহারের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ভারসাম্যমূলক বাজেট উপহার দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ সংকট থাকা সত্ত্বেও গত দেড় দশকে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ এখন বাংলাদেশ। শুধু ডাল-ভাতে নয়, দেশ এখন পুষ্টি উৎপাদনেও স্বয়ংসম্পূর্ণ।
মূল্যস্ফীতির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি, সুদের হার বৃদ্ধি, পরিবহন খরচ বৃদ্ধি এবং টাকার মান কমে যাওয়া- এ চতুর্মুখী চাপ আমাদের অর্থনীতিতে সৃষ্টি করে ডলার সংকট ও মূল্যস্ফীতি। উন্নত অর্থনীতির দেশগুলো মূল্যস্ফীতি অনেকাংশে কমিয়ে আনতে সক্ষম হলেও এখনো তাদের কাঙ্ক্ষিত ২ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়নি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি এখনো ৯ শতাংশের ওপরে রয়েছে। একই সময়ে দেশে গড় মজুরি বৃদ্ধি পেয়েছে ৭ শতাংশের বেশি হারে। মূল্যস্ফীতি এবং মজুরি বৃদ্ধির মধ্যে ২ শতাংশের একটা ফারাক রয়েছে।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ৪০ শতাংশ লোককে দারিদ্র্যসীমার নিচে রেখে গেছে। শেখ হাসিনা সরকার ১৮ শতাংশে আর অতিদরিদ্র ৬ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। বাংলাদেশে এখন শুধু ডালে ভাতে নয়, পুষ্টি উন্নয়নে স্বয়ংসম্পূর্ণ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ এক লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি। অর্থনীতিবিদ ও খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না। বর্তমান সরকারের এ বিষয়ে কোনো সদিচ্ছা আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, অর্থনীতিবিদরাও এখন পোলারাইজড হয়ে গেছে। এখানে বিএনপি নামটা অর্থনীতিবিদ হয়েছে। তারা তাদের মনের যে ক্ষোভ, অসন্তোষ, ক্ষমতায় না থাকার যে বেদনা, ক্ষমতায় থাকলে যে সুযোগ সুবিধাপ্রাপ্তির ব্যবস্থা থাকে সেটা ভেস্তে গেছে। ভেস্তে গেছে তাদেরই ভুলের কারণে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের উপদেষ্টাদের মধ্যে অর্থনীতিবিদ অনেকেই আছে, তারা সবাই একবাক্যে পরীণত ও সাহসী বাজেট বলেছেন। একটা চ্যালেঞ্জ আছে সেটা হলো বাস্তবায়ন। বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ আমরাও স্বীকার করি। এই চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করার জন্য সরকার ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। আমরা অনেক চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করেছি, ইনশাআল্লাহ আমরা এই চ্যালেঞ্জও অতিক্রম করতে পারবো। দ্রব্যমূল্য, ডলার সংকট, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা, পারিবারিক কার্ডের মাধ্যমে এখন দেশের সংকট মোকাবিলা করার স্কিম রয়েছে, নিম্ন আয়ের মানুষকে সাহায্য করার জন্য এইসব পদক্ষেপ সরকার নিচ্ছে।
বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি নিজেরাই হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লন্ডনে বসে দণ্ডিত এই আসামি আরাম আয়েশে দিন যাপন করছে। এই হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদের হিসাব মির্জা ফখরুল সাহেবকে দিতে হবে।
বিএনপি বলছে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সচেতন করতে মাঠে নামবে তারা; এমন প্রশ্নের উত্তরে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি দুর্নীতিতে পাঁচ বার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। এটা বাংলাদেশের সবাই জানে। তারা বলছে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কর্মসূচি দেবে। যাদের মূলনেতারা দুর্নীতিবাজ হিসেবে চিহ্নিত তারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কর্মসূচি দেবে, এটা এই বছরের সেরা জোকস।
এখন যে আলোচনা হচ্ছে, নানা সাজেশনও আসছে অর্থনীতিবিদদের পক্ষ থেকে, সেক্ষেত্রে এখন কি সেগুলো বাজেটে বা বিয়োজন হওয়ার কোনো সুযোগ আছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২৯ বা ৩০ তারিখ বাজেট পাস হবে। তার আগে সংশোধন বা সংযোজনের সুযোগ সবসময় ছিলো, এবারো হবে।
আপনাদের দলের অনেক নেতাদের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির নানা অভিযোগ গণমাধ্যমে আসছে, তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, তাদের তালিকা দিন, আমরা দুদককে বলবো তদন্ত করতে। যাদের দুর্নীতিবাজ ভাবছেন, আপনারা তালিকা প্রস্তুত করুন। তালিকাটা দিন, আমরা দুদককে বলবো তদন্ত করতে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, সুজিত রায় নন্দী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ।