সমাজসেবা অধিদপ্তর।
সমাজসেবা অধিদপ্তর ভাতা নেওয়ার ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম চালু করেছে

- আপডেট সময় : ০৭:১৭:৩৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫ ২০ বার পড়া হয়েছে
এখন থেকে নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দিয়ে নিবন্ধিত মুঠোফোনের সিম কার্ডে ভাতা নিতে হবে। শুধু নগদ বা বিকাশ নয়, আর্থিক সেবা দেয় এমন যেকোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ভাতার টাকা নেওয়া যাবে।
আগে শুধু নগদ ও বিকাশের মাধ্যমে ভাতার টাকা জিটুপি (গভর্মেন্ট টু পারসন বা সরকার থেকে ব্যক্তি) পদ্ধতিতে বিতরণ করা হতো।
জুলাই মাস থেকে নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছে সমাজসেবা অধিদপ্তর। পরিবারের অন্য সদস্যরা যেন ভাতার টাকা তুলে নিতে না পারেন, সে লক্ষ্যেই এমন ব্যবস্থা করা হয়েছে বলছে অধিদপ্তর।
আগে ভাতার জন্য আবেদনপত্রে পরিবারের যে কারও মুঠোফোন নম্বর ব্যবহার করা যেত। বিশেষ করে গ্রামের দরিদ্র বয়স্ক ব্যক্তিরা মুঠোফোন ব্যবহারে অভ্যস্ত না হওয়ায় নাতি-নাতনি বা পরিবারের অন্য কোনো সদস্যের মুঠোফোন নম্বর দিতেন। সমাজসেবা অধিদপ্তর বলছে, তাদের বিভিন্ন কার্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ আসতে থাকে যে বয়স্ক ব্যক্তিদের অনেকে ভাতার টাকা পাচ্ছেন না। সেসব ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে দেখা যায়, নাতি-নাতনি বা পরিবারের অন্য সদস্যরা টাকা তুলে নিয়ে খরচ করেছেন। আর বয়স্ক ব্যক্তিদের জানান, ভাতার টাকা আসেনি। নতুন ব্যবস্থায় এ ধরনের সমস্যা থাকবে না বলে মনে করছে অধিদপ্তর।
তুন নিয়ম অনুসারে ভাতাভোগীকে অবশ্যই নিজের জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে সিম কার্ড নিবন্ধন করতে হবে।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের সামাজিক নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন
কত ধরনের ভাতা-
সমাজসেবা অধিদপ্তর বয়স্ক ভাতা, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপবৃত্তি, বেদে জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন, হিজড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন, চা জনগোষ্ঠী ও অনগ্রসর ভাতা দিয়ে থাকে। সারা দেশে এসব ভাতাভোগীর সংখ্যা ১ কোটি ২৮ লাখ।
অধিদপ্তর কী বলছে-
সমাজসেবা অধিদপ্তরের সামাজিক নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, নতুন নিয়ম অনুসারে ভাতাভোগীকে অবশ্যই নিজের জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে সিম কার্ড নিবন্ধন করতে হবে। তিনি বলেন, সেসব সিম কার্ডে, অর্থাৎ ওই মুঠোফোন নম্বরে ভাতার টাকা দেওয়া হবে। আগে যাঁরা তালিকাভুক্ত হয়েছেন, তাঁদেরও পর্যায়ক্রমে নিবন্ধিত সিম কার্ড নিতে হবে। তবে বয়স্ক অনেকের আঙুলের ছাপ পাওয়া যায় না নিবন্ধিত সিম কার্ড নেওয়ার ক্ষেত্রে। তাঁদের জন্য নতুন সিদ্ধান্ত পরিস্থিতি বুঝে শিথিল করা হবে।
যে বয়স্ক ব্যক্তিরা একেবারেই মুঠোফোন ব্যবহার করতে পারেন না, তাঁদের ক্ষেত্রে কী করা হবে জানতে চাইলে পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, একটি এলাকায় মুঠোফোন একেবারেই ব্যবহার করতে পারেন না—এমন ব্যক্তির সংখ্যা খুবই কম। সে রকম বিশেষ ক্ষেত্রে শুধু ওই ব্যক্তিকে আলাদাভাবে পর্যবেক্ষণে রাখবে স্থানীয় সমাজসেবা কার্যালয়।
১৫ এপ্রিল অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ একটি পরিপত্র জারি করে জানায়, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ও অন্যান্য নগদ অর্থ বিতরণের ক্ষেত্রে উপকারভোগী নিজে মুঠোফোনে আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংক (এজেন্ট ব্যাংক) বেছে নেবেন। এ ক্ষেত্রে বিতরণকারী মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর বা সংস্থা কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে পারবে না।
নগদ-বিকাশ ছাড়াও টাকা নেওয়া যাবে-
পাঁচ বছর ধরে মুঠোফোনে আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান নগদ ও বিকাশের মাধ্যমে সারা দেশে ভাতাভোগীদের টাকা জিটুপি পদ্ধতিতে দেওয়া হতো। নগদ ৭৫ শতাংশ এলাকায় ও বিকাশ ২৫ শতাংশ এলাকায় ভাতা দেওয়ার জন্য তাদের অ্যাপ ব্যবহার করতে পারত। নগদ ও বিকাশ হিসেবে ভাতাভোগীদের এলাকা ভাগ করা ছিল। সমাজসেবা অধিদপ্তরের সঙ্গে এ দুটি প্রতিষ্ঠানের পাঁচ বছর মেয়াদি চুক্তি শেষ হয়েছে এ বছরের জুন মাসে। এর আগে ১৫ এপ্রিল অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ একটি পরিপত্র জারি করে জানায়, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ও অন্যান্য নগদ অর্থ বিতরণের ক্ষেত্রে উপকারভোগী নিজে মুঠোফোনে আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংক (এজেন্ট ব্যাংক) বেছে নেবেন। এ ক্ষেত্রে বিতরণকারী মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর বা সংস্থা কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে পারবে না।
এ সিদ্ধান্তও জুলাই মাস থেকে কার্যকর হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, ভাতাভোগীরা নিজেদের সুবিধামতো প্রতিষ্ঠান বেছে নিচ্ছেন। অনেকে আগে যে প্রতিষ্ঠানের অ্যাপের মাধ্যমে ভাতা নিতেন, সে প্রতিষ্ঠান পাল্টেছেন।
আরও অনিয়ম-
আবেদন করার দেড় বছর পর বয়স্ক ভাতার জন্য তালিকাভুক্ত হন বেহুলা বেগম। তবে ভাতার টাকা না পাওয়ায় খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, তিনি যে মুঠোফোনের নম্বর দিয়েছিলেন তালিকায় সেই নম্বরের পরিবর্তে অন্য নম্বর রয়েছে। টাকা সেই নম্বরে যাচ্ছে। ওই নম্বর ছিল তৎকালীন ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী আসনের এক সদস্যের মৃত স্বামীর মুঠোফোন নম্বর। ঘটনাটি ২০২১ সালে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার মহেড়া ইউনিয়নের আগছাওয়ালী গ্রামের। অভিযোগ দেওয়ার পর স্থানীয় সমাজেসেবা কার্যালয় ব্যবস্থা নেয়।
এ ধরনের অনিয়মের ঘটনাও রয়েছে। ভাতার টাকা অন্য মুঠোফোন নম্বরে চলে যায়—এমন প্রশ্নের জবাবে সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক বলেন, এ ধরনের অনিয়ম পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।