রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আটক সাত শিক্ষার্থীর মধ্যে চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। গতকাল বুধবার মধ্যরাতের পর তাঁরা ছাড়া পান। অন্য তিনজনকে আজ বৃহস্পতিবার সকালে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, প্রথমে তাঁরা পাঁচ শিক্ষার্থীর আটকের খবর পান। পরে মধ্যরাতের পর আরও দুই শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে বলে জানতে পারেন। এর মধ্যে চার শিক্ষার্থীকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। রাতে (বুধবার) পুলিশের সঙ্গে কথা হয়েছে; তারা বলেছে, অন্য ছাত্রদের রাতে ছাড়তে পারছে না। তাঁদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
হত্যা, গণগ্রেপ্তার, হামলা, মামলা ও গুমের প্রতিবাদে গতকাল সারা দেশে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এর অংশ হিসেবে রাজশাহীর শিক্ষার্থীরাও কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে জড়ো হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেখানে আগে থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অবস্থান নেয়। কোর্ট এলাকাতেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি জোরদার করায় শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে পারেনি। এর মধ্যে গতকাল বেলা তিনটার দিকে কোর্ট এলাকায় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পরে অভিযান চালিয়ে পুলিশ ২৩ জনকে আটক করে। শিক্ষার্থীদের ছাড়াতে বিকেল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক থানায় যান।
পুলিশ ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল দুপুরের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের সামনে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সৈয়দ সামিউল বাসিত ও মাজেদ হাসান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে থেকে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী নাইম ইসলামকে আটক করে পুলিশ। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে নগরের মহিষবাথান এলাকা থেকে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী রিফাত হাসান, আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী প্রত্যয়, চতুর্থ বর্ষের কাউসার এবং বাংলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের আবদুল হালিমকে আটক করা হয়। এদের মধ্যে সামিউল বাসিত, মাজেদ হাসান ও নাইম ইসলামকে মতিহার থানা-পুলিশ, প্রত্যয়, কাউসার ও হালিমকে রাজপাড়া থানা-পুলিশ এবং রিফাত হাসানকে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) আটক করে।
গতকাল মধ্যরাতের পর শিক্ষক ও অভিভাবকদের জিম্মায় সামিউল, মাজেদ হাসান, নাইম ইসলাম ও কাউসারকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে প্রত্যয়, রিফাত ও হালিম পুলিশের জিম্মায় রয়েছেন।
এ ব্যাপারে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, তাঁদের শিক্ষার্থী রিফাতকে রাতে ছাড়া হয়নি। গভীর রাতে তাঁকে ডিবি কার্যালয় থেকে রাজপাড়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। অথচ পুলিশ তাঁদের আশ্বাস দিয়েছিল, রিফাতকে ছেড়ে দেওয়া হবে।
আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক সাঈদা আঞ্জু বলেন, তাঁরা রাত তিনটা পর্যন্ত থানায় ছিলেন। কাউসার নামে এক শিক্ষার্থীকে থানা থেকে ছাড়াতে পেরেছেন। তবে আরেক শিক্ষার্থী প্রত্যয়কে ছাড়েনি পুলিশ।
প্রত্যয়ের মা সৈয়দা আফরিনা মামুন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক। তিনি আজ বৃহস্পতিবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ছেলেকে পুলিশ ছেড়ে দেয়নি। আজ সকালে আদালতে চালান করে দিয়েছে।
রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল হক বলেন, গতকাল বিকেলে রাজপাড়া থানা–পুলিশ ১৫ জন ও ডিবি পুলিশ ৮ জনকে আটক করে। এর মধ্যে যাচাই-বাছাই শেষে ১২ জনকে তাঁদের শিক্ষক ও অভিভাবকের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। অন্যদের আজ সকালে আদালতে চালান করা হয়েছে।