আওয়ামী লীগ, আমলা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে থাকা সুবিধাভোগী বিরোধী মতাদর্শীদের মুখোশ উন্মোচন হচ্ছে। কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে যখন ব্যাপক সহিংসতা চলে, তখন এসব সুবিধাভোগীরা বিরোধীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারা মনে করেছিল সরকার আর থাকছে না। এ কারণে আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে বেশ কয়েক জন আমলা ও রাজনীতিক বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। এসব স্ট্যাটাসের মোবাইলের স্ক্রিনশট গোয়েন্দা সংস্থার হাতে রয়েছে। পরে অবশ্যই ঐসব আমলা ও রাজনীতিক তাদের স্ট্যাটাস ডিলিট করে দেন। তাদের তালিকা করা হচ্ছে। চূড়ান্ত করে সরকারের শীর্ষ প্রশাসনের কাছে তা হস্তান্তর করা হবে।
আওয়ামী লীগের ভেতরে হাইব্রিড, সুবিধাভোগী ও বিরোধী মতাদর্শী অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যা অনেক। টাকা দিয়ে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদও বাগিয়ে নিয়েছেন তারা। তারা আওয়ামী লীগে ঢুকলেও বিএনপি-জামায়াত রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তারা আওয়ামী লীগে ঢুকেছে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে। এদের কাজ হলো, তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করা এবং সময় বুঝে কোপ মারা। এদের কেউ কেউ সংসদ সদস্যও হয়েছেন। গোয়েন্দা রিপোর্টে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। একশ্রেণির আমলা ও কিছুসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য রয়েছেন। এরা সরকার সমর্থক হিসেবে নিজেদের জাহির করে নানা সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন। সুবিধাভোগী আওয়ামী লীগ, আমলা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। কেনাকাটা, বদলি-বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি করে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়ে বিদেশে টাকা পাচার করেছেন। আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের নানাভাবে সুবিধা দিয়ে তারা টিকে আছেন। তাদের তালিকা আগেও গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছিল, কিন্তু বিষয়টি গুরুত্ব পায়নি।
গত এক জুলাই থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়। এটা ছিল একটি সাইনবোর্ড। এটা নিয়ে কোথায় কোথায় মিটিং হয়েছিল তার তথ্য গোয়েন্দাদের কাছে ছিল। সরকার ফেলে দেওয়াই তাদের টার্গেট ছিল। কী কায়দায় এ ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করা যাবে, সেটা গোয়েন্দারা দিয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতা ভুল তথ্য দিয়ে বিষয়টি ভিন্ন খাতে নিয়েছিল। এরপর গোয়েন্দারা জানিয়েছিল, গত ১৬ ও ১৭ জুলাই সারা দেশ থেকে ঢাকায় প্রচুর মানুষ ঢুকছে। এ সময় ঢাকায় প্রবেশের পাঁচটি পথে পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়েছিল। তবে সহিংসতা সৃষ্টিকারীরা ব্যারিকেডের বাইরে গিয়ে অন্য পথে ঢাকায় প্রবেশ করেছিল। পুলিশের ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের কোথায় কী হবে সেটিও জানিয়েছিলেন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের তা জানানো হয়েছিল। কিন্তু একশ্রেণির আমলা বিষয়টি হালকাভাবে নেন। এর পেছনেও রয়েছে ষড়যন্ত্র। এসব আমলারা সরকারের আস্থাভাজন সেজে কোটি কোটি টাকা মালিক হয়েছেন। এদের একটি গ্রুপ ছাত্রদের পক্ষে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অবস্থান নেয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্যের সন্তান-স্বজনরা প্রকাশ্যে অন্দোলনে অংশ নেন। অনুসন্ধানে এমন তথ্য বেরিয়ে আসছে।
এদিকে আন্দোলন চলাকালে সহিংসতা সৃষ্টিকারীদের টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেছেন একশ্রেণির ব্যবসায়ী। এর মধ্যে পুরান ঢাকার এক ডজনের ওপর ব্যবসায়ীদের তালিকা পাওয়া গেছে। তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে মাঠে থাকতে না পারার কারণ অনুসন্ধান করেছে আওয়ামী লীগ। এতে উঠে এসেছে, অনেক নেতা টাকা দিয়ে পদ কিনেছেন, মাঠে থাকার জন্য নয়। তারা আওয়ামী লীগের নাম বিক্রি করে মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি করে বিপুল অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের উপস্থিতিতে পর্যালোচনাসভায় দলের সাংগঠনিক চিত্র উঠে আসে। এতে কারা মাঠে নামেনি, কাদের কী ভূমিকা ছিল এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কারা পদবাণিজ্য করেছে, টাকা দিয়ে কারা পদ নিয়েছে, সে তথ্যও উঠে এসেছে। তাদের কেউ কেউ বলেছেন, টাকা দিয়ে পদ ক্রয় করেছি, মাঠে নামব কেন?