শিক্ষার্থীদের দাবির কাঙ্ক্ষিত সমাধান হয়েছে উল্লেখ করে তাঁদের আন্দোলনের পথ পরিহার করে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখা ও ‘রাষ্ট্রদ্রোহী মহলের ষড়যন্ত্রের’ ক্রীড়নকে পরিণত না হওয়ার ব্যাপারে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীল দল।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে আজ দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করেছে নীল দল। ‘দেশ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে’ বক্তব্য জানাতে এই সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নীল দলের আহ্বায়ক আমজাদ আলী। এতে নীল দলের পক্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে চার দফা দাবি জানানো হয়৷ এগুলো হলো, আন্দোলন চলাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত সব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষী ব্যক্তিদের অবিলম্বে শাস্তির আওতায় আনা, দ্রুততম সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা, আবাসিক হলগুলোয় বৈধ ও নিয়মিত শিক্ষার্থীদের অবস্থান নিশ্চিত করা এবং ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
লিখিত বক্তব্যে যা বলা হলো
নীল দলের সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত ঘটনায় নীল দল গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। এই আন্দোলনের একপর্যায়ে অপ্রত্যাশিতভাবে শিক্ষার্থীসহ অনেকেই নিহত ও আহত হয়েছেন, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। প্রাণহানির ঘটনায় শোক এবং আহত ব্যক্তিদের প্রতি সহমর্মিতা ও দ্রুত সুস্থতা কামনা করেছে নীল দল। ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে যেকোনো নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকার৷ আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারবিষয়ক যৌক্তিক দাবির বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নীল দল বরাবরই ইতিবাচক অবস্থানে থেকেছে। অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, এই আন্দোলন শুরুতে শান্তিপূর্ণ থাকলেও পরে সহিংস হয়ে ওঠে, যা গভীর উদ্বেগের।
শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি বিবেচনায় নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের গত ২১ জুলাইয়ের রায় কোটা সংস্কার দাবিকারী শিক্ষার্থীদের অনুকূলে হওয়ায় নীল দলের পক্ষ থেকে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলা হয়, পাশাপাশি সরকার এই রায়কে দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়ায় নীল দল সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষার্থী ও তরুণ সমাজের কাঁধে ভর করে একশ্রেণির স্বার্থান্বেষী মহল ও স্বাধীনতাবিরোধী চক্র তাদের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য প্রতিনিয়ত অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
নীল দলের পক্ষ থেকে বলা হয়, কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্তরালে নাশকতাকারীরা মেট্রোরেল, বিটিভি ভবন, সেতু ভবন, বিআরটিএ, এক্সপ্রেসওয়েসহ বিভিন্ন ভবনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে বিপুল পরিমাণ রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করেছে। পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মকে মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেশ ও রাষ্ট্রের প্রতি বীতশ্রদ্ধ করে তোলার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে সরকার পতনের আন্দোলনে পরিণত করার ঘৃণিত চক্রান্তকে আমরা নিন্দা জানাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরু থেকেই এর যৌক্তিক সমাধানে সচেষ্ট ভূমিকা পালন করেছে এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিধানে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে৷ আন্দোলন চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিধান করতে গিয়ে নারী শিক্ষকসহ একাধিক শিক্ষক আহত হয়েছেন। লাঞ্ছিত হয়েছেন হল প্রাধ্যক্ষসহ আবাসিক শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বরত শিক্ষকেরা। ক্যাম্পাস পরিস্থিতি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বস্তুনিষ্ঠ মতামত প্রকাশ করায় উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের এক নারী শিক্ষককে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে।
শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সহিংসতায় আহত শিক্ষার্থীদের সুচিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক অনেক শিক্ষার্থীকে ইতিমধ্যে মুক্ত করেছে উল্লেখ করে নীল দল বলেছে, শিক্ষার্থীরা যাতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আহ্বান জানিয়েছে, যা প্রশংসনীয়৷ প্রশাসনের এসব উদ্যোগে নীল দলের শিক্ষকেরা সক্রিয় সহযোগিতা করেছেন। শিক্ষার্থীদের সার্বিক সহযোগিতা দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিরলসভাবে কাজ করছে। তথাপি একটি স্বার্থান্বেষী মহল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শিক্ষকদের বিপক্ষে দাঁড় করানোর অপচেষ্টায়ও লিপ্ত, যা গভীর উদ্বেগের। নীল দল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এ পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানাচ্ছে।
নিপীড়নবিরোধী বলে দাবি করা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় শিক্ষক ও বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত সাদা দলের শিক্ষকেরা কেবল একটি অংশের শিক্ষার্থীদের নিপীড়নের নিন্দা করেছেন, এমন মন্তব্য করে নীল দলের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘নির্যাতিত শিক্ষক ও প্রাণনাশের হুমকি পাওয়া শিক্ষকের ব্যাপারে তাঁদের কোনো উদ্বেগ বা উৎকণ্ঠা আমরা লক্ষ করিনি, যা আমাদের বিস্মিত করেছে। নীল দল দলমত–নির্বিশেষে সব শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছে। তরুণ প্রজন্মকে সঠিক পথে পরিচালনার জন্য সরকারকেই অগ্রণী ভূমিকা পালনে এগিয়ে আসতে হবে। যেকোনো গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে যথাযথ সম্মান দেখিয়ে সুবিবেচনা ও বিচক্ষণতার সঙ্গে সমাধানের পথ নির্ধারণ করতে হবে। পাশাপাশি সরকার এই আন্দোলনে নিহত ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগিতার যে দ্বার উন্মোচন করেছে, তা অব্যাহত রাখতে হবে। নিরপরাধ ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি না করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া প্রাণহানির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস ও অগ্নিসংযোগের সঙ্গে জড়িত সব অপরাধীর তদন্তের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে নীল দলের নেতা নিজামুল হক ভূঁইয়া, নিসার হোসেন, আবদুস ছামাদ, আ জ ম শফিউল আলম ভূঁইয়া, চন্দ্রনাথ পোদ্দার, আবদুল বাছির, আবদুর রহিম, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য আবুল মনসুর আহাম্মদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।