ঢাকা ০৬:৩৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৫, ১০ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
শিক্ষা, স্বাস্থ্যে হযবরল অবস্থা: সংস্কার কমিশনের দাবি সৈয়দ আনোয়ার হোসেন যাত্রাবাড়ী হত্যা মামলা: তৌহিদ আফ্রিদি পাঁচ দিনের রিমান্ডে বার্সেলোনা এখনও নতুন মৌসুমের জার্সি মাঠে ব্যবহার করতে পারছে না রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বৈশ্বিক উদ্যোগের আহ্বান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জীর্ণ ঘরে মৃত্যুর প্রহর গুনছে অসুস্থ দম্পতি, প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের নীরবতা। বিএনপি নেতা ফজলুর রহমানকে গ্রেপ্তারের দাবিতে সেগুনবাগিচায় বিক্ষোভ। যাত্রাবাড়ী হত্যা মামলায় তৌহিদ আফ্রিদির ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন সিআইডির। দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের দাবিতে কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক সম্মেলন ডাকসু নির্বাচনে ভিপি পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাতক্ষীরার শামীম হোসেন। বিএনপির আওয়ামী লীগ বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানা: হাসনাত আবদুল্লাহর অভিযোগ

অসুস্থ দম্পতির জীবন ঝুঁকিতে।

জীর্ণ ঘরে মৃত্যুর প্রহর গুনছে অসুস্থ দম্পতি, প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের নীরবতা।

মো.খালেদ মাসুদ, নিজস্ব প্রতিবেদক।
  • আপডেট সময় : ০৮:২১:০১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৫ ৭ বার পড়া হয়েছে
আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বরগুনার তালতলী উপজেলার ছোটবগী ইউনিয়নের জাকিরতবক গ্রামের আবুল কালাম (৬৫) ও তাঁর স্ত্রী শেফালী বেগম (৫৫) মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ঝুপড়ি ঘরে খেয়ে-না-খেয়ে দিন কাটছে তাঁদের। অথচ স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা রয়েছেন সম্পূর্ণ নীরব।

একসময় দিনমজুর ছিলেন আবুল কালাম। কয়েক বছর আগে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে তাঁর ডান হাত-পা অবশ হয়ে যায়, বাকশক্তিও হারান। সেই থেকে সংসারের চাকা থেমে গেছে। বর্তমানে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই অসুস্থ। স্ত্রী শেফালী বেগমও প্যারালাইজড হয়ে লাঠি ভর দিয়ে চলেন। অসুস্থ স্বামীকে দেখাশোনা করতে গিয়েও তিনি ভেঙে পড়েছেন।

চার ছেলে থাকলেও তাঁরা বাবা-মায়ের খোঁজ রাখেন না। মেয়েরা বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে চলে গেছেন। ফলে কেউ নেই পাশে দাঁড়ানোর মতো। দিন কাটছে অভাব-অনটনে, অনাহারে-অর্ধাহারে।

তাদের বসতঘরও ঝুপড়ির মতো। চারপাশের টিন ছেঁড়া, ওপরে পলিথিন। ভেতরে নেই কোনো আসবাবপত্র—একটি ছোট চৌকি আর মাটিতে বিছানো বিছানা। বর্ষার দিনে পানি ঢুকে গেলে ভেজা মাটিতেই রাত কাটাতে হয় তাঁদের। এই দৃশ্য শুধু কষ্টদায়ক নয়, মানবিক বিবেককে নাড়া দেওয়ার মতো।

প্রতিবেশী হামেদ মোল্লা বলেন, “কালাম আগে দিনমজুর ছিলেন। স্ট্রোকের পর আর কাজ করতে পারেন না। রোজগার বন্ধ, খাবারও জোটে না। খুব কষ্টে দিন কাটছে। যদি সামর্থ্য থাকত, আমি নিজেই তাদের একটি ঘর করে দিতাম।”

আরেক প্রতিবেশী আবুল লস্কর জানান, “আমি প্রায়ই তাদের দেখতে যাই। কিন্তু সহায়তার জন্য কাউকে পাশে পাওয়া যায় না। স্থানীয় প্রশাসন যদি নজর দিত, তাঁদের অবস্থার অনেকটা বদলে যেত।”

দুঃখজনক হলেও সত্য—স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কিংবা প্রশাসন কেউ তাঁদের পাশে দাঁড়াননি। কোনো ভাতা, ত্রাণ বা সহায়তাও মেলেনি। এমন দায়িত্বহীনতা প্রশ্ন তোলে প্রশাসনের মানবিক ভূমিকা নিয়েও।

প্রতিদিন মৃত্যুর প্রহর গুনতে থাকা এই দম্পতির অসহায় জীবন শুধু তাঁদের নয়, সমাজের প্রতিটি মানুষের বিবেককেও কলঙ্কিত করছে। প্রশ্ন জাগে—আমরা কি এমন মানবিক দায়িত্ব এড়িয়ে যাব? নাকি এখনই এগিয়ে এসে তাঁদের পাশে দাঁড়াব?

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

অসুস্থ দম্পতির জীবন ঝুঁকিতে।

জীর্ণ ঘরে মৃত্যুর প্রহর গুনছে অসুস্থ দম্পতি, প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের নীরবতা।

আপডেট সময় : ০৮:২১:০১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৫

বরগুনার তালতলী উপজেলার ছোটবগী ইউনিয়নের জাকিরতবক গ্রামের আবুল কালাম (৬৫) ও তাঁর স্ত্রী শেফালী বেগম (৫৫) মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ঝুপড়ি ঘরে খেয়ে-না-খেয়ে দিন কাটছে তাঁদের। অথচ স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা রয়েছেন সম্পূর্ণ নীরব।

একসময় দিনমজুর ছিলেন আবুল কালাম। কয়েক বছর আগে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে তাঁর ডান হাত-পা অবশ হয়ে যায়, বাকশক্তিও হারান। সেই থেকে সংসারের চাকা থেমে গেছে। বর্তমানে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই অসুস্থ। স্ত্রী শেফালী বেগমও প্যারালাইজড হয়ে লাঠি ভর দিয়ে চলেন। অসুস্থ স্বামীকে দেখাশোনা করতে গিয়েও তিনি ভেঙে পড়েছেন।

চার ছেলে থাকলেও তাঁরা বাবা-মায়ের খোঁজ রাখেন না। মেয়েরা বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে চলে গেছেন। ফলে কেউ নেই পাশে দাঁড়ানোর মতো। দিন কাটছে অভাব-অনটনে, অনাহারে-অর্ধাহারে।

তাদের বসতঘরও ঝুপড়ির মতো। চারপাশের টিন ছেঁড়া, ওপরে পলিথিন। ভেতরে নেই কোনো আসবাবপত্র—একটি ছোট চৌকি আর মাটিতে বিছানো বিছানা। বর্ষার দিনে পানি ঢুকে গেলে ভেজা মাটিতেই রাত কাটাতে হয় তাঁদের। এই দৃশ্য শুধু কষ্টদায়ক নয়, মানবিক বিবেককে নাড়া দেওয়ার মতো।

প্রতিবেশী হামেদ মোল্লা বলেন, “কালাম আগে দিনমজুর ছিলেন। স্ট্রোকের পর আর কাজ করতে পারেন না। রোজগার বন্ধ, খাবারও জোটে না। খুব কষ্টে দিন কাটছে। যদি সামর্থ্য থাকত, আমি নিজেই তাদের একটি ঘর করে দিতাম।”

আরেক প্রতিবেশী আবুল লস্কর জানান, “আমি প্রায়ই তাদের দেখতে যাই। কিন্তু সহায়তার জন্য কাউকে পাশে পাওয়া যায় না। স্থানীয় প্রশাসন যদি নজর দিত, তাঁদের অবস্থার অনেকটা বদলে যেত।”

দুঃখজনক হলেও সত্য—স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কিংবা প্রশাসন কেউ তাঁদের পাশে দাঁড়াননি। কোনো ভাতা, ত্রাণ বা সহায়তাও মেলেনি। এমন দায়িত্বহীনতা প্রশ্ন তোলে প্রশাসনের মানবিক ভূমিকা নিয়েও।

প্রতিদিন মৃত্যুর প্রহর গুনতে থাকা এই দম্পতির অসহায় জীবন শুধু তাঁদের নয়, সমাজের প্রতিটি মানুষের বিবেককেও কলঙ্কিত করছে। প্রশ্ন জাগে—আমরা কি এমন মানবিক দায়িত্ব এড়িয়ে যাব? নাকি এখনই এগিয়ে এসে তাঁদের পাশে দাঁড়াব?