ঢাকা ০৩:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
গাজীপুরের চান্দনা কাঁচাবাজারে আগুন, ৩০–৩৫টি দোকান পুড়ে ছাই খরা, পানিসংকট ও অবহেলায় হুমকিতে উত্তরাঞ্চলের খাদ্যনিরাপত্তা নাফ নদী পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় ৪১ রোহিঙ্গা। চাকসুর ভোটার তালিকায় আপত্তি জানানোর মেয়াদ বাড়ল ঝিনাইদহে ব্যবসায়ীর অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার, দেয়ালে লেখা হত্যার কারণ। প্রকাশ্যে এসে ডাকসুর নির্বাচনী লড়াইয়ে ছাত্রশিবির রাজউকের প্লট জালিয়াতি: শেখ হাসিনা, রেহানা ও টিউলিপের বিরুদ্ধে তৃতীয় দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ আজ যাত্রীবেশে অটোরিকশা চালককে পরিকল্পিতভাবে হত্যা, পালালো দুর্বৃত্তরা প্রায় ৪৮ হাজার শ্রমিকের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা প্রত্যাহার পশ্চিম তীর ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত করলে চরম সীমা লঙ্ঘন হবে: আরব আমিরাতের হুঁশিয়ারি

নগর ভবন বন্ধ থাকলেও কোটি টাকার তেল খরচ: এই তেল গেল কোথায়?

নিজস্ব প্রতিবেদক।
  • আপডেট সময় : ০৬:২৭:১০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ৫ বার পড়া হয়েছে
আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

​বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন-কে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলনের জেরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান কার্যালয় নগর ভবন টানা ৪০ দিন বন্ধ ছিল। এই সময়ে অনেক কর্মকর্তা অফিসেই আসেননি, তবুও তাঁদের জন্য বরাদ্দকৃত গাড়িতে প্রতিদিন ১৪-১৫ লিটার করে জ্বালানি খরচ দেখানো হয়েছে।

​ডিএসসিসির নিজস্ব সূত্রের বরাত দিয়ে জানা যায়, সংস্থাটির জ্বালানি খাতে প্রতি মাসে প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়। মে এবং জুন মাসে নগর ভবন বন্ধ থাকলেও, এই ৪০ দিনে জ্বালানি খরচ স্বাভাবিক সময়ের মতোই ছিল। অথচ এই সময়ে কার্যত কোনো অফিসিয়াল কার্যক্রম চলেনি। বিশ্লেষকরা এটিকে কেবল অনিয়ম নয়, বরং জনগণের অর্থে সরাসরি দুর্নীতি ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় হিসেবে দেখছেন।

​ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, যদি কেউ অফিস না করেও তেল ইস্যু করে থাকেন, তবে তা সম্পূর্ণ অন্যায়। তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।

গাড়ি চলেনি, তবু খরচ দেখানো হয়েছে

​চলতি বছরের ১৪ মে থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত নগর ভবনের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এই সময়ে ডিএসসিসির পরিবেশ, জলবায়ু ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খায়রুল বাকের-এর গাড়িটি প্রতিদিন ১৫ লিটার জ্বালানি খরচ করেছে বলে নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে। হিসাব অনুযায়ী, ৪০ দিনে এই গাড়িতে ৬০০ লিটার তেল খরচ দেখানো হয়েছে, যার মূল্য প্রায় ৬১ হাজার ২০০ টাকা।

​গাড়ির চালক কামরুল হাসান বলেছেন, আন্দোলনের সময় তারা প্রতিদিন গাড়ি নিয়ে বের হননি, প্রয়োজন হলে স্যারকে নিয়ে বের হয়েছেন। অথচ ডিএসসিসির পরিবহন বিভাগ জানায়, এই গাড়িটি প্রতি লিটার তেলে গড়ে ৮ কিলোমিটার চলে। সেই হিসাবে, প্রতিদিন ১২০ কিলোমিটার গাড়ি চলেছে বলে হিসাব দেখানো হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, নগর ভবন বন্ধ থাকার পরও এই দৈনিক ১২০ কিলোমিটার যাত্রা কোথায় হয়েছে?

​অন্যদিকে, প্রধান সমাজকল্যাণ ও বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান এই ৪০ দিনে প্রতিদিন ১৪ লিটার করে মোট ৫৬০ লিটার তেল নিয়েছেন, যার খরচ ৫৭ হাজার ১২০ টাকা। তিনি দাবি করেন, এই সময়ে তিনি ওয়াসা ভবন ও সচিবালয়ে অফিস করেছেন। তবে অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, এই সময়ে নিয়মিত অফিস চালানোর মতো কোনো অবকাঠামোই ছিল না।

কীভাবে হয় এই দুর্নীতি?

​ডিএসসিসির যান্ত্রিক বিভাগের তথ্যমতে, সংস্থাটির কর্মকর্তারা ৯১টি গাড়ি ও ১০১টি মোটরসাইকেল ব্যবহার করেন। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত গাড়ি মিলিয়ে মোট ৬১০টি যানবাহন রয়েছে। এসব যানবাহনের পেছনে শুধু জ্বালানি বাবদ বছরে প্রায় ৬০ কোটি টাকার বেশি ব্যয় হয়।

​কয়েকজন কর্মকর্তার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এই জ্বালানির ব্যবহার বেশিরভাগই ‘কাগজে-কলমে’ হয়। অনেক কর্মকর্তা অফিসের কাজের বাইরে ব্যক্তিগত কাজেও সরকারি গাড়ি ব্যবহার করেন। তাই চালককে খুশি রাখতে অতিরিক্ত জ্বালানি ইস্যু করা হয়। পরে চালক সেই অতিরিক্ত তেল বিক্রি করে দেন এবং এর টাকা চালক ও তেল ইস্যুকারী কর্মকর্তার মধ্যে ভাগ হয়।

​ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “জনগণের অর্থের এমন আত্মসাৎ একটি বড় ধরনের অপরাধ। যারা এর সঙ্গে জড়িত, তাদের পাশাপাশি যারা এই অপরাধমূলক কার্যক্রমের অনুমোদন দিয়েছে, তাদের সবার দৃষ্টান্তমূলক জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।” তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের ওপর জোর দেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

নগর ভবন বন্ধ থাকলেও কোটি টাকার তেল খরচ: এই তেল গেল কোথায়?

আপডেট সময় : ০৬:২৭:১০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

​বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন-কে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলনের জেরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান কার্যালয় নগর ভবন টানা ৪০ দিন বন্ধ ছিল। এই সময়ে অনেক কর্মকর্তা অফিসেই আসেননি, তবুও তাঁদের জন্য বরাদ্দকৃত গাড়িতে প্রতিদিন ১৪-১৫ লিটার করে জ্বালানি খরচ দেখানো হয়েছে।

​ডিএসসিসির নিজস্ব সূত্রের বরাত দিয়ে জানা যায়, সংস্থাটির জ্বালানি খাতে প্রতি মাসে প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়। মে এবং জুন মাসে নগর ভবন বন্ধ থাকলেও, এই ৪০ দিনে জ্বালানি খরচ স্বাভাবিক সময়ের মতোই ছিল। অথচ এই সময়ে কার্যত কোনো অফিসিয়াল কার্যক্রম চলেনি। বিশ্লেষকরা এটিকে কেবল অনিয়ম নয়, বরং জনগণের অর্থে সরাসরি দুর্নীতি ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় হিসেবে দেখছেন।

​ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, যদি কেউ অফিস না করেও তেল ইস্যু করে থাকেন, তবে তা সম্পূর্ণ অন্যায়। তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।

গাড়ি চলেনি, তবু খরচ দেখানো হয়েছে

​চলতি বছরের ১৪ মে থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত নগর ভবনের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এই সময়ে ডিএসসিসির পরিবেশ, জলবায়ু ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খায়রুল বাকের-এর গাড়িটি প্রতিদিন ১৫ লিটার জ্বালানি খরচ করেছে বলে নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে। হিসাব অনুযায়ী, ৪০ দিনে এই গাড়িতে ৬০০ লিটার তেল খরচ দেখানো হয়েছে, যার মূল্য প্রায় ৬১ হাজার ২০০ টাকা।

​গাড়ির চালক কামরুল হাসান বলেছেন, আন্দোলনের সময় তারা প্রতিদিন গাড়ি নিয়ে বের হননি, প্রয়োজন হলে স্যারকে নিয়ে বের হয়েছেন। অথচ ডিএসসিসির পরিবহন বিভাগ জানায়, এই গাড়িটি প্রতি লিটার তেলে গড়ে ৮ কিলোমিটার চলে। সেই হিসাবে, প্রতিদিন ১২০ কিলোমিটার গাড়ি চলেছে বলে হিসাব দেখানো হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, নগর ভবন বন্ধ থাকার পরও এই দৈনিক ১২০ কিলোমিটার যাত্রা কোথায় হয়েছে?

​অন্যদিকে, প্রধান সমাজকল্যাণ ও বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান এই ৪০ দিনে প্রতিদিন ১৪ লিটার করে মোট ৫৬০ লিটার তেল নিয়েছেন, যার খরচ ৫৭ হাজার ১২০ টাকা। তিনি দাবি করেন, এই সময়ে তিনি ওয়াসা ভবন ও সচিবালয়ে অফিস করেছেন। তবে অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, এই সময়ে নিয়মিত অফিস চালানোর মতো কোনো অবকাঠামোই ছিল না।

কীভাবে হয় এই দুর্নীতি?

​ডিএসসিসির যান্ত্রিক বিভাগের তথ্যমতে, সংস্থাটির কর্মকর্তারা ৯১টি গাড়ি ও ১০১টি মোটরসাইকেল ব্যবহার করেন। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত গাড়ি মিলিয়ে মোট ৬১০টি যানবাহন রয়েছে। এসব যানবাহনের পেছনে শুধু জ্বালানি বাবদ বছরে প্রায় ৬০ কোটি টাকার বেশি ব্যয় হয়।

​কয়েকজন কর্মকর্তার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এই জ্বালানির ব্যবহার বেশিরভাগই ‘কাগজে-কলমে’ হয়। অনেক কর্মকর্তা অফিসের কাজের বাইরে ব্যক্তিগত কাজেও সরকারি গাড়ি ব্যবহার করেন। তাই চালককে খুশি রাখতে অতিরিক্ত জ্বালানি ইস্যু করা হয়। পরে চালক সেই অতিরিক্ত তেল বিক্রি করে দেন এবং এর টাকা চালক ও তেল ইস্যুকারী কর্মকর্তার মধ্যে ভাগ হয়।

​ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “জনগণের অর্থের এমন আত্মসাৎ একটি বড় ধরনের অপরাধ। যারা এর সঙ্গে জড়িত, তাদের পাশাপাশি যারা এই অপরাধমূলক কার্যক্রমের অনুমোদন দিয়েছে, তাদের সবার দৃষ্টান্তমূলক জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।” তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের ওপর জোর দেন।