তালতলীতে সড়ক সংস্কারের নামে তামাশা,দুর্ভোগে মানুষ
- আপডেট সময় : ০২:২০:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ৪৪ বার পড়া হয়েছে
বরগুনার তালতলী উপজেলার ছোটবগী ইউনিয়নের বাঁধঘাট থেকে ছোটবগী বাজার পর্যন্ত ৯ হাজার ৭০০ মিটার সড়কটির প্রশস্তকরণ ও সংস্কার কাজ দশ মাসে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ১৬ মাসেও সেই সংস্কারকাজ শেষ হয়নি। এতে যানবাহনের চালকসহ সড়কে চলাচলকারীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এ অবস্থায় এই সড়কে প্রায়ই ঘটেছে দূর্ঘটনা। অভিযোগ রয়েছে, এলজিইডি কতৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে কাজ ফেলে রেখেছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় প্রতিবাদ করলেও কাজ হচ্ছে না।
উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলডিইডি) সূত্রে জানা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে ছোটবগী ইউনিয়নের বাঁধঘাট থেকে ছোটবগী বাজার পর্যন্ত ৯ হাজার ৭০০ মিটার সড়কটি প্রশস্তকরণ ও সংস্কার প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান করা হয়। ওই প্রকল্পের আওতায় বরাদ্দ দেওয়া হয় ১৪ কোটি ৫৩ লক্ষ ৯৪ হাজার ১০৫ টাকা। গত বছর জুন মাসে বরেন্দ্র কনস্ট্রাকশন নামে একটি ঠিকাদরি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। গত বছর ২৫ মার্চ থেকে চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারী পর্যন্ত মেয়াদকাল ধরা হয়। কিন্তু গত বছর জুন মাসে ওয়ার্কঅর্ডার পেয়ে ওই সড়কের নভেম্বর মাসে কাজ শুরু করে কিছু অংশে কাজের ম্যাকাডাম করে ফেলে রাখেন। কাজের মেয়াদ পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদার কাজ সম্পূর্ণ করতে পারেনি। পরে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয়। এরপরও কাজ শেষ হয়নি। এখন আগামী বছরের জুন পর্যন্ত দ্বিতীয় দফা সময় বর্ধিত করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত সড়কের কাজের অগ্রগতি মাত্র ৩৫ শতাংশ। উপজেলা প্রকৌশলী অফিস এ কাজের এক কিস্তির বিল ছাড় করেছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার ছোটবগী ইউনিয়নের বাঁধঘাট থেকে ছোটবগী বাজার পর্যন্ত সড়কটি বরগুনা জেলা শহরের সাথে যোগাযোগের একমাত্র পথ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ সড়কটির দু’পাশ খোঁড়াখুঁড়ি করে কেবলমাত্র কিছু অংশে খোয়া ফেলে ধীরগতিতে কাজ করছেন।বিভিন্ন জায়গায় খোয়া সরে গিয়ে বড় বড় খানাখন্দ ও গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে স্কুল,কলেজ ও মাদ্রাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। আর এ সড়ক দিয়ে চলাচল করা মটরবাইক, অটোরিকশাসহ নানা ধরনের যানবাহন উল্টে দুর্ঘটনা ঘটছে।এতে প্রায় অর্ধশত মানুষ আহত হয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ,সড়কে নিম্নমানের খোয়া দিয়ে কাজ করছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বিষয়টি উপজেলা প্রকৌশলকে জানালেও কোন প্রতিকার মেলেনি।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. লিমন গাজী বলেন,প্রায় দুই বছর ধরে এই সড়কটি এভাবে পড়ে আছে। ভাঙা সড়কে পানি জমে থাকে, প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। এই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে খুবই অসুবিধা হয়।
অটো চালক মহাসীন মিয়া বলেন,সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে দুই মিনিটের গন্তব্যে পৌঁছাতে ১০ মিনিটেরও বেশি সময় লাগে। ভাঙাচোরার জন্য আমাদের গাড়ির প্রচুর ক্ষতি হয়। আমরা দুই বছর ধরে কষ্ট করে চলছি। আমরা তো অসহায় হয়ে গেছি। কার কাছে বলব কষ্টের কথা। বলার কোনো জায়গা নেই।
তালতলী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী মো. নাইম ইসলাম বলেন,সড়কের বেহাল দশার কারণে আমাদের যাতায়াতে খুবই সমস্যা হচ্ছে। আমরা নির্ধারিত সময়ে কলেজে উপস্থিত হতে পারি না।এতে নানা সমস্যায় পড়তে হয়।
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি বশির উদ্দিন বলেন,সরকার পতনের জন্যও আমাদের কাজে কিছুটা ধীরগতি ছিলো। এখন কাজ দ্রুত শেষ করতে প্রয়োজনীয় জনবল ও সরঞ্জাম দিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।’
তালতলী উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) মোঃ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে কাজ দ্রুত শেষ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বৃষ্টি কমলে কাজের গতি বাড়বে এবং জনগণের দুর্ভোগ কমাতে দ্রুত সড়কটি চলাচলের উপযোগী করতে পারব। আশা করছি, এবার প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই কাজ সম্পন্ন হবে।