সমাচার ডেস্ক
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এ নিষেধাজ্ঞায় অবাক হয়েছি বলে জানিয়েছেন সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ। তিনি বলেছেন, আমি এমন কোনো অপরাধ করিনি যে শাস্তি পেতে হবে। অভিযোগ প্রমাণ করতে পারলে যে কোনো পরিণতি মেনে নিতে প্রস্তুত রয়েছি। দুর্নীতিতে সম্পৃক্ততার অভিযোগে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় আজ মঙ্গলবার (২১ মে) একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে দুর্নীতিতে সম্পৃক্ততার অভিযোগে আজিজ আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। স্থানীয় সময় সোমবার (২০ মে) মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে আজিজ আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে অযোগ্য ঘোষণার কথা জানানো হয়।
এদিকে, সাক্ষাৎকারে আল জাজিরায় প্রকাশিত ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’-এর প্রসঙ্গ তুলে আনেন আজিজ আহমেদ। সেটাকে একটি নাটক হিসেবেও আখ্যা দেন তিনি।
সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ বলেন, ২০২১ সালে আল জাজিরার তৈরি করা ডকুমেন্টারিতে যে দুটি অভিযোগ করা হয়েছিলো, এই নিষেধাজ্ঞাতেও সেই দুই অভিযোগের কথা বলা হয়েছে। এই দুটি জিনিস ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
ভাইয়ের কথা বলতে গিয়ে আজিজ বলেন, আমি সেনাপ্রধান হওয়ার অনেক আগে থেকে সে বিদেশে বসবাস করে। সে যদি বিদেশে গিয়ে থাকে তাহলে বৈধ পাসপোর্ট নিয়েই গেছে। এখানে আমি আমার পদ-পদবি ব্যবহার করে দেশের আইন ফাঁকি দিতে সাহায্য করেছি, এমন অভিযোগ মেনে নিচ্ছি না। মেনে নিতে পারি না। এটা সঠিক না।
দ্বিতীয় অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি চার বছর বিজিবিতে ও তিন বছর সেনাপ্রধান ছিলাম। এই সময়কালে যদি কেউ প্রমাণ করতে পারে, আমি আমার ভাইকে কোনো কন্ট্রাক্ট পেতে সাহায্য করেছি, তবে এর জন্য যেকোনো পরিণতি মেনে নিতে প্রস্তুত আছি।
সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রমাণ পাওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হয় সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদকে। জবাবে তিনি বলেন, এটা তাদের বিষয়। তারা প্রমাণ দিক। আমি আমার কোনো ভাইকে কন্ট্রাক্ট দিয়েছি।
আমেরিকান দূতাবাসে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার এটি করার কোনো প্রয়োজন নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, উল্লেখযোগ্য দুর্নীতিতে সম্পৃক্ততার কারণে আজিজ আহমেদকে ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট, ফরেন অপারেশন অ্যান্ড রিলেটেড প্রোগ্রামস অ্যাপ্রোপ্রিয়েশনস অ্যাক্টের ৭০৩১ (সি) ধারার আওতায় অন্তর্ভুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছে পররাষ্ট্র দপ্তর। এর ফলে আজিজ আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যরা সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য হবেন। বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, তার (আজিজ আহমেদ) কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহের অবমূল্যায়ন এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান ও প্রক্রিয়ার ওপর জনগণের আস্থা কমেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, আজিজ আহমেদ তার ভাইকে বাংলাদেশে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহি এড়াতে সহযোগিতা করেন। এটা করতে গিয়ে তিনি নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন। এ ছাড়া অন্যায্যভাবে সামরিক খাতে কন্ট্রাক্ট পাওয়া নিশ্চিত করার জন্য তিনি তার ভাইয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন। তিনি নিজের স্বার্থের জন্য সরকারি নিয়োগের বিনিময়ে ঘুষ নিয়েছেন।
আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও আইনের শাসন শক্তিশালী করতে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকার পুনরায় নিশ্চিত করা হলো।