সমাচার ডেস্ক
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারকে আনারকে হত্যার আগে নগ্ন দেহের ছবি তুলে টাকা আদায়ের চেষ্টা করা হয়েছিলো বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দা পুলিশ প্রধান হারুন অর রশীদ। তিনি বলেছেন, এর আগেও দুই বার তাকে খুনের পরিকল্পনা করা হয়েছিলো। গত জাতীয় নির্বাচনের আগে এবং চলতি বছরের জানুয়ারিতে দেশে এ খুনের পরিকল্পনা করা হয়। গ্রেপ্তার আসামিরা রিমান্ডে গোয়েন্দারের এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। শনিবার (২৫ মে) রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি পুলিশের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান তিনি।
এমপি আনার হত্যাকাণ্ডে জড়িত তিন আসামিকে আট দিনের রিমান্ডে নেওয়ার পর, জিজ্ঞাসাবাদের প্রথম দিনই চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে বলে দাবি করেছেন ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, আগে দুবার, এমনকি নির্বাচনের আগেও একবার হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিলো। আগেও এমপি আনোয়ারুলকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের আগেও হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিলো। তখন তারা ব্যর্থ হয়। দ্বিতীয় বার চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের ১৭ থেকে ১৮ তারিখ আনোয়ারুল কলাকাতায় যান। সেই সময়ে হত্যাকারীরা তাকে খুনের উদ্দেশ্যে কলকাতায় যান। কিন্তু হোটেলে থাকার কারণে সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। তৃতীয় ধাপে তারা এসে সফল হয়।
তিনি আরো বলেন, রিমান্ডে আসামিনরা জানিয়েছেন হত্যার আগে সংসদ সদস্যের নগ্ন ছবি তুলে টাকা হাতানোর পরিকল্পনা ছিলো হত্যাকারীদের। তবে ঠিক কী কারণে আনারকে হত্যা করা হয়েছে তা এখনো নিশ্চিত নয় গোয়েন্দারা। তাদের ধারণা পূর্ব শত্রুতা, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার এবং ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বে খুন হয়েছেন তিনি।
হারুন বলেন, হত্যার আগে তাদের পরিকল্পনা ছিলো সংসদ সদস্য আনোয়ারুলকে জিম্মি করা। এরপর তারা আপত্তিকর ছবি তুলে দুইদিন ব্ল্যাকমেইল করে হুন্ডির মাধ্যমে এবং কলকাতায় থাকা তার বন্ধুদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করা। কিন্তু এমপি আনার কলকাতার ভাড়া করা ওই ফ্ল্যাটে যাওয়ার পরে তার মুখে ক্লোরোফর্ম বা চেতনানাশক ব্যবহার করায় তিনি জ্ঞান হারান। অজ্ঞান অবস্থায় আনারের আপত্তিকর ছবি তোলা হয়। কিন্তু তাদের মূল টার্গেট ছিলো হত্যা করা।
ডিবিপ্রধান বলেন, এমপি আনার হত্যার ঘটনা তদন্তে ভারতীয় পুলিশের একটি দল ঢাকায় কাজ করছে। পাশাপাশি আমাদের হাতে গ্রেপ্তার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রযুক্তিগত তথ্য বিশ্লেষণ করে আমরা দুটি বিষয় পেয়েছি। দুটি গ্রুপ এখানে কাজ করেছে। একটি গ্রুপ মদত দিয়েছে, আরেকটি গ্রুপ হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়নে কাজ করেছে।
স্বর্ণ চোরাচালান চক্রের কোনো সম্পৃক্ততা আছে কি না জানতে চাইলে ডিবিপ্রধান বলেন, নির্দিষ্ট কোনো কিছুই বলা যাবে না। তবে অনেকগুলো বিষয় আছে। তদন্ত শেষ করে আমরা আপনাদের জানাতে পারবো।
হত্যার ঘটনায় কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি, কিসের ভিত্তিতে হত্যার কথা বলা হচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে হারুন অর রশীদ বলেন, আমরা অনেক তথ্য-প্রমাণ পেয়েছি। তদন্তের স্বার্থে এখনই প্রকাশ করছি না। প্রমাণ পেয়েছি বলেই কলকাতায় হত্যা মামলা হয়েছে। আমাদের দেশে একটি মামলা হয়েছে। কলকাতায় মামলাটি সিআইডি তদন্ত করছে। নিশ্চই তারা আলামত পেয়েছে। কলকাতায় দায়ের হওয়া হত্যা মামলার তদন্তে আমারও যাবো।
গত ১২ মে ঝিনাইদহর কালীগঞ্জ থেকে কলকাতায় যাওয়ার পরের দিন রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যান তিনবারের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার।
গত ২২ মে সকালের দিকে তার খুনের খবর প্রকাশ্যে আসে। পুলিশ বলছে, কলকাতার উপকণ্ঠে নিউটাউনের অভিজাত আবাসন সঞ্জীভা গার্ডেনের একটি ফ্ল্যাটে আনারকে খুন করা হয়। খুনের আলামত মুছে ফেলতে দেহ কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলা হয়। এরপর সুটকেস ও পলিথিনে ভরে ফেলে দেয়া হয় বিভিন্ন জায়গায়।
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্যকে হত্যার পর মরদেহ ফেলার কাজে অংশ নেওয়া সিয়াম নামে একজনকে বুধবার রাতে গ্রেপ্তার করে কলকাতা পুলিশ। আর ঢাকায় ডিবির হাতে গ্রেপ্তার হন হত্যাকাণ্ডের মূল সংঘটক আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, শিলাস্তি রহমান ও ফয়সাল আলী ওরফে সাজি।
পুলিশ বলছে, পুরো হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী বা মাস্টারমাইন্ড হলেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আখতারুজ্জামান শাহিন। এমপিকে হত্যার পর মরদেহের মাংস কিমা ও হাড় টুকরো টুকরো করে বিভিন্ন জায়গায় ফেলে দেয়া হয়। কয়েকজন হত্যাকারীকে নিয়ে এ কাজে নেতৃত্ব দেন শিমুল। তিনি পরিচয় গোপন করে আমানউল্লাহ আমান নামে পাসপোর্ট করে কলকাতা যান।