বিনোদন ডেস্ক
অভিনেত্রী ও মডেল রিশতা লাবনী সীমানা আর নেই। হাসপাতালে ১৪ দিনের লড়াইয়ের পর মঙ্গলবার (০৪ জুন) সকাল ৬টার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন সীমানার ছোট ভাই এজাজ বিন আলী। সীমানা স্বামী ও দুই ছেলে রেখে গেছেন।
জানা গেছে, গত ২১ মে রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন সীমানা। সেদিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাঁকে দ্রুত ধানমন্ডির বেসরকারি একটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে জানতে পারেন, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছে। পরদিন আরো উন্নত চিকিৎসার জন্য সীমানাকে ধানমন্ডির আরেকটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর চিকিৎসকদের পরামর্শে তাঁকে ঢাকার আগারগাঁওয়ের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। গত কয়েক দিন সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত ২৫ মে এই হাসপাতালে তাঁর মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার হয়। গত বুধবার বিকেল থেকে সীমানার চিকিৎসা চলছিল ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে।
সীমানার শারীরিক অবস্থা প্রতিনিয়ত অবনতি হয়েছে। শুরুর দিকে তাঁকে আইসিইউতে রাখা হলেও বুধবার থেকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। কিন্তু সব চেষ্টা ব্যর্থ করে সীমানা চলে যান না-ফেরার দেশে।
সীমানা ২০০৬ সালে লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বিনোদন অঙ্গনে কাজ শুরু করেন। ‘দারুচিনি দ্বীপ’ সিনেমায় অভিনয় করে প্রশংসিত হন তিনি। পরে নাটকেও অভিনয় শুরু করেন। কিন্তু হঠাৎ ২০১৬ সাল থেকে অভিনয়ে বিরতি। পরে জানা যায়, মা হওয়ার জন্যই এই বিরতি।
দুবার মা হওয়ার কারণে তাঁর এই দীর্ঘ বিরতি। বিরতি ভেঙে গত বছর আবার নাটকে অভিনয় শুরু করেন। সীমানার দুই সন্তান। বড় সন্তান শ্রেষ্ঠর বয়স আট, আর ছোট সন্তান স্বর্গ তিন বছর বয়সী।
সীমানার মৃত্যুতে শোক
সীমানার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন সংগঠন। এমনই একটি শোকবার্তার পোস্টারের নিচে সীমানার দুই সন্তান শ্রেষ্ঠ ও স্বর্গকে দেখা গেলো। তারা ছোটাছুটি করছে, খেলছে। কিন্তু তারা উপলব্ধি করতে পারছে না তাদের মাথার ওপর থেকে সবচেয়ে বড় ছাদটা সরে গেছে, গভীর মমত্ববোধ থেকে তারা চিরবঞ্চিত হলো।
অভিনেত্রী সীমানার প্রথম নামাজে জানাজা সম্পন্ন হয় দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে। জানাজায় উপস্থিত ছিলেন সীমানার দীর্ঘদিনের সহকর্মীরা। চ্যানেল আইতে সীমানার মরদেহ নিয়ে এলে সেখানে তৈরি হয় শোকাবহ পরিবেশ। দীর্ঘদিনের সহকর্মীরা অভিনেত্রীকে ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
সেখানে স্বর্গ ও শ্রেষ্ঠ্য খেলাধুলা করছিলো। মায়ের শোকবার্তার পোস্টারের নিচে দুজনের খুনসুটিতে মেতে ওঠার একটি ছবি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে। এই ছবি দেখে নেটিজেনরা চোখের জল ধরে রাখতে পারছেন না।
সেখানে শ্রেষ্ঠ বলছিলো, মা আমাকে অনেক ভালোবাসতো, আমিও মাকে অনেক ভালোবাসতাম। আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন। আমার মায়ের অনেক ইচ্ছা ছিলো আমাকে ক্যাডেটে পড়ানোর। কিন্তু মা তো চলে গেলো। আমার মায়ের জন্য সবাই দোয়া করবেন।
একটু দূরে সীমানার মা নাট্য পরিচালক সালাউদ্দিন লাভলুকে জড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, আমার মেয়ে এতো অল্প বয়সে চলে যাবে বুঝতে পারেনি। এতো কম বয়সে কেউ এভাবে যেতে পারে। তারপরে মেয়ের ছবি ধরে অঝোরে কেঁদে উঠেন।
চিত্রনায়ক নিরব লিখেছেন, অনেক ভেবেও কিছু এলো না মাথায়… কি লিখবো। সিমানা। ইন্না-লিল্লাহ ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন।
অভিনেত্রী সীমানা ২০০৬ সালে লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতার মাধ্যমে উঠে আসা এক অভিনেত্রী। তার পরিচিতি এনে দেয় সালাউদ্দিন লাভলু পরিচালিত ‘সাকিন সারিসুরি’ নাটক। এছাড়া তৌকীর আহমেদ পরিচালিত ‘দারুচিনি দ্বীপ’-এও অভিনয় করেন সীমানা।