সমাচার ডেস্ক
সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের ওপর যুক্তরাষ্টের নিষেধাজ্ঞাতে খুশি হওয়ার কিছু নেই বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ মঙ্গলবার (২১ মে) দুপুরে সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটিতে এক স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি- জাগপা’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শফিউল আলম প্রধানের সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দলটির (একাংশ) উদ্যোগে এই স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, এর আগে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলেও তাদের ভয়ংকর যাত্রা বন্ধ হয়নি। সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞাতেও খুশি হওয়ার কিছু নেই। এটা বিভ্রান্তিকর। নিজেদের পায়ে নিজেদের দাঁড়াতে হবে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, একদলীয় বাকশাল কায়েম করতে সরকার অনেক দূর এগিয়ে গেছে। এটা তাদের সুকৌশল। গণতন্ত্রের আলখেল্লা পরে নির্বাচন নাটক দেখাচ্ছে, এটা কোনো নির্বাচন হচ্ছে না। গত ১৫ বছরে যে অপকর্ম করেছে সেই ভয়েও তারা সুষ্ঠু ভোট দিতে ভয় পায়। এখন যে উপজেলা নির্বাচন হচ্ছে তাতেও জনগণের সায় নেই। প্রকৃত অর্থে এর মাধ্যমে কোনো জনগনের রায়ের প্রতিফলন হচ্ছে না।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা কখনো যেন হাল না ছাড়ি, বুকে বল নিয়ে চলি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বারবার বলেছি, আমরা ক্ষমতায় যেতে রাজনীতি করি না। আমরা একটা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই, মানুষের ভোটের অধিকার চাই। এতে আওয়ামী লীগের এতো ভয় কেনো? কারণ তারা যে অপকর্ম করেছে এগুলো তন্ন তন্ন করে খুঁজে বের হবে সেই ভয়ে। স্বাধীনতা আন্দোলনের মূল দাবি ছিলো গণতন্ত্র, সেই চেতনা আওয়ামী লীগ ধ্বংস করেছে। তারা এখন আবার দেশকে যখন একদলীয় শাসনের দিকে নিয়ে যেতে চায়, তার মূল বাধা বিএনপি।
তরুণ সমাজ কোথায়, দেশের এই অবস্থা পরিবর্তনের জন্য কি তাদেরকে আলোড়িত করে না এমন প্রশ্ন রেখে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা অন্য কোনো পথ চিনি না, আন্দোলনের বিকল্প নেই। জনগণকে বেরিয়ে আসতে হবে, রুখে দাঁড়াতে হবে। তিনি আরো বলেন, সরকার বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের দমন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিচার বিভাগসহ সকল প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করেছে। এমন কি সংবাদিকদের লেখার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই।
ফখরুল বলেন, দুর্নীতি আর লোপাটের সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরকে সেই ব্যাংকগুলোর দায়িত্ব দিয়েছেন। পুরো দেশের সম্পদ লুটপাট করেছে তারা।তিনি আরো বলেন, সাবেক সেনা প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ এর স্যাংশনে হয়তো অনেকে খুশি হয়েছে। কিন্তু এটা আর একটা বিভ্রান্তি করা। র্যাবের উপরও এ ধরনের স্যাংশন দেওয়া হয়েছে, তাতে তাদের কিছুই হয়নি, তাদের অপকর্ম থামেনি। আমার ঘর যদি নিজে সামলাতে না পারি, কেউ এসে সামলে দিবে না। নিজেদের শক্তি নিয়ে এদেরকে পরাজিত করতে হবে। ভোটের মধ্য দিয়ে এদেরকে পরাজিত করবো, যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়।
অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে সকলকে আবার ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এই ভয়াবহ দানবীয় সরকারকে পরাজিত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবো ইনশাআল্লাহ। আমরা কখনো যেন হাল না ছাড়ি, বুকে বল নিয়ে চলি।
জিয়া বাকশালে যোগ দিয়েছেন এরকম মিথ্যাচার করা হচ্ছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, যা সঠিক নয়। জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন এই ইতিহাস সব জায়গায় আছে। হীনমন্যতা থেকে জিয়াউর রহমানকে ছোট করা হয়।
৭১’এ দেশ স্বাধীন হলেও দেশের মানুষের মুক্তি হয়নি বলেও অভিযোগ করেন বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ প্রথমে রাজনীতিকে নিষিদ্ধ করেছে পরে বহুদলীয় গণতন্ত্র ব্যবস্থাকে বাতিল করে। বাকশালের সেই প্রচেষ্ট এখনো অব্যাহত। আওয়ামী লীগের সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে এত ভয় কেনো?’
মানুষ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না জানিয়ে ফখরুল বলেন, ‘এ নির্বাচনে কোনো প্রতিদ্বন্ধীতা নেই।’
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী আকণ্ঠ দুর্নীতি করে। আওয়ামী লীগ অর্থনীতি ধ্বংস করে দিয়েছে। রিজার্ভ শেষ করে দিয়েছে। রিজার্ভ তলানিতে এসে পৌঁছেছে। বাংলাদেশের ব্যাংকের দুর্নীতির তথ্য তুলে ধরার কারণে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার বন্ধ করা হয়েছে। ব্যাংকগুলোর এমন খারাপ অবস্থা যে মার্জ করেও তা ঠিক করা যাচ্ছে না। আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার চেতনাকে ধ্বংস করে দিয়েছে।
জাগপার একাংশের সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমানের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক এস এম শাহাদাতের সঞ্চালনায় এতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, এনডিপির চেয়ারম্যান ক্বারী আবু তাহের, জাগপার কেন্দ্রীয় নেতা আওলাদ হোসেন শিল্পী, জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের কেন্দ্রীয় নেতা মফিজুর রহমান লিটন, যুব জাগপার সভাপতি মীর আমির হোসেন আমুসহ সমমনা জোটের নেতৃবৃন্দ।