সমাচার ডেস্ক
দেশে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে অস্ট্রেলিয়ার কাছে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আমাদের উৎপাদন বাড়াতে হবে। কারণ আমাদের জমি কমছে, আর মানুষ বাড়ছে। অস্ট্রেলিয়া এ ব্যাপারে আমাদের সাহায্য করতে পারে। কারণ অস্ট্রেলিয়া কৃষি প্রযুক্তিতে অনেক উন্নত। আজ মঙ্গলবার (২১ মে) বিকালে গণভবনে সফররত অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিনেটর পেনি ওং-এর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে তিনি এসব কথা বলেন। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে বাংলাদেশ কৃষি উৎপাদনে সফল হয়েছে, কারণ গত ১৫ বছরে কৃষি উৎপাদন বহুগুণ বেড়েছে। তবে অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশকে উৎপাদন আরো বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, উন্নত দেশগুলো শুধু তাদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, কিন্তু জলবায়ু ইস্যুতে সেগুলো পূরণ করছে না। নজরুল ইসলাম ব্রিফিংয়ে উল্লেখ করেন, সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রী এব্যাপারে তাঁর হতাশা ব্যক্ত করেছেন (জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে উন্নত দেশগুলির প্রতিশ্রুতি পূরণ না করার কারণে)।
শেখ হাসিনা এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব সম্পদ দিয়ে জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড প্রতিষ্ঠার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমরা অলস বসে থাকিনি (উন্নত দেশগুলির জন্য), বরং আমরা আমাদের জনগণকে বাঁচাতে আমাদের নিজস্ব জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড তৈরি করেছি। আমরা আমাদের দিক থেকে চেষ্টা করছি।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ একটি ঝুঁকিপূর্ণ দেশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি প্রায়ই ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার কবলে পড়ে।
রোহিঙ্গা ও ফিলিস্তিন ইস্যু প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ যেকোনো ধরনের যুদ্ধ বা সংঘাতের বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, আমরা সব দ্বন্দ্ব নিরসনে আলোচনা ও সংলাপ চাই। বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়ে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সহায়তার জন্য অনুরোধ করলেও, তাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হচ্ছে না।
বাংলাদেশ একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়া সত্বেও এর আয়তন খুবই কম উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সেজন্য তাঁর সরকার কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওপর জোর দিয়েছে। সরকার সারাদেশে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছে। তিনি বলেন, অস্ট্রেলীয় উদ্যোক্তারা সেখানে বিনিয়োগ করতে পারে এবং দেশের বিনিয়োগ-বান্ধব সুবিধাগুলি ব্যবহার করে তাদের মুনাফা অর্জন করতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকারের সময়োপযোগী ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপের ফলে দারিদ্র্যের মাত্রা ৪১ শতাংশ থেকে ১৭ দশমিক ৭ শতাংশ এবং চরম দারিদ্র্যের মাত্রা ২৫ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ৭ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। উভয়ে কৃষি, শিক্ষা ও বাণিজ্যসহ দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন। তারা এসব বিষয়ে দেশ দু’টির মধ্যে যোগাযোগ ও অংশীদারিত্ব বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে প্রায় ৯০ হাজার বাংলাদেশি অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করছেন এবং তারা অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন। তিনি অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে তাদের দেশে আরো বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সুযোগ দেয়ার জন্য সুযোগ বাড়ানোর অনুরোধ জানান।
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরো জোরদার ও গভীর করার ওপর জোর দেন।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, অ্যাম্বাসেডর-এ্যাট-লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করতে এবং আঞ্চলিক শান্তি, সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তার জন্য সহযোগিতা জোরদার করার উপায় খুঁজতে দুই দিনের সরকারি সফরে আজ মঙ্গলবার ঢাকায় এসেছেন।