সমাচার ডেস্ক
বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের যেতে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকটির ডেপুটি গভর্নর খুরশিদ আলম। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষেধ করা হয়েছে – এটা মিথ্যা প্রচার। আমরা তথ্য দেয়ার জন্য প্রস্তুত। আমাদের তিনজন কর্মকর্তাকে শুধু তথ্য দেওয়ার জন্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আজ শনিবার (১৮ মে) দুপুরে পঞ্চগড়ের চেম্বার ভবন মিলনায়তনে এক কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। গ্রাহকদের ব্যাংকিং বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে রংপুর বিভাগে ‘গ্রাহক সচেতনতা সপ্তাহ-২০২৪’ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এই কর্মসূচির আয়োজন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিসেস ডিপার্টমেন্ট।
ডেপুটি গভর্নর খুরশিদ আলম বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে বাধা নেই। ব্যাংকে তথ্য দেয়ার জন্য তিনজন মুখপাত্র নিয়োগ দিয়েছি। তথ্যের দরকার হলে ১০০ বার যাবেন। প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানে একজন করে মুখপাত্র থাকেন। সবার তো কথা বলার দরকার নেই। মুখপাত্রের কাছে যাবেন। সেখানে বসার জায়গা ও চায়ের ব্যবস্থা আছে। তারা যদি আপনাকে সন্তুষ্ট না করতে পারেন, আমরা চারজন ডেপুটি গভর্নর আছি। আমরা উত্তর দেবো। তাও বলা হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের অবাধ প্রবেশ নিষেধ, এটি মিথ্যা প্রচার ছাড়া আর কি। তিনি আরো বলেন, অবাধ বলতে কী? অবাধে কোথায় যায়? আপনার একটা প্রাইভেট কোম্পানি কি আরেকটিকে অবাধে কোনো কিছু দেবে? যতোই বন্ধু হন, জার্নালিস্টকে দেবে? অ্যাবসার্ড। পৃথিবীর কোনো দেশে নেই। তাহলে বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে আপনারা অবাধে যেতে চান। আমি তো যেতে নিষেধ করিনি। আপনি তো যান না। আমার লোকজন আপনার জন্য রেডি হয়ে আছেন। যদি কোনও কর্মকর্তার কাছে একাই যেতে চান, যান। ধরুন, আমার কাছে একাই আসতে চান, আসুন। যেটা সিক্রেসি আইনে কাভার করে না, যতদূর খোলামেলা বলা যায় তারা বলে দেবেন। কিন্তু আপনি রাষ্ট্রীয় সিক্রেসির তথ্য চাইবেন, সেটা তো পারমিট করে না কেউ।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে ডেপুটি গভর্নর বলেন, আলটিমেটলি আপনার উদ্দেশ্য দেশের মঙ্গল, আমাদেরও তাই। দেশটা সবার, বঙ্গবন্ধু এটাই বলেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীকে দেখেন, আমি ১৭টি ডিপার্টমেন্ট চালাতে হিমসিম খাই, আর তিনি দেশ-বিদেশ সামলাচ্ছেন। কী পরিমাণ পরিশ্রম করছেন, ভাবতে পারেন!
ব্যাংকারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, অর্থনীতি দিয়ে দেশটাকে এগিয়ে নিতে হবে। সার্ভিস চার্জ কাটার আগে গ্রাহকদের মেসেজ দিন। আপনারা টিম পাঠাবেন। ব্যাংক ঋণ যদি ঠিক না থাকে তাহলে সমস্যা। অর্থনীতির ব্লাড হলো ফাইন্যান্স সেক্টর। সুতরাং, আপনাদের সরকারের ট্যাক্স যেমন আদায় করতে হবে গ্রাহক থেকে, আবার তারা যেন হ্যারাজ না হয়। তারা যাতে অসন্তুষ্ট না হয়। বাংলাদেশ এখন অনেক দেশের কাছে রোল মডেল হিসেবে দাঁড়িয়েছে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। পেছনে তাকানোর সময় নেই। মানুষের আয় বেড়েছে। অনেকে না জেনে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে দিচ্ছে।
ডেপুটি গভর্নর বলেন, সিঙ্গাপুরের চেয়ে পাঁচ গুণ বড় আমাদের অর্থনীতি, নেপালের থেকে সাত গুণ, ভুটানের চেয়েও বড়। আমরা দীর্ঘ পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের কোনো সমস্যা নেই। খেলাপি ঋণের ব্যাপারে আমরা চেষ্টা করছি। এবার বাজেট হচ্ছে আট লাখ কোটি টাকার। বাজেট তো আর এমনি এমনি হয় না। মেগাপ্রজেক্ট হচ্ছে, পদ্মা সেতু করেছি আমরা।
তিনি বলেন, অপপ্রচারকে কেউ পাত্তা দেবেন না। আপনারা ডাটাবেইজ নিয়ে কথা বলবেন! রেমিট্যান্স আবার ব্যাক করছে, বাড়ছে। যারা অপপ্রচার চালাচ্ছে তাদের দ্বারা বিভ্রান্ত হবেন না। কোথায় আমাদের সমস্যা? তবে উদীয়মান অর্থনীতির নানা চ্যালেঞ্জ থাকে। এটা অবশ্যই স্বীকার করতে হবে। শ্রীলঙ্কা কোথায় গিয়েছিলো। আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আমরা ব্যাংকের ম্যানেজার পোস্টিং দিয়ে বসে আছি। সে কী করছে না করছে আমরা সুপারভাইজ করছি না, এটা চলবে না। এ ব্যাপারে কোনো ছাড় দেয়া হবে না। ব্যবহারে সফট কিন্তু নিজেকে কঠোর করতে হবে। এটা সেন্ট্রাল ব্যাংকের মেসেজ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক নূরুল আমিন ও রুহুল আমিন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিসেস ডিপার্টমেন্টের পরিচালক লিজা ফাহমিদা ও শায়েমা ইসলাম, ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাফিউজ্জামান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন এফআইসিএসডি স্ট্রাটেজিক কম্যুনিকেশন টিমের প্রধান অতিরিক্ত পরিচালক মাহেনুর আলম।