সমাচার ডেস্ক
বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখা ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাকে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শান্তি পদক’ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আগামী বছর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই পদক দেয়া শুরু হবে। পুরস্কার হিসেবে থাকবে নগদ এক লাখ ডলার, ৫০ গ্রাম ওজনের একটি ১৮ ক্যারেট স্বর্ণপদক ও সনদ। এ লক্ষ্যে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক শান্তি পদক নীতিমালা-২০২৪’ এর খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আজ সোমবার (২০ মে) মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই নীতিমালা অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন এ তথ্য জানান। সাধারণত প্রতি দুই বছরে দেশি বা বিদেশি একজন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে একটি ক্যাটাগরিতে এই পুরস্কার দেয়া হবে।
তিনি বলেন, বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখা, যুদ্ধ নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ ও অবদান রাখা, দ্বন্দ্ব সংঘাতময় পরিস্থিতিতে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্ব গঠনে কার্যকর ভূমিকা রাখা, টেকসই সামাজিক পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে রাষ্ট্র বা সমাজের সামগ্রিক কল্যাণ সাধন ও এই ধরনের কাজের জন্য দেয়া হবে এই শান্তিপদক।
মো. মাহবুব হোসেন বলেন, পুরস্কারের মধ্যে থাকবে ৫০ গ্রাম ওজনের ১৮ ক্যারেটের একটি স্বর্ণপদক এবং নগদ এক লাখ ডলার। একটি সনদপত্র দেয়া হবে। প্রতি দুই বছরে একবার দেয়া হবে। পৃথিবীর যেকোনো দেশ থেকে প্রস্তাব করা যাবে।
সংশ্লিষ্ট দেশের সরকার, রাষ্ট্রপ্রধান বা সেই দেশের সংসদ সদস্যরা, নোবেল পুরস্কার বা অন্য কোনো আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তি, বাংলাদেশে অবস্থানরত বিভিন্ন দূতাবাসের প্রধান অথবা আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রধানরা, বিদেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতরা, জাতিসংঘের কোনো সংস্থার প্রধানরা পুরস্কারের জন্য কারো নাম প্রস্তাব করতে পারবেন।
পুরস্কারের জন্য সরকার একটি জুরি বোর্ড গঠন করবে। তাদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে। প্রতিবছর ১৭ মার্চ, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিবসে বা জাতীয় শিশু দিবসে পুরস্কার ঘোষণা করা হবে। ২৩ মে বা কাছাকাছি সময়ে পুরস্কার হাতে তুলে দেয়া হবে।
এই পুরস্কার কার্যক্রমের সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং অর্থবিভাগ সেখানে সার্বিক সহযোগিতা করবে। জুরি বোর্ডের সদস্য হবেন খ্যাতিসম্পন্ন বেশ কয়েকজন ব্যক্তি।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, আগামী বছর থেকে প্রতি দুই বছর পর পর এই পুরস্কার দেয়া হবে। প্রধানত একজনকে পুরস্কার দেওয়া হবে। কোনো বছর যদি একাধিক যোগ্য লোক পাওয়া যায়, বিবেচনা করা হবে। মন্ত্রিসভা এটা নিয়ে একটি আইন তৈরি করার কথা বলেছে। আমরা অচিরেই এই কাজ শুরু করবো।
তিনি বলেন, আইনের মধ্যে একটি ফান্ড তৈরি করতে বলা হবে। সেই ফান্ডে সরকার বা বাইরের কোনো ব্যক্তি অনুদান দিতে পারবেন। সেই অনুদানের টাকা থেকে ব্যয় বহন করা হবে। এর আগ পর্যন্ত সরকার ব্যয়ভার বহন করবে।
সচিব বলেন, ১৯৭৩ সালের ২৩ মে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জুলিও কুরি শান্তি পদক দেয়া হয়েছিলো। গত বছর ২৩ মে এই পদকপ্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্ত উদযাপন করা হয়েছিলো। সেদিনের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর নামে একটি শান্তিপদক প্রবর্তন করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। সেই প্রেক্ষিতে আমরা একটা নীতিমালা প্রণয়ন করেছি। আজকে সেই নীতিমালা উপস্থাপন করেছি। মন্ত্রিসভা সেটি অনুমোদন করেছে।
আগামী বছর (২০২৫) প্রথমবারের মতোই পুরস্কার দেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
মন্ত্রিসভা থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, নীতিমালা নিয়ে কাজটি যাতে শুরু করা হয়। এটিকে যাতে পরবর্তীতে আইনে রূপান্তর করা হয়। আইনের মধ্যে একটি তহবিল তৈরি করতে বলা হয়েছে যে তহবিলে, সরকার বা বাইরের লোক যে কেউ সেখানে অনুদান দিতে পারবেন। পরে আমরা তহবিল থেকেই সেই ব্যয়ভারটা নির্বাহ করতে পারব। সেই পর্যন্ত সরকারই এই ব্যয়ভারটা বহন করবে।