বিনোদন ডেস্ক
প্রথমবার নির্বাচনে প্রার্থী হয়েই ছক্কা ছাঁকিয়েছেন বলিউড অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাওয়াত। ভারতের লোকসভা নির্বাচনে হিমাচল প্রদেশের মান্ডি আসন থেকে জিতেছেন বড় ব্যবধানে। হারিয়েছেন কংগ্রেসের হেভিওয়েট প্রার্থী বিক্রমাদিত্য সিংকে। কিন্তু এই খুশির খবরের মাঝেই উড়ে এলো একটি খারাপ খবর। লোকসভা নির্বাচনে জয়ের পর দিল্লি ফেরার পথে পাঞ্জাবের চণ্ডীগড় বিমানবন্দরে হেনস্তা করা হয় বলিউড অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাওয়াতকে। ভারতের কেন্দ্রীয় শিল্প নিরাপত্তা বাহিনীর (সিআইএসএফ) সদস্য কুলবিন্দর কৌর নামে এক নারী থাপ্পড় মারেন তাকে। বৃহস্পতিবারের ওই ঘটনা নিয়ে অবশেষে মুখ খুললেন কঙ্গনা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক ভিডিও বার্তায় অভিনেত্রী বলেন, আমি নিরাপদ আছি। সিকিউরিটি চেকিংয়ের সময়ই এই ঘটনা ঘটে। সেখানে আমার কাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত ওই নারী অপেক্ষা করছিলেন যে, কখন আমি তার সামনে দিয়ে যাবো।
কঙ্গনা বলেন, হঠাৎ পাশ থেকে আমার গালে চড় মারেন ওই নারী এবং গালি দিতে শুরু করেন। আমি যখন তাকে জিজ্ঞেস করলাম, কেন তিনি এই কাজ করলেন? তিনি জবাবে কৃষক আন্দোলনের কথা টেনে আনলেন। আমি মনে করি, পাঞ্জাবে যে সন্ত্রাসবাদ দেখা যাচ্ছে সেটা আমরা কীভাবে সামাল দেব এটাই ভাবনার বিষয়।
জানা গেছে, ওই নারী নিরাপত্তাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া তাকে আটক করে পুলিশি মামলা দেয়া হয়েছে।
কঙ্গনাকে থাপ্পড় মারার পর এক ভিডিও বার্তায় ওই নারী জানান, কৃষক আন্দোলনের সময় কঙ্গনা যে মন্তব্য করেছিলেন, তা একদমই পছন্দ হয়নি তার। তাকে বলতে শোনা যায়, তিনি (কঙ্গনা) কি সেখানে বসেছিলেন, যে মন্তব্য করেছিলেন? আমার মা ওই আন্দোলনে বসেছিলেন।
কঙ্গনাকে থাপ্পড় মারা নারী কনস্টেবলের জন্য লাখ রুপি পুরস্কার ঘোষণা
বলিউড অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাওয়াতকে চণ্ডীগড় বিমানবন্দরে থাপ্পড় মারার ঘটনায় ভারতের কেন্দ্রীয় শিল্প নিরাপত্তা বাহিনীর (সিআইএসএফ) সদস্য কুলবিন্দর কৌরের জন্য এক লাখ রুপি পুরস্কার ঘোষণা করেছেন পাঞ্জাবের এক ব্যবসায়ী।
বিমানবন্দরে দায়িত্ব পালন করা সিআইএসএফ’র কনস্টেবল কুলবিন্দর কৌরের এমন কাজের অভিবাদন জানিয়ে একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন শিবরাজ সিং বেইনস নামের এই ব্যবসায়ী। এতে তিনি পাঞ্জাবের জনগণ ও পাঞ্জাবের সংস্কৃতি রক্ষার জন্য কৌরকে অভিবাদন জানিয়েছেন।
কঙ্গনা রানাওয়াত এবার বিজেপি প্রার্থী হিসেবে হিমাচল প্রদেশের মান্দি আসন থেকে লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। গত মঙ্গলবার লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার দুই দিন পর বৃহস্পতিবার বিকেলে দিল্লি আসার পথে চণ্ডীগড় বিমানবন্দরে অনাকাঙ্ক্ষিত ওই পরিস্থিতির মুখোমুখি হন কঙ্গনা।
কঙ্গনাকে হেনস্থা করার বিষয়ে ওই নারী কনস্টেবল বলেন, কঙ্গনা বলেছিলেন যে কৃষকেরা দিল্লিতে বিক্ষোভ করছেন; কারণ, তাদের ১০০ বা ২০০ রুপি করে দেয়া হয়েছিলো। সেই বিক্ষোভকারীদের একজন ছিলেন আমার মা। এজন্য মায়ের সম্মান রক্ষায় সে এমন কাজ করেছে।
এদিকে কঙ্গনাকে থাপ্পড়ের ঘটনায় কুলবিন্দর কৌরকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে একটি মামলাও দায়ের হয়েছে। বিমানবন্দরে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করা সিআইএসএফ এ ঘটনা তদন্তেরও পদক্ষেপ নিয়েছে।
কুলবিন্দরের বিরুদ্ধে এসব ব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে তার পক্ষে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন এই নিরাপত্তাকর্মীর ভাই শের সিং মহীভাল। যিনি নিজে কৃষক আন্দোলনের একজন সংগঠক।
কে এই নারী কনস্টেবল
লোকসভা নির্বাচনে হিমাচল প্রদেশের মান্দি আসন থেকে বিজেপির হয়ে সদ্য সংসদ সদস্য (এমপি) নির্বাচিত হয়েছেন বলিউড অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাওয়াত। গত বৃহস্পতিবার তিনি চণ্ডীগড় বিমানবন্দর থেকে দিল্লি আসার পথে বিমানবন্দরে থাকা সেন্ট্রাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিউরিটি ফোর্সের (সিআইএসএফ) নারী কনস্টেবল কুলবিন্দর কউর তাকে চড় মারেন। এনডিটিভি ও হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।
এ ঘটনার পরে সাসপেন্ড করা হয় সেই নারী কনস্টেবলকে। ঘটনা তদন্তে একটি কমিটিও গঠন করেছে সিআইএসএফ। সেই সঙ্গে কুলবিন্দরের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ধারা ৩২৩ (স্বেচ্ছায় আঘাত করা) এবং ৩৪১ (ভুলভাবে সংযম) এর অধীনে মামলা করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। বলা হচ্ছে, কঙ্গনাকে চড় মারার পর এই প্যারামিলিটারি কনস্টেবল বলেছেন, ‘কৃষকদের অসম্মান’ করার জন্য বলিউড তারকাকে চড় দিয়েছেন তিনি।
ভারতে ২০২০-২১ সালের কৃষক বিক্ষোভের সময় আন্দোলনে অংশ নেওয়া পাঞ্জাবের নারীদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন কঙ্গনা। সে কারণেই তার ওপর ক্ষোভ ছিলো পাঞ্জাবের বাসিন্দা কুলবিন্দরের। সেই ক্ষোভ থেকেই বলিউড তারকাকে তিনি চড় মেরেছেন বলে অভিযোগ।
৩৫ বছর বয়সি কনস্টেবল কুলবিন্দর কউর পাঞ্জাবের সুলতানপুর লোধির বাসিন্দা। কথিত চড় মারার ঘটনার পর একটি ভিডিওতে কুলবিন্দরকে বলতে শোনা যায়, তার মা-ও বিক্ষোভকারীদের একজন ছিলেন।
কুলবিন্দর কউর ২০০৯ সালে সিআইএসএফে যোগ দেন। দুই বছর ধরে তিনি চণ্ডীগড় বিমানবন্দরে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। ২০২১ সাল থেকে তিনি চণ্ডীগড় বিমানবন্দরে বিমান চলাচল নিরাপত্তা বাহিনীর দলে কাজ করছেন। তার স্বামীও সিআইএসএফের সদস্য। এই দম্পতি দুই সন্তানের বাবা-মা। কুলবিন্দরের ভাই শের সিং কৃষকনেতা। তিনি কিষান মজদুর সংঘর্ষ কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কুলবিন্দরের বিরুদ্ধে এর আগে কখনো কোনো ধরনের অভিযোগ আসেনি, বাহিনী থেকে তিনি কখনও কোনো শাস্তিও পাননি। তার স্বামীও চণ্ডীগড় বিমানবন্দরেই কর্মরত আছেন।
কঙ্গনা রানাওয়াত এক্স-এ (সাবেক টুইটার) এক ভিডিও বার্তায় অভিযোগ করেন, নিতাপত্তা তল্লাশি শেষ করে বের হওয়ার পর তাকে এসে চড় মারেন কুলবিন্দর। তার ভাষ্য, ‘তাকে জিজ্ঞেস করি, আমাকে চড় মেরেছেন কেনো। তিনি বলেন, “আমি কৃষকদের আন্দোলন সমর্থন করি”।’
বিজেপির সদ্য নির্বাচিত এই এমপির ভাষ্যমতে কুলবিন্দর কউর বলেন, কৃষক বিদ্রোহের সময় কঙ্গনার করা ‘১০০ রুপি’ মন্তব্যের জন্য তিনি অভিনেত্রীর ওপর নাখোশ ছিলেন। কৃষক আন্দোলন চলাকালীন কঙ্গনা একবার বলেছিলেন, ১০০ টাকার জন্য দিল্লির রাস্তায় বসে রয়েছেন কৃষকরা। সেই পুরোনো মন্তব্যের জন্যই কঙ্গনাকে চড় মেরেছেন তিনি।
কুলবিন্দর বলেন, ‘তিনি বলেছিলেন, কৃষকরা ১০০ রুপির জন্য ওখানে বসে আছে। তিনি [কঙ্গনা] কি [১০০ রুপির জন্য] ওখানে গিয়ে বসে থাকতেন? উনি যখন এ কথা বলেন, তখন আমার মা ওখানে বসে আন্দোলন করছিলেন।’
২০২০ সালের ডিসেম্বরে এক্সে ওই ‘১০০ রুপি’ মন্তব্য করেছিলেন কঙ্গনা। বলিউড তারকা ওই পোস্টে দাবি করেন, এক বয়স্ক নারী তাকে বলেছিলেন যে ১০০ রুপি দিলে তিনি ‘আসবেন’-অর্থাৎ টাকার বিনিময়ে আন্দোলন করবেন।
সে সময় দিল্লির শিখ গুরুদুয়ারা ম্যানেজমেন্ট কমিটির প্রধান মাঞ্জিদার সিং সিরসা বলেছিলেন, কঙ্গনাকে এক সপ্তাহের
নারী কনস্টেবলকে চাকরি দিতে চান বলিউড গায়ক বিশাল
এবার নতুন আলোচনা বলিউডের জনপ্রিয় গায়ককে নিয়ে। হিন্দুস্থান টাইমসের প্রতিদেবন থেকে জানা যায়, কঙ্গনাকে চড় মারার ঘটনায় সাময়িকভাবে বরখাস্ত কনস্টেবল কুলবিন্দর কৌরকে চাকরি দিতে চেয়েছেন বিশাল দাদলানি। বলিউডের খ্যাতিমান গায়ক-সুরকার বিশাল। কুলবিন্দর কৌর ভারতের সেন্ট্রাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিউরিটি ফোর্সের (সিআইএসএফ) কনস্টেবল।
নিজের ইনস্টাগ্রামের দেয়া এক পোস্টে কুলবিন্দর কৌরের পাশে দাঁড়ানোর কথা জানান বিশাল। যদি কুলবিন্দরের বিরুদ্ধে প্রশাসনিকভাবে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তাহলে তাকে চাকরি দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। পোস্টে বিশাল লিখেন, আমি কোনো ধরনের সহিংসতা সমর্থন করি না। তবে আমি ওই সিআইএসএফ সদস্যের রাগের কারণ বুঝি। যদি সিআইএসএফ তার (কুলবিন্দর) বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়, তাহলে আমি এটা নিশ্চিত করতে পারি যে তাঁর চাকরির ব্যবস্থা করা হবে। অবশ্য তিনি যদি সেটা নিতে চান।
চাকরী প্রসঙ্গে নিয়ে কথা বলেছেন বিমানবন্দর নিরাপত্তাকর্মী কুলিন্দর কৌর। কুলিন্দর শুক্রবার (৭ জুন) তার এক্স হ্যান্ডেলে একটি স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, চাকরি হারানোকে আমি ভয় পাই না। মায়ের সম্মানে এরকম এক হাজার চাকরি হারাতে আমি প্রস্তুত।
কঙ্গনাকে চড় মারার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ ভাইরাল। ভিডিওতে কৌরি বলেন, কঙ্গনা কৃষকদের আন্দোলন নিয়ে বাজে মন্তব্য করেন। কঙ্গনা তিনি ওই ঘটনার প্রতিশোধ নিয়েছেন। ওই সময়ে মোদির বিতর্কিত এক আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলে কৃষক সমাজ। যাতে অংশ নিয়েছিল কৌরির মা।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালে ভারতের দিল্লিসহ বিভিন্ন জায়গায় মোদি সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন করেন কৃষকরা। পাঞ্জাব থেকে আসা কৃষকরা দিল্লিতে প্রায় এক মাস ধরনা দেন। ওই সময় আন্দোলনকারী কৃষকদের বিরুদ্ধে একের পর এক আক্রমণাত্মক টুইট করেন কঙ্গনা।
তিনি বলেছিলেন, ‘১০০ টাকার জন্য দিল্লির রাস্তায় বসেছে কৃষকরা।’ এছাড়া কৃষকদের খালিস্তানি বলে কটাক্ষও করেছিলেন। সে কারণে একবার পাঞ্জাবে কঙ্গনার গাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন কৃষকরা। সেই পুরনো বক্তব্যের কারণে এবার থাপ্পড় খেতে হলো কঙ্গনাকে।