আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে বাধ্য হয়ে গাজা থেকে ১০ লাখ মানুষ রাফা শহরে আশ্রয় নিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানেও হামলা চালানোর ঘোষণা দিয়েছে দখলদার ইসরায়েল। এমন অবস্থায় গাজার সর্বদক্ষিণের এই শরহটি ছেড়ে অন্তত তিন লাখ ফিলিস্তিনি পালিয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। গতকাল রোববার (১২ মে) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় তিন লাখ মানুষ গত সপ্তাহে রাফা থেকে পালিয়ে গেছে বলে গাজায় ফিলিস্তিনিদের সাহায্যকারী জাতিসংঘের প্রধান সংস্থা রোববার জানিয়েছে। ইসরায়েলি আগ্রাসন থেকে বাঁচতে গাজা উপত্যকার দক্ষিণ প্রান্তের এই শহরটি গত সাত মাস ধরে ১০ লাখেরও বেশি বাস্তুচ্যুত মানুষের কাছে আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে।
ইসরায়েলি সরকার রাফা এবং গাজার অন্যত্র নতুন স্থানান্তর আদেশ জারি করার কয়েক ঘণ্টা পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ঘোষণা দেয় ইউএনআরডব্লিউএ নামে পরিচিত জাতিসংঘের সংস্থা। আন্তর্জাতিক সতর্কতা সত্ত্বেও ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী শহরটিতে আক্রমণ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে গত কয়েকদিনে আশঙ্কা আরো গভীর হয়েছে।
মূলত লাখ লাখ ফিলিস্তিনির আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠা রাফা শহরে বড় ধরনের হামলার বিরোধিতা করে আসছে যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি রোববার সেই সতর্কবার্তাগুলোর কথাই বলেছে, একইসঙ্গে সংস্থাটি বেসামরিক লোকদের বাস্তুচ্যুত হওয়ার বিষয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেছে এবং বলেছে, রাফাতে পুরো মাত্রার আক্রমণ হবে ‘বিপর্যয়কর’।
সংস্থাটি সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছে, ‘রাফার পরিবারগুলো আবারও সরে যাচ্ছে, আশ্রয়, খাবার, পানির সন্ধান করছে।’
গাজা উপত্যকার বৃহত্তম টেলিযোগাযোগ সংস্থা প্যালটেল রোববার বলেছে, ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের কারণে দক্ষিণ গাজার কিছু অংশে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ হয়ে গেছে এবং ক্রুরা ‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব’ পরিষেবাগুলো পুনরুদ্ধার করার জন্য কাজ করছেন।
আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডারসের কর্মীরা যুদ্ধের সময় গাজায় কাজ করছে। এই সংস্থাটিও সোশ্যাল মিডিয়াতে বলেছে, রাফা ইন্দোনেশিয়ান ফিল্ড হাসপাতালের শেষ ২২ রোগীকে অন্যান্য চিকিৎসাকেন্দ্রে রেফার করা শুরু করেছে তারা।কারণ তারা ‘আর তাদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে পারছে না।’
গাজার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা প্রায় পতনের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে এবং রাফা শহরের তিনটি বড় হাসপাতালের মধ্যে যে একটি হাসপাতাল ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর অভিযানের আগে আংশিকভাবে কাজ করছিলো সেটিও ইতোমধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে।
এদিকে গত সোমবার থেকে রাফা ঘিরে তীব্র বোমাবর্ষণ এবং লড়াই চলছে। মূলত গত সপ্তাহের প্রথম দিকে ইসরায়েলি সৈন্যরা তাদের অভিযানের শুরুতে মিসরের সাথে রাফা ক্রসিংয়ের নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং পরে তা বন্ধ করে দেয়। এতে করে সাহায্য প্রবাহও বন্ধ হয়ে যায়। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, তখন থেকে রাফা শহরে ইসরায়েলি হামলায় কয়েক ডজন মানুষ নিহত হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো গত শনিবার রাফা এবং উত্তর গাজার একটি অংশে লিফলেট ফেলে মানুষকে পালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী রাফাতে অবস্থানরত গাজাবাসীকে অস্থায়ীভাবে ‘আল-মাওয়াসিতে সম্প্রসারিত মানবিক এলাকায়’ সরে যেতে বলেছে। রাফা শহরের উত্তরের এই উপকূলীয় এলাকাটি মানুষকে আশ্রয় দেয়ার জন্য নিরাপদ বা সুসজ্জিত নয় বলে জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলেছেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ কূটনীতিক জোসেপ বোরেল শনিবার গভীর রাতে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে লিখেছেন, ‘বেসামরিক নাগরিকদের রাফার অনিরাপদ অঞ্চলে সরিয়ে নিতে বাধ্য করা অসহনীয়। এটি ভয়াবহ মানবিক সংকটকে আরো বাড়িয়ে তুলবে।’
গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় নির্বিচারে আগ্রাসন চালাচ্ছে ইসরাইল। এ হামলায় রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ৩৫ হাজার ৩৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, এদের ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু। এছাড়া আরো প্রায় ৭৯ হাজার ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন।