আর্ন্তজানিত ডেস্ক
ভোট গণনা চলছে ভারতে ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের। আজ মঙ্গলবার (০৪ জুন) স্থানীয় সময় সকাল ৮টা থেকে এ ভোট গণনা শুরু করে দেশটির নির্বাচন কমিশন। ভোট গণনা শুরু হওয়ার সাড়ে ঘণ্টায় পাওয়া ফলাফলে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএ ২৯৬ আসনে এগিয়ে রয়েছে। অন্যদিকে বিরোধী দল কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট ২৩১টি আসনে এগিয়ে রয়েছে। এদিকে একক দল হিসেবে বিজেপি ২৪৩ আসনে জয় পেয়ে এগিয়ে আছে। অন্যদিকে কংগ্রেস জয় পেয়েছে ৯৯ আসনে। আর অন্যান্য দল এ পর্যন্ত ১৭ আসনে জয় পেয়েছে। ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী একক সংখ্যা গরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সরকার গঠনের জন্য কোনো দলকে ২৭২ আসনে জিততে হবে। খবর ইকোনোমিক টাইমস
এই লোকসভা নির্বাচনের শুরু থেকেই ৪০০ আসন পার করার ডাক দিয়েছিলো বিজেপি। যদিও ভোট গণনা শুরুর পর সময় যতই গড়িয়েছে, বিজেপির লক্ষ্যমাত্রা পূরণের বিষয়টি ততই ফিকে হয়ে যাচ্ছে। ফলাফলে চমক দেখিয়ে চলেছে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোট।
বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে পাওয়া ভোটের আপডেট ফলাফলের চিত্র বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা ভিত্তিতে সরকার গঠন নিয়ে সংশয়ে রয়েছে বিজেপি।
ভারতের ক্ষমতাসীন এই দলটি এবারের নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে অনেক দূরে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি। প্রাথমিক ভোট গণনায় মোদির ভূমিধস জয়ের আভাস মিলছে না।
যদিও ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী, বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট কম-বেশি ২৯০টি আসনে এগিয়ে রয়েছে।
বিবিসি বলছে, নরেন্দ্র মোদি যখন ‘আব কি বার, চারশ পার’ (এবার চারশ ছাড়িয়ে যাব) স্লোগান দিয়ে নির্বাচনের প্রচার শুরু করেছিলেন, তখন তিনি তার বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের জন্য ৪০০টিরও বেশি আসনে জয়ী হওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছিলেন।
বুথ ফেরত জরিপও পূর্বাভাস দিয়েছিলো তার জোট ৪০০ আসনে জয়ী হবে। যাইহোক, প্রাথমিক ভোট গণনা থেকে ধারণা করা হচ্ছে, বিরোধী মধ্য বামপন্থি ইন্ডিয়া জোটের সাথে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে এবার।
ভারতের ৫৪৩ আসনের পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ২৭২টি আসন। এনডিএ ওই পর্যন্ত পৌঁছাবে কি না তা নিয়ে ইতোমধ্যে সংশয় তৈরি হয়েছে। দুই জোটের মধ্যে ব্যবধান প্রত্যাশার চেয়ে কমে আসছে বলে মনে হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে মাত্র ৬০ থেকে ৭০টি আসনের পার্থক্য দেখা যাচ্ছে।
কলকাতার সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারও বলছে, নরেন্দ্র মোদির এনডিএ আর বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র মাঝে ফারাক মাত্র ৫০ আসনের মতো। এমনকি অযোধ্যার ফয়েজাবাদ আসনেও পিছিয়ে রয়েছে বিজেপি প্রার্থী। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে তিনি তিন হাজারের বেশি ভোটে পিছিয়ে রয়েছেন।
দল হিসেবে বিজেপি এগিয়ে আছে ২৩৯টি আসনে। সংবাদমাধ্যম বলছে, দুপুর দুইটা পর্যন্ত বিজেপি এগিয়ে রয়েছে ২৩৯টি আসনে। কংগ্রেস ৯৮ এবং অন্যান্য দল ২০৬টি আসনে এগিয়ে আছে।
এদিকে পশ্চিমবঙ্গে ৪২টি লোকসভা আসনের মধ্যে ৩১টিতে এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল। দুপুর দুইটা পর্যন্ত যে ফলাফল পাওয়া গেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, ১০টি আসনে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। আর একটিতে এগিয়ে কংগ্রেস। এছাড়া সমাজবাদী পার্টি এগিয়ে রয়েছে উত্তরপ্রদেশে। গত লোকসভা ভোটে এই দলটি পেয়েছিল মাত্র পাঁচটি আসন। সেই দলই এবার ৩৮টি আসনে এগিয়ে আছে। আজমগড়ে এসপি প্রার্থী ধর্মেন্দ্র যাদব তার নিকটতম প্রার্থী বিজেপির দীনেশ লাল থেকে ৪৫ হাজার ভোটে এগিয়ে রয়েছেন।
৮০ আসনের উত্তরপ্রদেশে বিজেপি এগিয়ে রয়েছে ত্রিশের বেশি আসনে। ৩৮টি আসনে এগিয়ে আছে সমাজবাদী পার্টি।
এবারের লোকসভা নির্বাচন গত ১৯ এপ্রিল শুরু হয়েছিলো। সাত দফার ভোট শেষ হয় গত ১ জুন। এরপর মঙ্গলবার ৮টা থেকে শুরু হয় ভোট গণনা। প্রথমে পোস্টাল ব্যালট, তারপর ইভিএমে পড়া ভোটের গণনা হয়। রাউন্ড যত এগোচ্ছে, এনডিএ জোট বনাম ‘ইন্ডিয়া’র লড়াই তত জোরালো হচ্ছে।
অবশ্য বিজেপি কখনোই ৪০০ আসন পাবে না বলে দৃঢ় বিশ্বাস ছিল কংগ্রেসের। চার দশক আগে কংগ্রেসই একবার ৪০০ আসন পারের লক্ষ্য পূরণ করতে সফল হয়েছিলো।
১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর নিজের দেহরক্ষীদের হাতে খুন হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। এরপর সেই বছর অনুষ্ঠিত লোকসভা নির্বাচনে ৫৪১টির মধ্যে ৪১৪টি আসনে জয়ী হয় কংগ্রেস। ক্ষমতায় আসীন হন ইন্দিরার ছেলে রাজীব গান্ধী।