খরা, পানিসংকট ও অবহেলায় হুমকিতে উত্তরাঞ্চলের খাদ্যনিরাপত্তা

- আপডেট সময় : ০৮:১৯:১৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১ বার পড়া হয়েছে
নওগাঁ জেলার সাপাহারের লক্ষ্মীপুর গ্রামে পৌঁছালে দেখা যায়, ধানের বীজ বোনার জন্য এখন বৃষ্টি প্রয়োজন, কিন্তু আশার বৃষ্টি নেই। স্থানীয় সাঁওতাল নারী বিজিয়ান মুর্মু বলেন, “আগের মতো বৃষ্টি হয় না, মাটির নিচে জলও নেই। ধান আগের মতো ফলছে না, তাই আমের দিকে বেশি নির্ভর করছি।”
একসময় এই অঞ্চলে প্রচুর ধানের আবাদ হতো। কিন্তু বর্তমানে খরা ও পানির অভাবে পুরো সাপাহারের রুক্ষ মাটিতে ধান কম, আমের চাষ বেশি। এসব অঞ্চলের মানুষ, যারা মূলত ধান ও সবজির ওপর নির্ভরশীল, তাঁদের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে উঠেছে।
উত্তরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর কমছে। শুকনো মৌসুমে খাওয়ার পানি ও সেচের জন্য হাহাকার থাকে। সরকারের তথ্য অনুযায়ী, এই অঞ্চলে বৃষ্টিপাত কমছে এবং গরম বেড়ে যাচ্ছে। জুন মাসে দেশের গড় বৃষ্টি ২০ শতাংশ কমেছে, উত্তরাঞ্চলে তা আরও বেশি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়নই এর মূল কারণ।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান বলেন, “উত্তরাঞ্চলের বৈচিত্র্যময় পরিবেশ এবং এখানে জলবায়ুর অভিযোজনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রচেষ্টা খুব কমই চোখে পড়ে। খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হলে পুরো দেশের খাদ্যনিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়বে।”
বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল, বিশেষত রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁর বরেন্দ্র এলাকা ইতিমধ্যেই খরা ও পানিসংকটের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ। ২০২৫ সালে প্রকাশিত গ্লোবাল ফুড সিকিউরিটি সাময়িকীর ‘রিভিজিটিং দ্য ড্রাউট–ফুড ইনসিকিউরিটি নেক্সাস’ গবেষণায় বলা হয়েছে, যদি জলবায়ু পরিবর্তনের চাপ ও পানি ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা আরও বৃদ্ধি পায়, তবে এই অঞ্চলের খাদ্যনিরাপত্তা অর্ধেকের বেশি কমে যেতে পারে।
উত্তরাঞ্চলের কৃষিজীবী ও স্থানীয়রা দিনদিন বাড়তে থাকা গরম, কম বৃষ্টি ও পানির সংকটের সঙ্গে লড়াই করে চলেছেন। তবে কার্যকর পানি ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা না হলে তাদের দিন আরও কঠিন হয়ে উঠবে।