ঢাকা ০৫:৫২ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

ট্রাম্পের কাছে গণতন্ত্রের চেয়ে বাণিজ্য গুরুত্বপূর্ণ, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক হবে বাণিজ্যকেন্দ্রিক

আফরোজা হোসেন, নিজস্ব প্রতিবেদক।
  • আপডেট সময় : ০৪:৫৭:৪৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ৫ বার পড়া হয়েছে
আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

​যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ মাইকেল কুগেলম্যানের মতে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের চেয়ে বাণিজ্যই প্রাধান্য পাবে। তাঁর মতে, বাইডেন প্রশাসনের সময় বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক যতটা মানবাধিকার ও গণতন্ত্রকেন্দ্রিক ছিল, ট্রাম্পের অধীনে তা মূলত বাণিজ্য ও ব্যবসায়িক লেনদেনের ওপর নির্ভরশীল হবে।

​অনেকের ধারণা, গত জুলাইয়ে বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় ভূমিকা ছিল। তবে মাইকেল কুগেলম্যান এই ধারণাকে সম্পূর্ণ ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

​যুক্তরাষ্ট্রের এশিয়া প্যাসিফিক ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো কুগেলম্যান জানান, ট্রাম্প বিদেশি সাহায্য স্থগিত করার এবং ‘নেশন বিল্ডিং’ (জাতি গঠন) কার্যক্রম পছন্দ করেন না। তাই বাইডেন প্রশাসনের দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো ট্রাম্পের নীতির সঙ্গে খাপ খাবে না।

মানবাধিকার ও গণতন্ত্র এখন ইতিহাস

​বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের মতো বিষয়গুলো এখনও আছে কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে কুগেলম্যান বলেন, এগুলো এখন ‘ইতিহাস’ হয়ে গেছে। ট্রাম্প কেবল নিজের দেশের স্বার্থ দেখেন এবং তার কাছে লেনদেনভিত্তিক ও বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গিই প্রধান।

​কুগেলম্যান আরও বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের নজরে বাংলাদেশ খুব একটা নেই। এটি বাংলাদেশের জন্য ভালো হতে পারে। কারণ ভারতের মতো যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের নজরে আছে, তাদের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা তৈরি হয়েছে।

রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নির্বাচন

​এদিকে, রাজনীতিতে ডানপন্থার উত্থান নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উদ্বেগের জবাবে মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, গত এক বছরে ধর্মভিত্তিক ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলোর রাজনৈতিক পরিধি বেড়েছে। তিনি মনে করেন, যদি এই গোষ্ঠীগুলো সহিংস বা গণতন্ত্রবিরোধী কার্যকলাপে জড়ায়, তবে তা সমস্যার কারণ হতে পারে। সন্ত্রাসবাদকে তিনি সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং বলেন, বাংলাদেশ অতীতে এমন সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে।

​তিনি সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানি গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগে কয়েকজনের গ্রেফতারের ঘটনাকে গুরুত্ব সহকারে নজরদারির পরামর্শ দেন। তিনি আরও বলেন, প্রতিশোধের রাজনীতি এবং চরম মেরুকরণ বাংলাদেশের জন্য বড় ঝুঁকি। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হওয়ায় দেশে অস্থিতিশীলতার ঝুঁকি বেড়েছে। আগামী নির্বাচনে বিএনপির ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা বেশি থাকলেও, নির্বাচনের সময় সহিংসতার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও প্রত্যাশা

​এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় মাইকেল কুগেলম্যান একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর নতুন সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা অনেক বেশি। যদিও এই সরকারের অধীনে জনগণের অস্থিরতা কিছুটা বেড়েছে, তবে আগের চেয়ে তাদের স্বাধীনতাও বেড়েছে।

​তিনি বলেন, যথাসময়ে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া অত্যন্ত জরুরি, অন্যথায় নতুন করে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। গণঅভ্যুত্থানের পর অনেক কাজ শুরু হলেও, তা এখনও অসম্পূর্ণ। তাই নতুন সরকারের ওপর প্রচণ্ড চাপ ও প্রত্যাশা থাকবে।

​সবশেষে, কুগেলম্যান জানান, নতুন শুল্কনীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য কিনতে বাংলাদেশের ওপর চাপ বেড়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

ট্রাম্পের কাছে গণতন্ত্রের চেয়ে বাণিজ্য গুরুত্বপূর্ণ, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক হবে বাণিজ্যকেন্দ্রিক

আপডেট সময় : ০৪:৫৭:৪৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

​যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ মাইকেল কুগেলম্যানের মতে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের চেয়ে বাণিজ্যই প্রাধান্য পাবে। তাঁর মতে, বাইডেন প্রশাসনের সময় বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক যতটা মানবাধিকার ও গণতন্ত্রকেন্দ্রিক ছিল, ট্রাম্পের অধীনে তা মূলত বাণিজ্য ও ব্যবসায়িক লেনদেনের ওপর নির্ভরশীল হবে।

​অনেকের ধারণা, গত জুলাইয়ে বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় ভূমিকা ছিল। তবে মাইকেল কুগেলম্যান এই ধারণাকে সম্পূর্ণ ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

​যুক্তরাষ্ট্রের এশিয়া প্যাসিফিক ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো কুগেলম্যান জানান, ট্রাম্প বিদেশি সাহায্য স্থগিত করার এবং ‘নেশন বিল্ডিং’ (জাতি গঠন) কার্যক্রম পছন্দ করেন না। তাই বাইডেন প্রশাসনের দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো ট্রাম্পের নীতির সঙ্গে খাপ খাবে না।

মানবাধিকার ও গণতন্ত্র এখন ইতিহাস

​বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের মতো বিষয়গুলো এখনও আছে কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে কুগেলম্যান বলেন, এগুলো এখন ‘ইতিহাস’ হয়ে গেছে। ট্রাম্প কেবল নিজের দেশের স্বার্থ দেখেন এবং তার কাছে লেনদেনভিত্তিক ও বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গিই প্রধান।

​কুগেলম্যান আরও বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের নজরে বাংলাদেশ খুব একটা নেই। এটি বাংলাদেশের জন্য ভালো হতে পারে। কারণ ভারতের মতো যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের নজরে আছে, তাদের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা তৈরি হয়েছে।

রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নির্বাচন

​এদিকে, রাজনীতিতে ডানপন্থার উত্থান নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উদ্বেগের জবাবে মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, গত এক বছরে ধর্মভিত্তিক ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলোর রাজনৈতিক পরিধি বেড়েছে। তিনি মনে করেন, যদি এই গোষ্ঠীগুলো সহিংস বা গণতন্ত্রবিরোধী কার্যকলাপে জড়ায়, তবে তা সমস্যার কারণ হতে পারে। সন্ত্রাসবাদকে তিনি সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং বলেন, বাংলাদেশ অতীতে এমন সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে।

​তিনি সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানি গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগে কয়েকজনের গ্রেফতারের ঘটনাকে গুরুত্ব সহকারে নজরদারির পরামর্শ দেন। তিনি আরও বলেন, প্রতিশোধের রাজনীতি এবং চরম মেরুকরণ বাংলাদেশের জন্য বড় ঝুঁকি। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হওয়ায় দেশে অস্থিতিশীলতার ঝুঁকি বেড়েছে। আগামী নির্বাচনে বিএনপির ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা বেশি থাকলেও, নির্বাচনের সময় সহিংসতার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও প্রত্যাশা

​এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় মাইকেল কুগেলম্যান একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর নতুন সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা অনেক বেশি। যদিও এই সরকারের অধীনে জনগণের অস্থিরতা কিছুটা বেড়েছে, তবে আগের চেয়ে তাদের স্বাধীনতাও বেড়েছে।

​তিনি বলেন, যথাসময়ে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া অত্যন্ত জরুরি, অন্যথায় নতুন করে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। গণঅভ্যুত্থানের পর অনেক কাজ শুরু হলেও, তা এখনও অসম্পূর্ণ। তাই নতুন সরকারের ওপর প্রচণ্ড চাপ ও প্রত্যাশা থাকবে।

​সবশেষে, কুগেলম্যান জানান, নতুন শুল্কনীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য কিনতে বাংলাদেশের ওপর চাপ বেড়েছে।