প্রাথমিক শিক্ষায় ঝরে পড়ার উল্টো প্রবণতা, বাড়াতে হবে শিক্ষাখাতে বিনিয়োগ

- আপডেট সময় : ১১:১৭:৪৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ৪ বার পড়া হয়েছে
চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের পর থেকে শিক্ষায় সংস্কার ছিল জন–আকাঙ্ক্ষার অন্যতম দাবি। তবে বাস্তবে এ খাতে কাঙ্ক্ষিত কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বরং চলতি অর্থবছরের বাজেটে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা খাতে বরাদ্দ কমানো হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই জিডিপির মাত্র ২ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ আছে শিক্ষা খাতের বরাদ্দ, যেখানে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে অন্তত ৫–৬ শতাংশ বরাদ্দ প্রয়োজন।
প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা—শিক্ষার প্রতিটি স্তরে শিক্ষার্থীর ঝরে পড়া বাড়ছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ২০২৪ সালের বার্ষিক বিদ্যালয় শুমারির (এপিএসসি) তথ্যমতে, দেশে এক বছরের ব্যবধানে প্রায় চার হাজার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং দুই লাখ শিক্ষার্থী বেড়েছে। করোনা–পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে ফিরলেও সরকারি বিদ্যালয়ের সংখ্যা না বাড়া উদ্বেগজনক। এতে প্রান্তিক ও দরিদ্র পরিবারের শিশুরা পড়াশোনা থেকে বঞ্চিত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ছে।
সবচেয়ে চিন্তার বিষয় হলো, ২০২৩ সালে প্রাথমিক শিক্ষায় ঝরে পড়ার হার ছিল ১৩ দশমিক ১৫ শতাংশ, যা ২০২৪ সালে বেড়ে ১৬ দশমিক ২৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে ছেলেদের ঝরে পড়া বেড়ে এক বছরে ১৪ শতাংশ থেকে ১৯ শতাংশে পৌঁছেছে। দারিদ্র্যপীড়িত ময়মনসিংহ, রংপুর ও সিলেট বিভাগে এই হার সবচেয়ে বেশি। শিশুদের একটি অংশ হয়তো বাধ্য হয়ে শিশুশ্রমে যুক্ত হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংক ইতিমধ্যে সতর্ক করেছে, চলতি বছরে আরও ৩০ লাখ মানুষ নতুন করে অতিদরিদ্র হতে পারে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিপিআরসির এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশে দারিদ্র্যের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ৯৩ শতাংশে। দরিদ্র জনগোষ্ঠী বৃদ্ধির এই প্রবণতা সরাসরি শিক্ষায় প্রভাব ফেলছে।
এ ছাড়া সরকারি বিদ্যালয়ে শিক্ষকসংকটও শিশুদের বিদ্যালয়বিমুখ করছে। অবসরে যাওয়া শিক্ষকদের জায়গায় নতুন নিয়োগ না হওয়ায় পরিস্থিতি আরও নাজুক হচ্ছে।
প্রাথমিক শিক্ষায় ঝরে পড়ার এই উল্টোযাত্রা দেশের উন্নয়ন লক্ষ্যের জন্য অশনিসংকেত। দারিদ্র্য–শিক্ষা ঝরে পড়া–শিশুশ্রমের দুষ্টচক্র ভাঙতে হলে অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করা এবং শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানো ছাড়া বিকল্প নেই।