ঢাকা ০৪:০৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
গাজীপুরের চান্দনা কাঁচাবাজারে আগুন, ৩০–৩৫টি দোকান পুড়ে ছাই খরা, পানিসংকট ও অবহেলায় হুমকিতে উত্তরাঞ্চলের খাদ্যনিরাপত্তা নাফ নদী পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় ৪১ রোহিঙ্গা। চাকসুর ভোটার তালিকায় আপত্তি জানানোর মেয়াদ বাড়ল ঝিনাইদহে ব্যবসায়ীর অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার, দেয়ালে লেখা হত্যার কারণ। প্রকাশ্যে এসে ডাকসুর নির্বাচনী লড়াইয়ে ছাত্রশিবির রাজউকের প্লট জালিয়াতি: শেখ হাসিনা, রেহানা ও টিউলিপের বিরুদ্ধে তৃতীয় দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ আজ যাত্রীবেশে অটোরিকশা চালককে পরিকল্পিতভাবে হত্যা, পালালো দুর্বৃত্তরা প্রায় ৪৮ হাজার শ্রমিকের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা প্রত্যাহার পশ্চিম তীর ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত করলে চরম সীমা লঙ্ঘন হবে: আরব আমিরাতের হুঁশিয়ারি

মার্কিন প্রেসিডেন্টরা কেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধানদের এত পছন্দ করেন?

নিজস্ব প্রতিবেদক।
  • আপডেট সময় : ০৫:৩০:৪৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ৪ বার পড়া হয়েছে
আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

​মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি পাকিস্তানের ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন এবং তাঁকে হোয়াইট হাউসে মধ্যাহ্নভোজে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। পাকিস্তানি সাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক মোহাম্মদ হানিফ-এর লেখা একটি নিবন্ধে এই সম্পর্ক এবং এর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: আইয়ুব খান থেকে মোশাররফ

​মার্কিন প্রেসিডেন্টদের সঙ্গে পাকিস্তানের শক্তিশালী সামরিক প্রধানদের সুসম্পর্কের ইতিহাস বহু পুরোনো। ১৯৫৯ সালে পাকিস্তানের সামরিক শাসক ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসনের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ব্যবহার করে ক্ষমতা ধরে রেখেছিলেন। তৎকালীন যুক্তরাষ্ট্র এই সম্পর্ক থেকে ভূ-কৌশলগত সুবিধা নিত, যেমন পাকিস্তানের ভূখণ্ড ব্যবহার করে সোভিয়েত ইউনিয়নের ওপর নজরদারি। আইয়ুব খানের লেখা বইটির নাম ছিল ‘Friends, Not Masters’ (প্রভু নয়, বন্ধু), যা তাদের সম্পর্কের জটিলতা প্রকাশ করে।

​একইভাবে, ১৯৮০-এর দশকে জেনারেল জিয়াউল হক আফগানিস্তানে সোভিয়েত বিরোধী যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে সহযোগিতা করে তাদের সমর্থন লাভ করেন। পরবর্তীতে, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পর জেনারেল পারভেজ মোশাররফ-এর সঙ্গে জর্জ বুশ প্রশাসনের সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে হামলা চালানোর জন্য পাকিস্তানের সামরিক ঘাঁটির সহযোগিতা চেয়েছিল।

বর্তমান প্রেক্ষাপট: ট্রাম্প ও আসিম মুনির

​প্রাবন্ধিক হানিফ মনে করেন, পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীই সবকিছুর নিয়ন্ত্রক। ইমরান খানকে কারাগারে পাঠানোর পর থেকে সেনাবাহিনী রাজনৈতিক দল, আদালত এবং নির্বাচনকে প্রভাবিত করছে। তাই ট্রাম্প সরাসরি ক্ষমতাধর ব্যক্তি, অর্থাৎ সেনাপ্রধানের সঙ্গেই সম্পর্ক স্থাপন করেছেন।

​গত বছর পাকিস্তান সেনাবাহিনী একজন আফগান নাগরিককে গ্রেপ্তার করে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেয়, যিনি কাবুলে হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন বলে অভিযোগ ছিল। এর ফলে ট্রাম্প তাঁর প্রথম ‘স্টেট অব দ্য নেশন’ ভাষণে পাকিস্তানকে ধন্যবাদ জানান।

অভ্যন্তরীণ জনপ্রিয়তা ও জনমত

​যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক সত্ত্বেও পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সেনাবাহিনীর জনপ্রিয়তা তলানিতে। সাধারণ মানুষ এই সম্পর্ককে ভালোভাবে দেখছে না। তারা মনে করে, এটি নিজেদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য একটি কৌশল মাত্র। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে জনগণ জানে, এই ধরনের সম্পর্কের পরিণতি ভালো হয় না।

​২০০১ সাল থেকে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে’ অংশগ্রহণের কারণে পাকিস্তানে ৭০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে এবং অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়েছে। এই কারণে জনগণের মধ্যে মার্কিন ক্ষমতার বিরুদ্ধে ক্ষোভ আছে, যা কখনো কখনো প্রকাশ্যে চলে আসে। প্রাবন্ধিক মনে করেন, এই সম্পর্ক হলো এক ধরনের ‘প্রভু-বন্ধু’র সম্পর্ক, যেখানে পাকিস্তান কেবল যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত স্বার্থ পূরণের জন্য ব্যবহৃত হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

মার্কিন প্রেসিডেন্টরা কেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধানদের এত পছন্দ করেন?

আপডেট সময় : ০৫:৩০:৪৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

​মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি পাকিস্তানের ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন এবং তাঁকে হোয়াইট হাউসে মধ্যাহ্নভোজে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। পাকিস্তানি সাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক মোহাম্মদ হানিফ-এর লেখা একটি নিবন্ধে এই সম্পর্ক এবং এর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: আইয়ুব খান থেকে মোশাররফ

​মার্কিন প্রেসিডেন্টদের সঙ্গে পাকিস্তানের শক্তিশালী সামরিক প্রধানদের সুসম্পর্কের ইতিহাস বহু পুরোনো। ১৯৫৯ সালে পাকিস্তানের সামরিক শাসক ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসনের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ব্যবহার করে ক্ষমতা ধরে রেখেছিলেন। তৎকালীন যুক্তরাষ্ট্র এই সম্পর্ক থেকে ভূ-কৌশলগত সুবিধা নিত, যেমন পাকিস্তানের ভূখণ্ড ব্যবহার করে সোভিয়েত ইউনিয়নের ওপর নজরদারি। আইয়ুব খানের লেখা বইটির নাম ছিল ‘Friends, Not Masters’ (প্রভু নয়, বন্ধু), যা তাদের সম্পর্কের জটিলতা প্রকাশ করে।

​একইভাবে, ১৯৮০-এর দশকে জেনারেল জিয়াউল হক আফগানিস্তানে সোভিয়েত বিরোধী যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে সহযোগিতা করে তাদের সমর্থন লাভ করেন। পরবর্তীতে, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পর জেনারেল পারভেজ মোশাররফ-এর সঙ্গে জর্জ বুশ প্রশাসনের সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে হামলা চালানোর জন্য পাকিস্তানের সামরিক ঘাঁটির সহযোগিতা চেয়েছিল।

বর্তমান প্রেক্ষাপট: ট্রাম্প ও আসিম মুনির

​প্রাবন্ধিক হানিফ মনে করেন, পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীই সবকিছুর নিয়ন্ত্রক। ইমরান খানকে কারাগারে পাঠানোর পর থেকে সেনাবাহিনী রাজনৈতিক দল, আদালত এবং নির্বাচনকে প্রভাবিত করছে। তাই ট্রাম্প সরাসরি ক্ষমতাধর ব্যক্তি, অর্থাৎ সেনাপ্রধানের সঙ্গেই সম্পর্ক স্থাপন করেছেন।

​গত বছর পাকিস্তান সেনাবাহিনী একজন আফগান নাগরিককে গ্রেপ্তার করে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেয়, যিনি কাবুলে হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন বলে অভিযোগ ছিল। এর ফলে ট্রাম্প তাঁর প্রথম ‘স্টেট অব দ্য নেশন’ ভাষণে পাকিস্তানকে ধন্যবাদ জানান।

অভ্যন্তরীণ জনপ্রিয়তা ও জনমত

​যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক সত্ত্বেও পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সেনাবাহিনীর জনপ্রিয়তা তলানিতে। সাধারণ মানুষ এই সম্পর্ককে ভালোভাবে দেখছে না। তারা মনে করে, এটি নিজেদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য একটি কৌশল মাত্র। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে জনগণ জানে, এই ধরনের সম্পর্কের পরিণতি ভালো হয় না।

​২০০১ সাল থেকে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে’ অংশগ্রহণের কারণে পাকিস্তানে ৭০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে এবং অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়েছে। এই কারণে জনগণের মধ্যে মার্কিন ক্ষমতার বিরুদ্ধে ক্ষোভ আছে, যা কখনো কখনো প্রকাশ্যে চলে আসে। প্রাবন্ধিক মনে করেন, এই সম্পর্ক হলো এক ধরনের ‘প্রভু-বন্ধু’র সম্পর্ক, যেখানে পাকিস্তান কেবল যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত স্বার্থ পূরণের জন্য ব্যবহৃত হয়।