যমুনা অয়েলে জ্বালানি তেল পরিবহনে অভিনব জালিয়াতি: অতিরিক্ত তেল পাচার!

- আপডেট সময় : ০৫:২৪:৪০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩১ অগাস্ট ২০২৫ ১১ বার পড়া হয়েছে
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জ্বালানি তেল বিপণন সংস্থা যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডে সম্প্রতি তেল পাচার করতে এক নতুন ধরনের জালিয়াতির ঘটনা সামনে এসেছে। একটি ট্যাংকলরির প্রকৃত ধারণক্ষমতা গোপন করে চুক্তি করা হয়। ট্যাংকলরিটির সক্ষমতা সাড়ে ১৩ হাজার লিটার হলেও চুক্তিতে দেখানো হয় মাত্র ৯ হাজার লিটার।
যমুনা অয়েলের কয়েকজন কর্মকর্তার ভাষ্যমতে, সাড়ে ৪ হাজার লিটার বাড়তি ধারণক্ষমতা গোপন করে চুক্তি করার মূল উদ্দেশ্য ছিল লরিতে অতিরিক্ত তেল ভরে ডিপো থেকে বাইরে পাচার করা। এই জালিয়াতির সঙ্গে যমুনা অয়েলের কিছু কর্মকর্তা এবং ট্যাংকলরির মালিক জড়িত থাকতে পারেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সূত্র জানায়, খুলনার দৌলতপুর ডিপো থেকে তেল পরিবহনের জন্য মেসার্স আছিয়া এন্টারপ্রাইজের একটি ট্যাংকলরির সঙ্গে গত ২৭ জুলাই চুক্তি হয়। পরে এই লরিটি বাগেরহাটের রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে ডিজেল নিয়ে গেলে সেখানকার কর্মকর্তারা গাড়ির ধারণক্ষমতায় অসামঞ্জস্য দেখতে পান এবং তেল নিতে অস্বীকৃতি জানান।
এ ঘটনার পর পদ্মা-মেঘনা-যমুনা ট্যাংকলরি শ্রমিক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম বলেন, সাড়ে ১৩ হাজার লিটারের একটি লরিকে জালিয়াতির মাধ্যমে ৯ হাজার লিটার দেখানো হয়েছে, যা সম্পূর্ণ নিয়মবহির্ভূত। এ কারণে শ্রমিক ও মালিকরা এই চুক্তির বিরুদ্ধে আপত্তি জানিয়েছেন।
সড়কপথে তেল পরিবহনের জন্য ট্যাংকলরি ভাড়া নেওয়ার আগে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) থেকে এর ধারণক্ষমতার সনদ নিতে হয়। যমুনায় জমা দেওয়া আছিয়া এন্টারপ্রাইজের ট্যাংকলরির (নম্বর: ঢাকা মেট্রো-ঢ-৪২-০০১২) নথিতে বিএসটিআই কর্তৃক প্রদত্ত একটি সনদ দেখানো হয়, যেখানে লরিটির ধারণক্ষমতা ৯ হাজার লিটার উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, এই সনদটি আসলে নকল। বিএসটিআই-এর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সনদে স্বাক্ষরকারী ব্যক্তি জানুয়ারিতেই বদলি হয়ে গেছেন। সনদের কিউআর কোড স্ক্যান করলে অন্য একটি গাড়ির তথ্য পাওয়া যায়।
আছিয়া এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. মানিক শেখ বলেন, ভুলবশত তিনি কম ধারণক্ষমতার লরির পরিবর্তে বেশি ধারণক্ষমতার লরি দিয়ে চুক্তি করেছিলেন এবং অতিরিক্ত তেল পাচারের উদ্দেশ্যে এমনটি করা হয়নি। এই অভিযোগ ওঠার পর তিনি চুক্তিটি বাতিল করেছেন।
যমুনা অয়েল কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুস্তফা কুদরত-ই ইলাহী বলেন, লরির প্রকৃত ধারণক্ষমতা এবং সনদে উল্লিখিত ধারণক্ষমতার মধ্যে গরমিলের কারণে চুক্তিটি বাতিল করা হয়েছে। কীভাবে এই চুক্তি হলো, তা তদন্ত করে দেখা হবে।
যমুনা অয়েলের কিছু কর্মকর্তা আরও জানান, জ্বালানি তেল চুরি নতুন কোনো ঘটনা নয়। এই বাড়তি তেলকে পরে ‘কারিগরি ক্ষতি’ হিসেবে দেখানো হয়। ট্যাংকলরির সাড়ে ৪ হাজার লিটার বাড়তি সক্ষমতা গোপনের ঘটনা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, এই জালিয়াতির পেছনে তেল চুরির উদ্দেশ্যই ছিল।